somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

আসুন রাশিয়া দেশটি সম্পর্কে জানি

০৬ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম দেশ। রাশিয়ার মত এত বেশি খনিজ সম্পদ বিশ্বের অন্য কোন দেশের নেই। ২০০৩ সালে দেশটির জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৪৫ লক্ষের কিছু বেশি। রাশিয়ার রাজধানী মস্কো দেশটির প্রশাসনিক, বাণিজ্যিক, শিল্প ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। রাশিয়া বর্তমানে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। দেশের বেশিরভাগ জনগণ রুশ ভাষায় কথা বলে। আরও প্রায় ৮০টিরও বেশি ভাষা প্রচলিত। পূর্বে রাশিয়ায় রাজতন্ত্র প্রচলিত ছিল। খ্রিস্টধর্ম রাশিয়ার প্রধান ধর্ম। রাশিয়া দেশটি হাড়কাঁপানি ঠান্ডা বলে এখানে থাকাটা বরং খুবই কষ্টকর এবং প্রতিকূল। রাশিয়ার অর্থনীতি বিশ্বে দশম বৃহত্তম। ২০০০ সালে রাশিয়ার জনগণের মাসিক গড়পড়তা আয় ছিল ৮০ মার্কিন ডলার, যেটা ২০১০ সালে বেড়ে দাড়ায় ২১,১৯২ রুবল (৭৫০ মার্কিন ডলারে)। রাশিয়ার অর্থনীতির বিশাল অংশই প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভরশীল।

রাশিয়ার সম্রাট দ্বিতীয় নিকোলাসও ক্ষয়িষ্ণু অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয়ান সাম্রাজ্যের এলাকায় নিজ প্রভাব বিস্তারের দিকে নজর ছিল, এবং ঘরোয়া সমস্যা মানে তৎকালীন কম্যুনিস্ট বিপ্লব থেকে জনগণের নজর ফেরানোর জন্য এবং ক্ষমতা নিশ্চিতের জন্য একটি যুদ্ধজয় খুব ইতিবাচক মনে করে। এছাড়াও অস্ট্রিয়ার সুত্র ধরে সার্বিয়ায় জার্মান উপস্থিতি রাশিয়া একটি নিশ্চিত হুমকি স্বরূপ দেখে! রাশিয়া একটি পশ্চাদপদ দেশ হয়েও অতি অল্প সময়ের মধ্যেই সম্রাজ্যবাদের প্রভাব মুক্ত হয়ে পৃথিবীর একটি প্রথম সারির শিল্পায়িত অর্থনেতিক ও সামরিক শক্তিতে পরিনত হয়। আর এটা সম্ভব হয় শুধু মাত্র একটি পরিকল্পিত অর্থনীতি গ্রহন করার কারণেই । রাশিয়ার শ্রমিকরা ছিল ভূমিদাস। তারা ছিল অত্যন্ত নিপীড়িত ও দুর্দশাগ্রস্ত। যুগ যুগ ধরে রাশিয়ার শ্রমিকরা শোষিত ও বষ্ণিত থাকার ফলে অত্যন্ত হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল।

রাশিয়ান ফেডারেশন ১৪৫ টি জাতিগোষ্টির সমন্বয়ে গঠিত। রাশিয়া পৃথিবীর দ্বিতীয় শক্তিশালী সেনাবাহিনী। বৃহত্তম অস্ত্রবিক্রেতা। ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুসলিমের বসবাস এই রাশিয়াতে। রুশ মুসলিমদের ইতিহাস রাশিয়াতে প্রায় ১,১০০ বছরের! রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতেই কমপক্ষে ২৫-৩৫ লক্ষের মত মুসলিমের বসবাস! ইউক্রেন এবং রাশিয়ার ইতিহাস একই সূত্রে গাথা হলেও ইউরোপীয় দেশগুলো বিশেষ করে প্রতিবেশি দেশ পোল্যান্ডের সাথে দেশটির পশ্চিম অংশের রয়েছে ঘনিষ্ট সম্পর্ক। পূর্বাঞ্চলীয় শিল্পোন্নত এলাকা সমূহ বিশেষ করে কৃষ্ণ সাগরের তীরে অবস্থিত স্বায়ত্ব শাসিত ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার প্রভাব খুবই শক্তিশালী। ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত ক্রিমিয়া রাশিয়ার অংশ ছিল। এখানে রাশিয়ার নৌঘাঁটি রয়েছে।

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে রাশিয়াতে ইসলামের জাগরণ বেড়েছে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত রাশিয়াতে ছিল মোটে ৩০০ টি মসজিদ আর এখন ৮,০০০—এরও বেশি মসজিদ আছে আরো নিত্য নতুন মসজিদ নির্মান হচ্ছে। ১৯৯১ সালের আগে রাশিয়াতে কোন মাদ্রাসা ছিল না আর এখন ৫০-৬০ টি মাদ্রাসা আছে এবং সেগুলোতে কমপক্ষে ৫০,০০০ ছাত্র-ছাত্রী পড়াশুনা করছে। ১৯৯১ সালে রাশিয়া থেকে হজ্জ যাত্রীর সংখ্যা ছিল মোটে ৪০! আর এবছর ১৮,০০০-এরও বেশি। ইসলাম প্রথম রাশিয়ে ঢুকে ৮ম শতাব্দীতে দাগেস্তান হয়ে। এরপর ৯২২ সালে রাশিয়ার ভলগা-বুলগেরিয়ায় প্রথম ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠিত। পরবর্তীতে চেঙ্গিস খানের নাতি বাতু খান ১২৩০-এর দশকে রাশিয়া জয় করে। পরে মঙ্গলরা (তাতার) ইসলাম গ্রহণ করলে রাশিয়ায় ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে রাশিয়া ইসলামের কবল থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারলেও, তা যেন শেষ রক্ষা ছিল না।

