ঢাকা শহরের প্রতিটি এলাকায় ইয়াবা খুব সহজেই পাওয়া যায়।
এলাকার বড় ভাইরা উঠতি বয়সের ছেলেদের কে দিয়ে ইয়াবা বিক্রি করে। বিনিময়ে তারা টাকা এবং বড় ভাইদের সার্পোট পায়। এযুগের উঠতি বয়সের ছেলেরা খুব হিংস্র হয়। পুলিশ খুব ভালো করেই জানে কে বা কারা এবং কোথায় নেশা জাতীয় দ্রব্য বিক্রি করছে। কিন্তু তারা নিয়মিত টাকা পান তাই চুপ করে থাকেন। মাঝে মাঝে লোক দেখানো-তালাশ করেন।
ইয়াবা একধরনের নেশাজাতীয় ট্যাবলেট। এই মাদকটি থাইল্যান্ডে বেশ জনপ্রিয়, এবং পার্শ্ববর্তী দেশ বার্মা থেকে এটি চোরাচালান করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পৃথিবীর অনেক দেশেই এই মাদকের বিস্তার ঘটেছে। ইয়াবা একবার সেবন করলে সে আর এটা ছাড়তে পারবে না। সে ইয়াবার পিছনে ছুটতে থাকবে। এ মরণনেশা চিকিৎসায় তেমন কোন সুফল নেই।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, ঢাকা নগরীতে প্রতিদিন ১৪ লাখ ইয়াবার চাহিদা। ঢাকা শহরে ইয়াবা ব্যবসায়ীর সংখ্যা ১৫ হাজার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখের সামনে চলছে অলিগলিতে ইয়াবা বেচাকেনা। এমন লাভজনক ব্যবসায় দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শেষ হলেই বা কি! এর বিরুদ্ধে কোথাও সাঁড়াশি অভিযান নেই। কারণ এটা বন্ধ হলেই যে বখরা বা চাঁদার মোটা অংক আদায় হবে না। ব্যাপক চাহিদার কারণে- রাজধানীতেই তৈরি হচ্ছে নকল ইয়াবা। একটি ইয়াবার দাম ৩০০ টাকা।
বাংলাদেশে ইয়াবার আবির্ভাব ঘটে ১৯৯৭ সালে। পরবর্তীতে ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মায়ানমার থেকে ইয়াবা আসতে শুরু করে। থাই সরকার ১৯৭০ সালে ইয়াবা ট্যাবলেটকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সেসময় এটি সে দেশে পেট্রল পাম্পে বিক্রি হতো, এবং থাই ট্রাক চালকেরা জেগে থাকার জন্য এটা ব্যবহার করতো। প্রথমদিকে ইয়াবা যৌনউত্তেজক বড়ি হিসাবে বাজারে পরিচিত ছিলো। কিন্তু দীর্ঘদিন সেবনের ফলে যৌন ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। নিয়মিত ইয়াবা সেবন করলে মস্তিস্কে রক্ত ক্ষরন, নিদ্রাহীনতা, খিঁচুনি,ক্ষুধামন্দা এবং মস্তিস্ক বিকৃতি দেখা যেতে পারে। ইয়াবা গ্রহণের ফলে ফুসফুস, কিডনি সমস্যা ছাড়াও অনিয়মিত এবং দ্রুতগতির হৃদস্পন্দনের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
