যারা বিয়ে করতে যাচ্ছেন তাদের জন্য আমার আজকের ব্লগ- কেমন মেয়ে বিয়ে করবেন বা কেমন মেয়ে বিয়ে করা উচিত। আর যারা বিয়ে করে ফেলেছেন- আশা করি তারা আমার লেখার সাথে একমত হবেন। আমি আমার চারপাশে ভালো করে তাকিয়ে দেখি- অনেকেই বিয়ের জন্য মেয়ে খুঁজছেন। পাগলের মতো মেয়ে খুঁজছেন। অনেককে দেখেছি- ৫০/১০০ মেয়ে দেখে ফেলেছে। মেয়ে দেখতে গিয়ে নানান রকম মিষ্টি আর ফল-ফলাদি নিয়ে যান। মেয়ে পক্ষ অনেক আয়োজন করেছে- তা দেখে, মেয়ে দেখে ফিরে আসার সময় মেয়ের হাতে এক/দুই হাজার টাকা গুঁজে দেন। একটা ভালো মেয়ে বিয়ে না করেন তাহলে সারা জীবন কাঁদতে হবে। প্রেম ভালোবাসা করে বিয়ে করেন বা বাবা মার পছন্দে বিয়ে করেন। প্রেম ভালোবাসার ক্ষেত্রেও অনেক ভুল হয়। দুই বছর বা পাচ বছর প্রেম করার পর যখন বিয়ে করা হয়- দেখা যায় বিয়ের পর মেয়েটা সম্পূর্ণ বদলে গেছে।
নিজের কথা একটু বলে নিই- আমি বিয়ে করেছি। আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছি, সুখে আছি। আমার বউ খুবই ভালো একটা মেয়ে। আমাকে খুব ভালোবাসে। তার হাতের রান্না অসাধারণ। খুব রোমান্টিক। একটা উদাহরণ দেই- রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে আদুরে গলায় বলবে- আকাশে এত্ত বড় একটা চাঁদ উঠেছে- চলো না ছাদে যাই? আর কি সুন্দর জোছনা!!! আমার ইচ্ছা না থাকলেও- আমি ছাদে যাই। দু'জন মিলে ছাদে যাই। সে গুনগুন করে গান করে।
দুইজন মিলে মাসে একবার বড় রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খাই। রিকশায় করে অনেকক্ষন ঘুরে বেড়াই। সে হাত নেড়ে নানান গল্প করে। সারাদিন অফিস করে বাসায় ফিরে মনটা খুশিতে ভরে যায়। আমার ছোট্র বাসাটা ঝকঝকে- তকতকে। কি যে সুন্দর করে সাজিয়েছে। আমার স্ত্রী গাছ খুব ভালোবাসে। নানান রকম ছোট ছোট চারা গাছ দিয়ে আমার বাসা ভরতি। আমার বাসায় যারা আসেন- তারা সবাই মুগ্ধ হয়ে যান। ব্যাপারটা আমি খুব এনজয় করি।
আমার সামান্য মাথা ব্যাথা করলে, সে আমার যথেষ্ঠ যত্ন নেয়। সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি- আমার নাস্তা রেডি। এক-একদিন একেক রকম নাস্তা। আমার স্ত্রী ঢাকা শহরের মেয়ে। ইডেন থেকে লেখা পড়া শেষ করেছে। সে অপচয় পছন্দ করে না। খুব হিসেবি। ঘন ঘন পার্লারে গিয়ে টাকা নষ্ট করে না। খুব প্রয়োজন ছাড়া শপিং করে না। আমার পরিবারের মা বাবা এবং আমার ভাই বোনদের খুব খোঁজ খবর রাখে। বিশেষ করে আমার মাকে তার পছন্দের খাবার গুলো রান্না করে খাওয়ায়। মাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যায়। আমার ছোট ভাইদের বিকেলে মজার মজার খাবার রান্না করে খাওয়ায়। আমার বড় ভাইয়ের মেয়েটাকে এবং ছোট ভাইয়ের ছেলেটাকে গোছল করিয়ে দেয়, খাইয়ে দেয়। ঘুম পাড়িয়ে দেয়। মনের মধ্যে এক ফোটা হিংসা নেই। খুব সহজ সরল মেয়ে।
আমার বউ যদি দুই দিনের জন্য বাপের বাড়ি যায়- তাহলে আমার খুব অস্থির লাগে। ঘুমের মধ্যেও সে এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে তার একটা হাত আমার গায়ে দিয়ে রাখে। আমাদের বিয়ের পর থেকেই সে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে এবং আমি ঘুমাবো তারপর সে ঘুমাবে। আমি যতই বলি আহ তুমি ঘুমাও তো। আমি ঘুমিয়ে যাবো। আমাদের বিয়ে হয়েছে তিন বছর। এই তিন বছরে সে একদিও আমার আগে ঘুমায়নি। এবং সকালে আমি ঘুম থেকে ওঠার আগেই সে উঠে যায়। নামাজ পড়ে। সকালে কোরান শরীফ পড়ে।
তার চাহিদা খুবই কম। কোনো দিনও বলে না- আমাকে এইটা কিনে দাও, আমাকে অইটা কিনে দাও। বরং আমি নিজে থেকে কিছু কিনে আনলে রাগারাগি করে। বলে, মা'র জন্য কিনো। তোমার ভাই এর বাচ্চাদের জন্য কিনো। আমার সব আত্মীয় স্বজনরা বলে, রাজীবের বউ টা খুব ভালো। খুব লক্ষী। এমন কি আমাদের প্রতিবেশীরা এসে আমার মাকে বলে- সুরভি'র মতো একটা মেয়ে খুঁজে দাও। ও আচ্ছা বলতে ভুলে গেছি- আমার স্ত্রীর নাম সুরভি। সুরভি'র যে ব্যাপারটা আমার সবচেয়ে ভালো লাগে তা হলো- আমি অফিস থেকে বেশির ভাগ দিনই জ্যামের কারনে হেঁটে বাসায় ফিরি। আমার সারা শরীর ঘামে ভেজা থাকে। ঘরের ঢোকার সাথে সাথে সে আমাকে জড়িয়ে ধরে, তারপর এক গ্লাস লেবুর সরবত বানিয়ে দেয়। এমনকি সকালে অফিসে যাওয়ার সময় আমার জুতোটা তার ওড়না দিয়ে মুছে দেয়। আমি খুব করে মানা করেছি- কিন্তু সে শুনে না। মাঝে মাঝে ভাবি এযুগেও এরকম মেয়ে আছে!!!
