somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

একজন রাজাকারের আত্মকাহিনি

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমার নাম গোলাম কিবরিয়া। ১৯৭১ সালে আমার বয়স ছিল ২৩ বছর। তখন আমি একেবারে টগবগে জুয়ান। আমার বাড়ি যশোরের নয়া পাড়ায়। যুদ্ধের আগেই বাবা-মা মারা যায়। দু'টা বোন ছিল বিয়ে দিয়েছি। তারা দুই জন'ই ইন্ডিয়া চলে গেছে। যুদ্ধের ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আমি পড়লাম ভয়াবহ বিপদে। তখন আমার মনে হয়েছিল যুদ্ধে পাকিস্থানের জয় হবে। মুক্তিবাহিনিরা কিছুতেই পারবে না। তাই আমি অনেক চিন্তা ভাবনা করে রাজাকারের খাতায় নাম লেখাই। সেই সময় গুলোতে ভালো ইনকাম করেছি। বেতন পেতাম। ভালো খাওয়া দাওয়া। লুটের মালামালের ভাগও পেতাম। নানান বয়সী নারীদের ভোগ করতে পারতাম। তবে, আগে পাকিস্তানী স্যাররা ভোগ করতো- পরে আমরা ভোগ করতাম। তবে হিন্দু মেয়েদের আমরাই আগে ভোগ করতাম। আমার কাজ ছিল গ্রামে গ্রামে ঘুরে অল্প বয়সী মেয়েদের খুঁজে বের করা। তাদের ধরে নিয়ে আসা।

আমি অতি বুদ্ধিমান। তাই গন্ডগোলের সময় নিজের অঞ্চল ছেড়ে অন্য অঞ্চলে গিয়ে রাজাকার বাহিনিতে যোগ দেই। যদি কোনো কারনে পাকিস্তান যুদ্ধে হেরে যায় তাহলে আমি আমার অঞ্চলে ফিরে যাবো। গিয়ে বলব- অমুক অঞ্চলে যুদ্ধ করেছি। হলেও তাই মুক্তিবাহিনিরা যুদ্ধে জিতে গেল। যুদ্ধের পর আমি নিজ গ্রামে ফিরে গেলাম। মরে পরে থাকা এক পাকিস্তানীর পিস্তল সাথে করে নিয়ে আসি। আমার গ্রামবাসীকে বললাম, বোয়ালখালি বাজারে যুদ্ধ করেছি। এক পাকিস্তানী আর্মিকে তো মেরে তার পিস্তলটা নিয়ে নিলাম। পিস্তলটা বের করে গ্রামবাসীকে দেখালাম। সবাই আমাকে স্যলুট দিয়ে গ্রহন করলো। তারা আমাকে নিয়ে অহংকার করে। অনেক ছেলে মেয়ে আমার কাছে আসে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনতে। আমার বুদ্ধি বেশি হওয়াতে খুব দ্রুত মুক্তিযুদ্ধের সনদ পেলাম। এখন তো আমার সুবিধা আর সুবিধা। সরকার থেকে আমাকে তেল-চাল-ডাল থেকে শুরু করে নগদ টাকাও দেয়। হা হা হা.... পত্রিকা আর টিভি চ্যানেলওয়ালাদের কাছে নানান কাহিনি বানিয়ে অনেকবার সাক্ষাৎকার দিয়েছি।

গ্রামের মানূষ আমাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বাহবা দিতে লাগল। সুযোগ পেলেই গ্রামের মানুষদের বাশ দেই। মাস্টার সাহেবের মেয়ে বিলকিস বানুরে বিয়ে করলাম। কিন্তু তার বাচ্চা হয় না। দিলাম তালাক। পরে পাশের গ্রামের কুদ্দুস বেপারির মেয়েকে বিয়ে করলাম। বিয়ের এক বছর পর আমার একটা পুত্র সন্তান হলো। পোলার নাম রাখলাম মুরাদ আলী। মুরাদের বয়স এই বৈশাখে ত্রিশ হলো। মুরাদকে আমি অনেক ভালোবাসি। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার ছেলে অনেক সুবিধা পায়। কোটা আছে সুবিধা। কিন্তু মুরাদ এই কোটা সুবিধা নিয়ে একটা সরকারি চাকরি যোগাড় করতে পারল না। গাধা পোলা। বিবিএ কেমনে পাশ করলো কে জানে! অনলাইনে চাকরির নিবন্ধন করতে পারে না। নীলক্ষেত গিয়েও টাকা দিয়ে অনলাইন এ ফরম পূরণ করে। কোটা সুবিধার কারনে আরও দুই বছর সুযোগ আছে। আমি বলেছি বাবা মুরাদ- তোমাকে আমি অনেক ভালোবাসি। তুমি কোনো রকমে শুধু চাকরির ইন্টারভিউ'র দাওয়াত পাও তারপর বাকিটা আমি দেখুমনে। যত টাকা পয়সা লাগে আমি দিমু। কিন্তু গত পাঁচ বছরে মুরাদ কম করে হলেও সরকারি চাকরির জন্য অসংখ্য বার চেষ্টা করেছে। বারবার ব্যর্থ হয়েছে।

দেশ স্বধীন হওয়ার এত বছর পরও সরকার আবার নতুন করে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা করতে শুরু করেছে। যেহেতু আমি মুক্তিযোদ্ধা (যদিও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা)। আমার গ্রামে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে সঠিক মুক্তিযোদ্ধার তালিকা করতে। হা হা হা---। সরকার থেকে টাকাও দিচ্ছে ভালোই। আমি আমার ইচ্ছা মতোন মুক্তিযোদ্ধার তালিকা করছি। একজনকে মুক্তিযোদ্ধা বানাতে আমি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা নিচ্ছি। আসল মুক্তিযোদ্ধারা এসে পায়ে ধরে। কান্দে। আমার তাদের দিকে ফিরেও তাকাই না। আমার কথা হলো যারা টাকা দিবে তারাই মুক্তিযোদ্ধা হবে। ব্যস। আমার টাকার দরকার আছে- ছেলে আই ফোন চাইছে।

১৯৮০ সালে আমি ঢাকা চলে আসি। মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার কারনে বড় একটা চাকরি পেয়ে যাই। ২৫ বছর সেখানে চাকরি করি। বেতন এর টাকা ছাড়াও অবৈধ্য ভাবে বিপুল টাকা ইনকাম করি। ঢাকা শহরের নানান এলাকায় বিভিন্ন নারীর কাছে আমার যাতায়াত আছে। তাদেরকে ভোগ করার পর দুইহাতে তাদের টাকা দেই। শুধু মাত্র আমার বুদ্ধির কারনে এই স্বাধীন দেশে রাজার হালে থাকতে পারছি।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:৪১
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×