somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

থরে থরে ক্রিমজন কৃষ্ণচূড়া সে বসন্তেও ফুটে ছিল।

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


থরে থরে ক্রিমজন কৃষ্ণচূড়া সে বসন্তেও ফুটে ছিল। রক্তাক্ত দোসরা ফাগুনের স্মৃতিচারণ করি। ১৯৮৩ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি, নোনতা রক্তে স্নাত হয় রাজপথ। অতিতের পাতা খুলে ধরা যাক।

১৯৮২ তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লেফটেন্যান্ট জেনারাল এইচ এম এরশাদের শাসন কালে, তার শিক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ মজিদ খান এক শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেন। সাম্প্রদায়িক শিক্ষা ব্যবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ জনগণের স্পর্শ কাতর অনুভূতির স্থান ধর্মকে পূঁজি করে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ শুরু করেন।

রিপোর্টে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষার্থীকেই অর্ধ শতাংশ ব্যয় ভার বহন করতে হবে। যদি তাদের বার্ষিক ফলাফল খারাপ হয়, তবুও সেই শর্তে তারা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাবে। এক কথায় টাকার বিনিময়ে ডিগ্রি ক্রয়। শিক্ষা একেবারে পরিণত হতে যাচ্ছিলো পণ্যে। সাথে তাদের নীতিতে বাংলা ও ইংরেজির সাথে আরবিকেও বাধ্যতা মূলক করা হয়। যা একেতো মাতৃভাষাকে উপেক্ষা, উপরন্তু ধর্মের সেন্টিমেন্ট কে ব্যবহার করে নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্যকে কায়েম করা। সাম্প্রদায়িক শক্তির কবলে শেষ হতে যাচ্ছিলো বাংলা। শিক্ষার অধিকার ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছিলো দরিদ্র শিক্ষার্থীদের থেকে।

তবে প্রতিবাদ প্রতিধ্বনিতে রাজপথ প্রকম্পিত করতে ছাড়েনি প্রগতিশীল ছাত্র জনতা। প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা ১৯৮২ সালের ২১ নভেম্বর মোট ১১টি ছাত্র সংগঠন মিলে প্রকাশিত শিক্ষানীতি বাতিলের উদ্দেশ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে বসে গঠন করে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। প্রত্যেক দল থেকে ১০ জন করে মোট ১১০ জনকে নিয়ে এই পরিষদ গঠিত হয়।

সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে জনমত গঠন এবং আন্দোলনকে তরান্বিত করতে সবাই নেমে পড়ে মজিদ খানের শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিতে। আন্দোলন যখন ক্রমেই জনতার মাঝে সারা ফেলেছিল, তখন আন্দোলনকে সর্বোপরি ছাত্র জনতাকে অবদমিত করতে বসে থাকেনি তৎকালীন স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট এরশাদ। গ্রেফতার করা হয় তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ ফারুককে।

ফলে ছাত্র জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। ১৯৮৩ সালের ২৭ ও ২৮ শে জানুয়ারি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ডাকে সারাদেশের ছাত্র জনতা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ছাত্র ধর্মঘট পালন করে। আর তা দেখে স্বৈরাচার শাসকগণ ভিত সম্ভ্রস্ত হয়ে পড়েন। তারা এই আন্দোলনকে দমন করার জন্য এর পরে উঠে পড়ে লাগে।

রক্তঝরা দোসরা ফাগুন বা ১৪ ফেব্রুয়ারি মজিদ খানের শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিতে ছাত্র সমাজ ছাত্র জমায়েতের ডাক দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে থেকে মিছিলে দলে দলে শিক্ষার্থীরা যোগ দিয়ে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অকুতোভয়ের মতে এগিয়ে চলছিল। স্লোগানে স্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত হচ্ছিলো। ঢাকার হাইকোর্ট অবধি না যেতেই (বর্তমান শিক্ষা চত্বর) দেখে পুলিশের ব্যারিকেড। ব্যারিকেড বাধা অতিক্রম করার পূর্বেই অগত্যা রায়ট ভ্যান দিয়ে ছাত্র জনতার উপর গরম জল নিক্ষেপ করা হয়। টার্গেট করে চলে গুলি বর্ষণ। চলে বেধড়ক লাঠিচার্জ ও নির্মম ভাবে বুটের আঘাত। স্পট ডেথ হয় অনেকেই। অনেকের লাশ গুম করে ফেলা। যাদের নাম জানা যায়, তারা হচ্ছে জাফর, জয়নাল, কাঞ্চন, আইয়ুব, মোজাম্মেল, দিপালী।

রাইফেলের বুলেটের থেকে বাঁচার জন্য কেউ প্রাণপণে পালানোর চেষ্টা করে। কেউ কেউ কার্জন হলের মধ্যে লুকিয়ে পড়ে। কেউ আবার সহপাঠীদের লাশ অবধি খুঁজে পায়নি। তখনো বিরতিহীন ভাবে বেজে যাচ্ছিলো রাইফেলের খইফোটার প্রতিধ্বনি।

অন্য দিকে যখন বসন্ত দুপুরে সূর্য হেলে পড়েছে, তখন ছাত্র জনতা ফের তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাড়ি সামনে জড় হতে থাকে। তখন রাইফেল তাক করে খোলা জিপ ঢুকে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে। ফের বেধড়ক পেটানো হয় শিক্ষার্থীদের। ক্ষতবিক্ষত দেহে কেউ আবার যায় ঢামেকে।

এভাবেই শুরু হয় স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সূত্রপাত। ঘটনার পরিক্রমায় ১৯৯০’র গণঅভ্যুত্থান এবং স্বৈরাচারী এরশাদের পতন নিশ্চিত হয়। আর এমন তাৎপর্যপূর্ণ দিনকে ঘিরে আমরা এখন ভালবাসা দিবস পালন করি বটে, তবে শহিদদের জন্য একবিন্দুও নয়। রক্তঝরা ফাগুনের এই দিনটাকে নবপ্রজন্ম কতটুকু মনে রেখেছে? আমরা দোসরা ফাগুন আর ১৪ই ফেব্রুয়ারির তাৎপর্য বলে বুঝে থাকি শুধু ভ্যালেন্টাইন ডে নামে।

রক্তঝরা রক্তিমা ফাগুনের নতুন ভাবে আবির্ভাব ঘটুক। সব স্বৈরতন্ত্রের অবসান ঘটুক। গনতন্ত্র মুক্তি পাক।
বাক স্বাধীনতা মুক্তি পাক,
মুক্তবাক বাক মুক্ত থাক।

রক্তঝরা ফাগুনের শুভেচ্ছা সাথে লাল সালাম স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সব শহিদের প্রতি।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:১৭
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×