আপনারা হয়তো আমার উপর বিরক্ত হচ্ছেন- নিজের স্ত্রীর গুনগান করছি দেখে। তবে সব কিছু মিলিয়ে আমি খুব হ্যাপি। নিজের সুখ শান্তির কথা বলতে অনেক আনন্দ হয়। যদি আমার বউটা বদ হতো। ফাজিল হতো- তাহলে কি আমার দুঃখের শেষ থাকতো? কাজেই বিয়ে অনেক বড় একটা ব্যাপার। খুব দেখে শুনে বিয়ে করা উচিত। এখন বলি, যারা বিয়ের কথা ভাবছেন- লোভী মেয়ে বিয়ে করবেন না। বেশি আধুনিক মেয়ে বিয়ে করবেন না। তবে অবশ্যই সুন্দর একটা মেয়ে বিয়ে করবেন। যে মেয়ে হাসলে সুন্দর লাগে আবার মন খারাপ করে থাকলে বা কাঁদলেও দেখতে সুন্দর লাগে। ধরুন, কোনো কারনে আপনার মন খারাপ- যদি আপনার বউ দেখতে সুন্দর হয়- একবার তার দিকে তাকাবেন- দেখবেন আপনার মন খারাপ ভাব দূর হয়ে গেছে। যে মেয়ের কন্ঠ সুন্দর সেই মেয়েকে বিয়ে করবেন। যেন তার কথা শুনলে-শুনতেই ইচ্ছে হবে।
মিথ্যাবাদী কোনো মেয়েকে বিয়ে করবেন না। আর একটা কথা যে মেয়েকে বিয়ে করবেন- তার পা যেন সুন্দর হয়। সুন্দর পা-ওয়ালা মেয়েরা ভালো হয়। পরীক্ষিত। আর যে মেয়ে আগে কারো সাথে প্রেম ভালোবাসা করেছে- এমন মেয়েকে বিয়ে করবেন না। আর সবচেয়ে বড় কথা যে মেয়ে বিয়ের আগেই কারো সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেছে- ভুলেও এমন মেয়েকে বিয়ে করবেন না। নো, নেভার। কুসংস্কার বিশ্বাসী কোনো মেয়েকে ভুলেও বিয়ে করবেন না। অতি চালাক কোনো মেয়েকে বিয়ে করবেন না। অনেক ছেলে বন্ধু আছে এমন মেয়েকে বিয়ে করবেন না। যে মেয়ের উচ্চারণ ভালো না এমন মেয়েকে বিয়ে করবেন না। বিয়ের সময় ইমোশনাল হবেন না। আবেগকে প্রাধান্য দিবেন না- লজিককে অগ্রাধিকার দিবেন।
এখন হয়তো আপনারা বলবেন- মেয়ে দেখতে গিয়ে এত অল্প সময়ে বুঝব কি করে মেয়েটা ভালো না খারাপ। তাড়াহুড়া করবেন না। সময় নিন। আমি দেখেছি বিয়ের সময় বেশির ভাগ লোকই খুব বেশি তাড়া-হুড়া করে। যা মোটেও ঠিক না। মেয়েটার সাথে কথা বলুন, তাকে নিয়ে বাইরে কোথাও খেতে যান। বেশ কয়েকবার তার সাথে দেখা সাক্ষাত করলেই আপনি তার সম্পর্কে অনেক কিছু জেনে ফেলবেন, বুঝে ফেলবেন। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন- স্ত্রী যার অবাধ্য জীবন তার দুর্বিসহ।
(২য় পর্ব আগামীকাল)
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২১