somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিমালয় কন্যা “পঞ্চগড়” (পর্যটনের এক নতুন দিগন্ত)

২২ শে জুন, ২০১৬ রাত ১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অপরূপ বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত বলে এই জেলাকে বলা হয় ‘হিমালয় কন্যা’। পাঁচটি গড়ের সমন্বয়ে গঠিত এই জেলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি দ্বারা বেষ্টিত। হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত এই নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল বর্তমান সময়ে পর্যটনের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। বিগত কয়েক দশকে চা উৎপাদনে বিশেষ করে অর্গানিক চা উৎপাদনের লক্ষ্যে চা বাগান তৈরি করার পর থেকে উত্তর বঙ্গের এক অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

ভৌগলিক পরিচিতি
২৬-২০ উত্তর অক্ষাংশে এবং ৮৮.৩৪ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত পঞ্চগড় জেলার ভৌগলিক অবস্থান তাৎপর্যপূর্ণ । ১৯৪৭ সালে স্যার সিরিল র্যাডক্লিফ কর্তৃক নির্দেশিত এই জেলার সীমান্ত রেখা অত্যন্ত আঁকাবাঁকা ও ভংগুর। পঞ্চগড় জেলার তিন দিকেই ভারতীয় সীমান্ত। পঞ্চগড় জেলার সাথে ভারতীয় সীমান্ত এলাকার দৈর্ঘ্য ২৮৬.৮৭ কিলোমিটার। এ জেলার উত্তরে ভারতের দার্জিলিং ও জলপাইগুঁড়ি জেলা, উত্তর পূর্ব ও পূর্বে জলপাইগুঁড়ি ও কুচবিহার জেলা এবং বাংলাদেশের নীলফামারী জেলা, পশ্চিমে ভারতে পুর্নিয়া ও উত্তর দিনাজপুর এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্বে ঠাকারগাঁও ও দিনাজপুর জেলা অবস্থিত।

জেলার পটভূমি
বহু আর্বতন ও বিবর্তনের মধ্যদিয়ে পঞ্চগড় জেলার অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে এবং এখনো তা অব্যাহত রয়েছে। পঞ্চগড় নামকরনেও রয়েছে এক ঐতিহ্যপূর্ণ ইতিহাস। পঞ্চগড় নামকরণ সমন্ধে কেহ কেহ মনে করেন যে, এ অঞ্চলটি অতি প্রাচীনকালে ‘পুন্ডুনগর রাজ্যের অর্ন্তগত ‘পঞ্চনগরী’ নামে একটি অঞ্চল ছিল। কালক্রমে পঞ্চনগরী ‘পঞ্চগড়’নামে আত্মপ্রকাশ করে। ‘পঞ্চ’(পাঁচ) গড়ের সমাহার ‘পঞ্চগড়’নামটির অপভ্রাংশ ‘পঞ্চগড়’ দীর্ঘকাল এই জনপদে প্রচলিত ছিল। কিন্তু এই অঞ্চলের নাম যে, পঞ্চগড়ই ছিল সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ থাকতে পারে না। বস্ত্ততঃ ভারতীয় উপমহাদেশে ‘পঞ্চ’ শব্দটি বিভিন্ন স্থানের নামের সাথে যুক্ত হয়েছে। যেমন- পঞ্চনদ, পঞ্চবটি, পঞ্চনগরী পঞ্চগৌড় ইত্যাদি। সুতরাং পঞ্চগৌড়ের একটি অংশ হিসেবে প্রাকৃত ভাষার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পঞ্চগড়ের নামকরনের সম্ভাবনা থকে যায়। অর্থ্যাৎ পঞ্চগৌড় > পঞ্চগোড়>পঞ্চগড়। অবশ্য বহুল প্রচলিত মত এই যে, এই অঞ্চলের পাঁচটি গড়ের সুস্পষ্ট অবস্থানের কারণেই পঞ্চগড় নামটির উৎপত্তি। গড়গুলো হচ্ছে, ভিতরগড়, মীরগড়, হোসেনগড়, রাজনগড় ও দেবেনগড়।
ষোড়শ শতকে কুচবিহার রাজ্য গঠিত হওয়ার পর থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত পঞ্চগড় অঞ্চল মূলত কোচ রাজন্যবর্গের দ্বারাই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শাসিত হয়েছে।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর পঞ্চগড় থানাটি দিনাজপুর জেলার ঠাকুরগাঁও মহকুমার অর্ন্তভূক্ত হয়। ১৯৮০ সালে ১লা জানুয়ারী ঠাকুরগাঁও মহকুমার ৫টি থানা তেতুলিয়া, পঞ্চগড় সদর, আটোয়ারী, বোদা ও দেবীগঞ্জ নিয়ে পঞ্চগড় মহকুমা সৃষ্টি হয়। মহকুমার সদর দপ্তর পঞ্চগড় থানায় স্থাপিত হয়।

