নায়ক রাজ্জাক মারা গেছেন। এতে এতো হা-হুতাশ করার কি আছে? তিনি ৭৫ বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন- এটা অনেক বড় ব্যাপার। ইতিহাসে দেখা যায়- অনেক গুনী মানুষ এত দিন বাঁচেন নি। আমি জানি প্রতিটা মৃত্যু'ই অনেক কষ্টের। তবে, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সত্য একদিন আমাদের সবাইকেই মরতে হবে। এটা সহজ সরল্ভাবেই সবার মেনে নেওয়া উচিত? ফেসবুকে দেখলাম- সবাই কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন। ব্যাপারটা যথেষ্ট হাস্যকর।
রাজ্জাক সাহেব কি মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন?
বছরে একবার কোনো এতিমখানার ছেলে মেয়েদের একবেলা খাইয়েছেন?
কোনো একটা গ্রামের কাঁচা রাস্তা কি পাকা করে দিয়েছেন?
পানি বন্ধী মানুষের জন্য কোনোদিন সাহায্য সহযোগিতা করেছিলেন?
রানা প্লাজা'য় আহতদের জন্য কিছু করেছিলেন?
তিনি এত এত সিনেমা করলেন বা এত এত পুরস্কার পেলেন- তাতে কি বাজারে দ্রব্য মূল্যের দাম কমেছে?
সারা বাংলাদেশের কোথাও কি তিনি একটা লাইব্রেরী করেছেন?
তিনি জীবিত থাকা অবস্থায় একটি অভাবী পরিবারকে আলোর পথ দেখিয়েছেন?
মসজিদ করেছেন? মাদ্রাসা করেছেন? স্কুল করেছেন?
একজন মানুষ মারা গেলে'ই আমরা কেন এত হা-হুতাশ করি? ওহে, হা-হুতাশ করা মানুষ শুনো, আদিখ্যেতা ভালো নয়। এখন, শহীদ মিনারে নিয়ে যাবা- মানুষ লম্বা লাইন ধরে ফুল দিবে? নেতারা বানী দিব। তার সাথে তোলা ছবি থাকলে ফেসবুকে দেয়া হবে। নানান রকম সত্য মিথ্যা সৃতিচারন করা হবে। কঠিন আবেগ নিয়ে স্ট্যাটাস দেয়া হবে। তিন দিনের শোক ঘোষনা করা হবে। এতে মৃত মানূষটির কি উপকার হয়? উপকার বাদ দিলাম, সমাজের'ই বা কি উপকার হয়? তিনি তো সিনেমা করে অনেক টাকার মালিক হয়েছেন- সেই টাকার কিছু অংশ দিয়ে একটা জনকল্যাণকর কাজ করেছেন?
তবে তার বেশ কয়েকটা সিনেমা খুব নাম করেছে। সাধারন মানূষকে হাসিয়েছে। হয়তো মুগ্ধও করে থাকতে পারে। তাতে লাভ কি? তিনি অমিতাভ বচ্চন বা চার্লি চ্যাপলিনের চেয়ে বড় অভিনেতা নয়। তিনি যদি জীবিত থাকা অবস্থায় একটা বা দু'টো অসহায় পরিবারকে আলোর মুখ দেখাতেন, তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতেন- তাহলে তাকে আমি স্যলুট করতাম। আমার এই ব্লগ পোষ্টি কারো ভালো না লাগলে আমি স্যরি। আমার কাছে একজন বাংলা সিনেমার নায়কের চেয়ে একজন মুক্তিযোদ্ধা অনেক বড়। আমার কাছে একজন নায়কের চেয়ে একজন মাদার তেরেসে অনেক বড়। আমার কাছে ১০০ জন নায়কের চেয়ে একজন বঙ্গবন্ধু অনেক বড়।
তরুন বয়সে আমার বাবা দেখতে নায়ক রাজ্জাক এর মতো ছিলেন। এই বয়সে এসেও আমার বাবার সাথে তার চেহারার মিল আরও বেশি মিলে গেছে। অনেকে আমার বাবার কাছে এসে, বাবাকে নায়ক রাজ্জাক ভেবে অটোগ্রাফ চাইতেন। ছবি তুলতে চাইতেন। সে যাই হোক, এই যে বর্তমানে নায়ক শাকিব খান। সেও একদিন বুড়ো হবে মারা যাবে। তখনও হয়তো আপনারা এমন হায় হুতাশ করবেন। টিভি ক্যামেরার সামনে মুখভার করে বললেন, অপূরনীয় ক্ষতি হয়ে গেল। ইত্যাদি ইত্যাদি। সস্তা আবেগ বাদ দেন। দেশকে ভালোবাসেন। দেশের জন্য কিছু করেন। একজন ভালো-দক্ষ পরিচালক, একজন রিকশাওয়ালাকে দিয়েও দারুন অভিনয় করিয়ে নিতে পারেন।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:২৬