somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

টুকরো টুকরো সাদা মিথ্যা- ৩৬

১৬ ই জুন, ২০১৭ রাত ১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমি যখন ঢাকা শহরের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাই- তখন গাড়িওয়ালা লোকদের উপর আমার খুব রাগ হয়। ঢাকা শহরে এত মানুষজন যে শান্তিতে একটু হাঁটাও যায় না। সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তায় পানি জমে যায়। এর মধ্যে বাস গাড়ি সিএনজি এমন বেপরোয়া ভাবে চালায় যে, জীবনটা হাতে নিয়ে চলাচল করতে হয়। রাস্তায় জমে থাকা ময়লা পানি গাড়ির চাকায় ছিটকে এসে গায়ে লাগে। ড্রাইভার এমন ভাব করে যেন এটাই অলিখিত নিয়ম।

আবার এই আমিই যখন কোথাও গাড়ি করে যাই, তখন মনে হয়, ঢাকা শহরের মানুষজন গুলো খুব অদ্ভুত। এরা কোনো নিয়ম কানুন মানে না। ফুটপাত ছেড়ে রাস্তায় হাঁটছে। আবার হুটহাট রাস্তার মাঝখানে চলে আসে। এর মধ্যে গাড়ি চালানো যে কি মুশকিল তা তারা বুঝে না। হর্ন দিলেও সরে না। হঠাত রাস্তার মাঝখানে এক হাত উঁচু করে রাস্তা পার হয়। উন্নত দেশ হলে এই রকম লোককে গ্রেফতার করা হতো।

এই কয়েকদিন আগে, সকালে অফিসে যাব দেরী হয়ে যাচ্ছে- কোনো বাস থামছে না। অনেকক্ষন ধরে দাঁড়িয়ে আছি। শেষে এক চলন্ত বাসে লাফ দিয়ে উঠলাম। দরজা লাগানো। আমি দরজায় ঝুলে আছি। আমি খুব করুনভাবে বলছি প্লীজ দরজা খুলুন। আমি পড়ে যাচ্ছি। বাসের ভেতর থেকে একসাথে অনেকজন বলে উঠলো- জায়গা নেই। জায়গা নেই। এদিকে আমার অবস্থা কাহিল। যে কোনো সময় আমি পরে যেতে পারি। প্লীজ দরজাটা খুলুন। হেলপারের দয়া হলে দরজাটা একটু ফাঁক করলো। সেই ফাঁক দিয়েই আমি সাপের মতো ঢুকে গেলাম। বাসের অনেক যাত্রী রেগে গেল, কেউ কেউ অনেক উপদেশ দিল। আমি চুপ করে তাদের সবার মন্তব্য শুনলাম। আসলেই বাসের ভিতর খুব ভিড়। দাড়াবার জায়গাও নেই।

বাসটা কিছু দূর যাওয়ার, আমার মতোই আরেকটা ছেলে দরজার কাছে ঝুলে আছে আর বলছে- দরজাটা একটু খুলুন। আমার খুব তাড়া আছে। বাসের ভেতর থেকে অনেকে বলছে জায়গা নেই। জায়গা নেই। বাসের দরজায় ঝুলে থাকা ছেলে কিছুতেই তা শুনছে না। মানছে না। তাদের সাথে আমিও বলছি- জায়গা নেই। জায়গা নেই। অন্য যাত্রীদের থেকে আমি বেশি রেগে গিয়ে বললাম- নির্বোধের মতো ঝুলে আছেন কেন? আপনাদের কি কোনোদিন জ্ঞান বুদ্ধি হবে না? মুহূর্তের মধ্যে আমার মানসিকতা বদলে গেল! আজিব! একটু আগে আমি নিজেই এই কাজ করেছি।

একবার অফিসে কে যেন আমার সাথে দেখা করতে এলো। নাম সম্ভবত মকবুল। সেদিন আমি খুব ব্যস্ত ছিলাম এবং মন-মেজাজও খুব বিক্ষিপ্ত ছিল। রিসেপশনিস্টকে বললাম, মকবুলকে অপেক্ষা করতে বলো- ফ্রি হলে ডাকবো। এরপর দুই ঘন্টা পার হয়ে গেল। ব্যস্ততার কারনে সেই লোকটির কথা ভুলেই গেলাম। খেয়াল হতেই রিসেপশনিস্টকে ফোন দিলাম, জানতে পারলাম এক ঘন্টা অপেক্ষা করে মকবুল চলে গেছে।

একদিন আমি এক অফিসে গেলাম। চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করবো। চেয়ারম্যান সাহেব আমাকে অল্প চিনেন। চেয়ারম্যানের পিয়ন বলল, আজ দেখা হবে না স্যার খুব ব্যস্ত। আপনি আগামীকাল আসেন। রিসিপশনের দু'টি মেয়ে হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি খুব করে পিয়নকে বললাম, তুমি কি গিয়ে শুধু আমার নামটা বলো। আমি দুই মিনিটের বেশি সময় নেব না। আমি নিজে শ্লিপে আমার নামটা বড় বড় করে লিখে দিলাম। এবং বললাম স্যারকে গিয়ে শ্লিপটা দেখাও। তখন তিনি নিজে এসে আমাকে ভেতরে নিয়ে যাবেন। পিয়নটি ভেতরে গেলে এবং একটু পর ফিরে এসে বলল- স্যার বলেছে আজ দেখা হবে না। আপনি অন্য কোনোদিন ফোন করে আসবেন।

আমি প্রচন্ড অপমানিত বোধ করলাম। মাথা ঝিম-ঝিম করতে শুরু করলো। মনে হচ্ছে এ মুহূর্তে আমি অজ্ঞান হয়ে যাব। অপ্রত্যাশিতভাবে অপমান হলে সেই মুহূর্তে আমি চোখে অন্ধকার দেখি। সিড়ির রেলিং ধরে অতি কষ্টে নিজেকে সামলে নিলাম। রাগ করে লিফটে না গিয়ে আমি সতের তলা থেকে হেঁটে নামলাম। ঠিক তখন আমার মকবুলের কথা মনে পড়ল।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০১৭ রাত ১:২৭
৭টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×