রাশিয়ার পতাকা গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে জায়গা পেয়েছে. জুলাই মাসে ভ্লাদিভস্তকের প্রায় ৩০ হাজার বাসিন্দা এক বিশাল অনুষ্ঠান করেছিল. তারা এক সেতুর উপরে তিনটি সারিতে দশ হাজার করে মানুষ সাদা, নীল ও লাল রঙের কাপড় নিয়ে হাতে করে দাঁড়িয়েছিল। গিনেস বুকে এই তেরঙ্গা পতাকাকে বলা হয়েছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় “জীবন্ত” পতাকা। মার্কসবাদী বিল্পবী লেনিন রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নায়ক। তাঁর নেতৃত্বে ১৯১৭ সালের 'অক্টোবর বিপ্লব' সংগঠিত হয়। ১৯২৪ সালের ২১ জানুয়ারি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বলশেভিক নেতা লেনিন দেশটির প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন। বুরিয়াটিয়া প্রজাতন্ত্রের ইভালগিনস্কী বৌদ্ধ মন্দির রাশিয়ার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে অন্যতম একটি তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত। রাশিয়ার প্রধান বৌদ্ধ ভিক্ষুকের বাসভবন এখানে অবস্থিত।

রাশিয়ায় যথেষ্টসংখ্যায় উন্নতমানের উচ্চ শিক্ষালয় রয়েছে. তাদের প্রত্যেকের নিজস্ব ইতিহাস, নিজস্ব ঐতিহ্য ও বৈশিষ্ট্য. কোনো শিক্ষায়তন নগরীর একেবারে কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত, যেমন মস্কো রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়. অন্যরা রাজধানীর শহরতলীতে – যেমন, মস্কোর ফিজিক্স-টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট. ঐ সব শিক্ষায়তন সুপ্রসিদ্ধ জ্ঞানীগুণী অধ্যাপকদের জন্য, নজিরবিহীন ডিপার্টমেন্টগুলির জন্য, যেখানে পড়াশোনা করে রাশিয়া ও পৃথিবীর অন্যান্য দেশ থেকে আসা প্রতিভাবান ছাত্রছাত্রীরা।

রাশিয়ার সামরিক বাজেট ৯০ দশমিক সাত বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা বিশ্বের মোট সামরিক বাজেটের পাঁচ দশমিক দুই শতাংশ। স্থল বাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, স্ট্র্যাজিক রকেট ফোর্স, বিশেষ বাহিনী এবং এয়ারবোম ট্রুপস নিয়ে রাশিয়া ফেডারেশনের সামরিক বাহিনী গঠিত। নিয়মিত সেনা সদস্য ১০,৪০,০০০, রিজার্ভ আর্মি ২০,৩৫,০০০ এবং আধা-সামরিক বাহিনীতে রয়েছে ৪,৪৯,০০০ জন সদস্য। রাশিয়ার রয়েছে ২২,৭১০টি সাঁজোয়াা ট্যাংক, একটি বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ, ১৫টি উভচর যুদ্ধজাহাজ, পাঁচটি ক্রুজার, ১৪টি ডেস্ট্রয়ার যুদ্ধজাহাজ, পাঁচটি ফ্রিগেট, ৭০টি করভিট যুদ্ধজাহাজ, ৩৩টি নিউক্লিয়ার সাবমেরিন, ১৭টি সাবমেরিন, ১,২৬৪টি যুদ্ধবিমান, ১৯৫টি বোমারু বিমান, ১,২৬৭টি জঙ্গিবিমান, ১,৬৫৫টি সাঁজোয়া হেলিকপ্টার এবং ১২ হাজার পরমাণু অস্ত্র। রাশিয়া বিশ্বের অনেক দেশে অস্ত্র রপ্তানি করে থাকে। রাশিয়ার সামরিক বাহিনীতে যে কোনো দেশের বিদেশি নাগরিক অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। রাশীয় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য।

২০০২ সালে রাশিয়া জঙ্গি বিরোধী একটি আইন পাশ করে। এই আইনের ভিত্তিতে টমস্কের কয়েকজন অধ্যাপক গীতা নিষিদ্ধ করার আবেদন জানায়। গীতার বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ ছিলো এটি নাস্তিকদের বিরুদ্ধে সমাজে ঘৃণা বিদ্বেষ ছড়ায়। এটি মানুষের মাঝে লিঙ্গে, জাতিতে,ভাষায়, জাতীয়তায় বিভেদ সৃষ্টিতে উৎসাহিত করে। গীতা নিয়ে এই বিবাদে রাশিয়া ও ভারত জড়িয়ে পড়ে। ভারত দিল্লিস্থ রাশিয়ান রাষ্ট্রদূতকে তলব করে ভারতের অবস্থান ব্যক্ত করে। রাশিয়ান রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার কাদকিন বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়েছে বলে জানান। রাশিয়া এই সমস্যা মিটিয়ে ফেলার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিবে বলে তিনি জানিয়েছিলেন। রাশিয়া একটি গণতান্ত্রিক দেশ সব ধর্ম স্বাধীন ভাবে চর্চা করার অধিকার তার দেশের সকল নাগরিকের রয়েছে বলে জানান রাষ্ট্রদূত কাদকিন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সোভিয়েত সরকারের আমন্ত্রণে ১৯৩০ সালের সেপ্টেম্বরে রাশিয়া গিয়েছিলেন।

৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×