১৯১৯ সালে জাপানিরা ওষুধ হিসেবে ইয়াবা তৈরির পরিকল্পনা করে। মূলত জীবন বাঁচানোর লক্ষে তাদের এ আবিস্কার। এর পরবর্তী সময়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন জার্মান প্রেসিডেন্ট এডলফ হিটলার তার মেডিকেল চিফকে আদেশ দিলেন দীর্ঘ সময় ব্যাপি যুদ্ধক্ষেত্রের সেনাদের যাতে ক্লান্তি না আসে এবং উদ্দীপনায় যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারে বা বিমানের পাইলটের নিদ্রাহীনতা, মনকে উৎফুল, চাঙ্গা রাখার জন্য একটা কিছু আবিস্কার করতে। টানা ৫ মাস পর রসায়নবিদগণ চেষ্টা চালিয়ে তৈরি করলেন অ্যামফিটামিন। এর সঙ্গে একটি মিথাইল গ্রূপ যোগ করে বাড়তি সংশেষের জন্য তৈরি করা হল মিথাইল অ্যামফিটামিন। মিথাইল অ্যামফিটামিন ও ক্যাফেইনের সংমিশ্রনে তৈরি হল ইয়াবা।
ঢাকায় তিন ধরনের ইয়াবা পাওয়া যায়। প্রথম ধরনের ইয়াবা ট্যাবলেটের বেশির ভাগ সবুজ বা গোলাপি রঙের হয়। এর ঘ্রাণ অনেকটা বিস্কুটের মত হয়ে থাকে। দ্বিতীয় ধরনেন ইয়াবা ট্যাবলেট এর দাম তুলনামূলকভাবে কম। কিন্তু এটিও নেশা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। তৃতীয় ধরনের ট্যাবলেটি আরও সস্তা এবং নেশায় আষক্তদের নিকট এটি ভেজাল বলে পরিচিত। ইয়াবা সেবনকারীদের মধ্যে প্রচলিত ধারণা অনুসারে, চিতা নামের পিলটি সবচেয়ে নিম্নমানের ইয়াবা পিল হিসেবে গণ্য হয়। ইয়াবা পিলের গায়ে ইংরেজি ডাব্লিউ ওয়াই লেখা থাকে। ওয়াই লেখার ধরণ দীর্ঘ হলে এবং ইয়াবার রঙ পুরোপুরি গোলাপি হলে ধারণা করা হয় সেটি ইয়াবা হিসেবে ভাল মানের।
ভয়াবহ এ নেশায় আসক্তদের তালিকায় চলচ্চিত্রের নায়ক, প্রযোজক ও পরিচালকদের নামও রয়েছে। আলোচিত একাধিক মডেল কাম অভিনেত্রী ও সঙ্গীত শিল্পী নিয়মিত ইয়াবা সেবন করে বলে নিশ্চিত হয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। গুলশান, বনানী, উত্তরা সহ অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে গড়ে তোলা হয় জলসা ঘর। সেখানে যৌন ব্যবসার পাশাপাশি চলে ইয়াবা ব্যবসা। এসব জলসা ঘরের মূল আকর্ষণ থাকে শোবিজের নায়িকা ও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির সুন্দরী ছাত্রীরা। সেখানে ইয়াবাসহ নানান মাদক বিক্রি হয়।
ইয়াবা থেকে এই সমাজ কি কোনো দিন মুক্ত হতে পারবে? সমাজের বেশির ভাগ চোর ছিনতাইকারীর ইয়াবা খোর। খুব সহজেই এখন ইয়াবা পাওয়া যায়। বাসা থেকে বের হয়ে গলির মুখে দাড়ালেই পাওয়া যায় তাই অনেক ভদ্র ঘরের ছেলে মেয়েরা এখন ইয়াবায় আসক্ত। সরকার কঠিনভাবে ব্যবস্থা নিলেই ইয়াবা দূর হওয়া সম্ভব। পুলিশ যদি চায় এক রাতের মধ্যে ঢাকা শহরের সব ইয়াবা ব্যবসায়ীকে ধরে ফেলতে পারে। কিন্তু পুলিশ ধরে না। কারন তাদের ধরলেই নিয়মিত যে টাকাটা পায় তা আর পাবে না।
সবচেয়ে দুঃখের বিষয় এখন গ্রামেও ইয়াবা পাওয়া যায়। গ্রামের উঠতি বয়সের ছেলেরা ইয়াবায় আসক্ত হয়ে পড়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:৩৬