পঞ্চগড় জেলার সৃষ্টি
১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারী তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড় সদর, আটোয়ারী, বোদা ও দেবীগঞ্জ- এ ৫টি উপজেলা নিয়ে পঞ্চগড় জেলার সৃষ্টি হয়। এ জেলার আয়তন ১,৪০৪.৬২ বর্গ কিঃমিঃ। এ জেলার তিনদিকেই সীমান্ত। এ সীমান্ত অঞ্চল ১৮০ কিলোমিটার বিসত্মৃত। ১৯৪৭ সালের পুর্ব পর্যন্ত ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার অন্তর্গত এবং বর্তমান পুর্নিয়া, পশ্চিম দিনাজপুর, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও কুচবিহার জেলা পরিবেষ্টিত পঞ্চগড় জেলা। বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়।
পর্যটনের নতুন দিগন্ত এই জেলায় রয়েছে অনেক দর্শনীয় স্থান। সেই সব স্থান সৌন্দর্য পিপাসু মানুষদের পিপাসা মিটিয়ে আসছে অনেক দিন ধরেই।
পঞ্চগড় জনপদে মানব বসতি শুরু হয়েছে সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকে। বাংলাদেশের এই প্রান্ত অঞ্চলে দীর্ঘকাল ব্যাপ্ত পুন্ড্র, গুপ্ত, পাল, সেন ও মুসলিম শাসকগণের সংস্পর্শে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য প্রত্ন নিদর্শন। এ সবের মধ্যেই রয়েগেছে অতীতের বহু গৌরব-গাঁথা বহু দীর্ঘশ্বাস ও প্রাচীন ইতিহাস ঐতিহ্যের অগনিত স্মৃতি চিহ্ন। একটি শহরকে পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যে উপাদান প্রয়োজন তার সবই বিদ্যমান রয়েছে পঞ্চগড় জেলায়। পঞ্চগড় জেলার আইন শৃংখলা পরিস্থিতি বাংলাদেশের যে কোন জেলার চেয়ে ভাল। পঞ্চগড়ের মানুষজন অতি সহজ সরল এবং অতিথি পরায়ন। পঞ্চগড় থেকে হেমন্ত ও শীতকালে পর্যক্ষেণ করা যায় কাঞ্চনজংঘার অপরূপ দৃশ্য যা পর্যটকদের অতি সহজে আকৃষ্ট করে। পঞ্চগড়ে রয়েছে সমতল ভূমিতে চা বাগানের আনন্দ সৌন্দর্য্য। রয়েছে বাংলাদেশের একমাত্র রকস মিউজিয়াম। রয়েছে মহানন্দা নদীর তীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক ডাকবাংলো যেখান থেকে দুই বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

পঞ্চগড়ে উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানগুলো নিম্নরূপঃ



ভিতরগড়




মহারাজার দিঘী



মির্জাপুর শাহী মসজিদ



বার আউলিয়া মাজার




গোলকধাম মন্দির



বাংলাবান্ধা জিরো (০) পয়েন্ট ও বাংলাবান্ধা স্থল বন্দর




রকস্ মিউজিয়াম।





ভিতরগড় দুর্গনগরী



উপজেলা সদর দপ্তর হতে প্রায় ১৫ (পনের) কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত ভিতরগড় দুর্গনগরী প্রাচীন যুগের একটি বিরাত কীর্তি। প্রায় ১২ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে এই বিশাল গড় ও নগরীর অবস্থান। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর বর্তমান এ দুর্গনগরীর কিছু অংশ ভারতের মধ্যে পড়েছে। ঐতিহাসিকদের মতে ভিতরগড় পূর্ণ নির্মাণ করেন প্রাচীন কামরুনের শুদ্রবংশীয় রাজা দেবেশরের বংশজাত পৃথু রাজা। সম্রাট হর্ষবর্ধনের সময় পৃথু রাজার অভ্যূলয় ঘটে। তিনি কামরুপে পরাজিত হয়ে ভিতরগড় এলাকায় গমন করেন এবং নির্মাণ করেন এই গড়। ভিতরগড় দুর্গে একটি বড় দিঘী (মহারাজার দীঘি) ও কয়েকটি ছোট ছোট দীঘি আছে এবং এর ভিতরে মন্দির, প্রসাদ ও ইমারতের এবং সাবশেসে এবং বাইরে পরিখা ও মানীর প্রাচীর এখনো দেখা যায়।

এছাড়াও পাথরের জন্য বিখ্যাত পঞ্চগড়ে আসলেই দেখা মিলবে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখা অগণিত শ্রমিকের পাথার উত্তোলনের দৃশ্য। শীতের সকালে কাঞ্চঞ্জজ্ঞা পাহাড়ের মোহনীয় দৃশ্য।











যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ

রাজধানী ঢাকা থেকে সরাসরি পঞ্চগড় আসার একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম সড়ক পথ। রেলপথে আসতে হলে ঢাকা কমলাপুর স্টেশনে দিনাজপুর গামী আন্তনগর ট্রেনে উঠে দিনাজপুর স্টেশনে নেমে রিক্সা নিয়ে কেন্দ্রিয় বাস টার্মিনালে এসে পঞ্চগড় গামী গেইটলক বাস ধরে পঞ্চগড়ে আসা যাবে। বিমান পথে আসতে হলে নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর পর্যন্ত বিমানে আসতে হবে তারপর বাস যোগে পঞ্চগড় আসা যাবে।
ঢাকা থেকে সড়কপথে পঞ্চগড় আসতে হলে শ্যামলী, কলেজ গেইট অথবা গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে পঞ্চগড় গামী দিবা কিংবা রাত্রিকালীন কোচ সার্ভিসের মাধ্যমে আসা যাবে।

সকলকে পঞ্চগড়ের অপরূপ সৌন্দর্য দেখার আমন্ত্রণ রইল।

সুত্রঃ
১। পঞ্চগড়ের ইতিহাস- ডঃ নজমুল ইসলাম
২। জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইট
লিঙ্কঃ http://www.panchagarh.gov.bd

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০১৬ রাত ১১:৪৭
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×