বিদ্রোহী কবি কাজি নজরুল ইসলাম একবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন একটি সেমিনারে এসেছিলেন অতিথি হিসেবে। সেখানে মঞ্চে বসেই তিনি দুটো গান লিখেন ও সুর করেন। তার এই প্রতিভার প্রতি মুগ্ধ হয়ে এক তরুণী নিজের গলার স্বর্ণালঙ্কার খুলে তাকে উপহার করে। সাথে প্রেম নিবেদনও করে। নজরুল ইসলামও তার প্রস্তাব গ্রহণ করে। সেই থেকে তার ঢাকা আসা যাওয়া শুরু হয়। তার প্রেমও জমে ওঠে।
কিন্তু একটা সময় তার প্রণয়ী বুঝতে সক্ষম হয়, লেখা দিয়ে বিদ্রোহের আগুন জ্বেলে দেয়া যায় বটে, পেটের ক্ষুধার অনল নেভানো যায় না। তিনি নজরুলের চাইতে অধিক বিত্তশালী কাউকে বিয়ে করে নেয়। নজরুল এই ধাক্কার পরে ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে পুরো নারী সমাজকে বিচার করে বসে। অবশ্যই তা ক্ষোভ থেকে। তার ক্ষোভের প্রকাশ ঘটে 'পূজারিণী' কবিতায়। সে একটা জায়গায় লিখে,
"নারী নাহি হ’তে চায় শুধু একা কারো,
এরা দেবী, এরা লোভী, যত পূজা পায় এরা চায় তত আরো!
ইহাদের অতিলোভী মন
একজনে তৃপ্ত নয়, এক পেয়ে সুখী নয়,
যাচে বহু জন।"
পূজারিণী কবিতা প্রকাশের পরে ভারত বর্ষের প্রগতিশীল লোকেরা প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে শ্লোগান তোলে রাজপথে, "নারী বিদ্বেষী নজরুলের ফাঁসি চাই।" মোটা মোটি পশ্চিম বঙ্গের প্রগতিশীল জনতা রাজপথ কাঁপিয়ে ছেড়ে ছিল। নজরুলও নিজের ভুল বুঝতে পারে। সে অনেক ভাবার পরে এই সিদ্ধান্তেই উপনীত হয় যে, সে ব্যক্তিকেন্দ্রিক বিচার করেছে। তাই পরে তিনি নারী কবিতাটিতে লেখে,
"বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।"
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৬