somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

গ্রামের উন্নয়ন কেন দরকার

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলাদেশের একটি গ্রামের রাস্তা।

গ্রামের উন্নয়ন ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। স্বাধীনতার এত বছর পরও গ্রামের সঠিক উন্নয়ন হয়নি আজও। গ্রামের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ টাকা লুটেপুটে খাওয়া হয়েছে। সারা বাংলাদেশে গ্রামের লক্ষ লক্ষ রাস্তা এখনও কাঁচা। বৃষ্টির দিনে সেসব রাস্তায় হাঁটা যায় না। প্যাক কাঁদায় ভরে যায় পুরো রাস্তা। পা দিলে পা ডেবে যায়। এত পরিমান কাঁদা হয় যে শুকাতেও একমাস লাগে। কাঁচা মাল ভ্যানে করে বাজারে নেওয়া সম্ভব হয় না। মাথায় করে নিতে হয়। কি পরিমান কষ্ট তারা করে একবার গ্রামে গিয়ে দেখে আসুন নিজের চোখে। শুধু বড় বড় কথা বললে হবে না- 'দেশ উন্নয়নের মহা সড়কে'। গ্রামে ২৪ ঘন্টায় ১৫ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে না। আবার অনেক গ্রামে বিদ্যুৎ ই নাই। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- প্রতিটা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেয়া হবে। কিন্তু লক্ষ লক্ষ করে বিদ্যুৎ নাই।


এই আধুনিক যুগে এসেও এবং স্বাধীনতার এত বছর পরও ছেলে মেয়েদের বাঁশের সাঁকো পাড় হয়ে স্কুলে যেতে হয়।

আমি গত কয়েক বছরে প্রায় ২৫১ টা গ্রাম ঘুরেছি। নিজের চোখে দেখেছি গ্রামের মানূষের দূঃখদুর্দশা। শহরের মানূষেরা ভাবতেই পারবে না তাদের কি পরিমান সীমাহীন কষ্ট। কথার কথা বলছি, উদাহরন স্বরুপ মনে করুন বগুড়া অঞ্চলটির কথা। দেখবেন বগুড়া শহরটি বেশ সুন্দর। চার পাশেই কোথাও কাঁচা রাস্তা নেই। কিন্তু আপনি যখন কোনো গ্রামে যাবেন- তখন দেখবেন- কাঁচা রাস্তা কাকে বলে। এমপি গন শহরটা একটু ভালো রাখতে চেষ্টা করেন। এই অবস্থা শুধু বগুড়ার না, সমগ্র দেশের একই অবস্থা। শহরটা মোটামোটি ভালো। কিন্তু গ্রামের মানুষের সমস্যার শেষ নেই।
গ্রামের লোকজন এমপি'র কাছেই যেতে পারে না। একবার এমপি হওয়ার পর পারতপক্ষে একজন এমপি গ্রামে খুব কম যান। এমনও এমপি আছেন- তার আসনের সব গ্রাম তিনি নিজে একবারও যাননি। গ্রামের লোকজন তাকে শুধু পোস্টারে দেখেছেন। জেলাপরিষদ, মেম্বার বা চেয়ারম্যান তারা তাদের কাজ যথাযথভাবে পালন করছেন না। গ্রামের মানুষ তাদের কাছে গেলে কোনো সহযোগিতা পায় না। বিদ্যুতের জন্য, পাকা রাস্তার জন্য গ্রামের মানুষ পয়সাওয়ালা লোকদের পেছনে দিনের পর দিন ঘুরে কিন্তু ফলাফল শূন্য। এমপিদের নিজ নিজ আসনে কমপক্ষে ১০০ বিঘা জমি আছে। কিভাবে সম্ভব?


কাঁচা রাস্তার কারনে পাট মাথায় করে বাজারে নিয়ে যেতে হয় বিক্রি করার জন্য। এই পাট'ই তার সারা বছরের সম্বল।

শহর যতই উন্নত হোক। বড় বড় বিল্ডিং থাক। অসংখ্য শপিংমল থাক। ওভার ব্রীজ থাক। কোনো লাভ নেই যতক্ষন পর্যন্ত গ্রামের উন্নয়ন না হবে ততক্ষন পর্যন্ত দেশের উন্নয়ন সম্ভব না। রবীন্দ্রনাথও গ্রামের উন্নয়ন এর কথা বারবার বলেছেন। আমি নিজের চোখে দেখি নাই- তবুও একটা কথা নিশ্চিত বলতে পারি- বাংলাদেশের সমস্ত গ্রামে যতগুলো এমপি আছে তাদের বাড়ির রাস্তা পাকা। পাকা না হলে তারা গাড়ি নিয়ে যাবে কি করে? অন্যদিকে গ্রামের সাধারন মানুষ চলাফেরা করার জন্য পাকা রাস্তা পায় না। শুধু মাত্র পাকা রাস্তা হলেই একটা গ্রাম অনেকখানি উন্নয় হয়ে যায়। স্কুলের ছেলে মেয়েরা এখনও বাঁশের সাঁকো পাড় হয়ে স্কুলে যায়। একজন এমপি কি পারেন না বাঁশের সাঁকো ফেলে দিয়ে একটা ব্রিজ করে দিতে?


নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দু'টা কথা বলি। আমার গ্রাম খুব ভালো লাগে। গ্রামের পরিবেশ ভালো লাগে। বাংলাদেশের গ্রাম গুলো ঘুরে দেখার জন্য এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে গিয়েছি। নিজের চোখে দেখেছি- কাঁচা রাস্তা। পা দেয়া মাত্র হাঁটু পর্যন্ত ডেবে যায়। কোনো রিকশা বা ভ্যান যেতে পারে না। আমি কাঁচা রাস্তার ছবি তুলতে লাগলাম। তখন গ্রামের সব মানুষ ছুটে আমার কাছে এলো। তারা বলল- ''ভাই আপনি সাংবাদিক, আপনি আমাদের এই রাস্তাটা পাকা করে দেয়ার ব্যবস্থা করেন। ছেলে মেয়ে স্কুলে যেতে পারে না। বৃষ্টির দিনে যারা এই পথ দিয়ে যাতায়াত করে তারা পিছলা খেয়ে হাত পা ভাঙ্গে। সেদিন একজন অসুস্থ রোগী কিন্তু তাকে আমরা হাসপাতালে নিতে পারি নাই। এই রাস্তায় কোনো রিকশা ভ্যান আসে না। শেষে সেই রোগী মারা যায়। এমপির কাছে গেলে- এমপি ধমক দেয়।


একটি গ্রামের চায়ের দোকান। বিদ্যুৎ নাই।

গ্রামের লোকজনের হতাশা দুঃখ কষ্ট আর যন্ত্রনাময় মুখ দেখে আমার খুব কষ্ট লাগল। আমার টাকা থাকলে আমি নিজেই তাদের রাস্তা পাকা করে দিতাম। গ্রামের সহজ সরল মানুষ গুলো কতটা অসহায়- নিজের চোখে না দেখলে আমি বিশ্বাস করতাম না। তারা আমাকে বারবার শুধু রাস্তাটা পাকা করার অনুরোধ জানিয়েছে। আমি খুব ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলাম, তারা টাকা চাচ্ছে না। চাকরি চাচ্ছে না। শুধু তাদের আকুল আবেদন কাঁচা রাস্তাটা যেন পাকা হয়। তাহলে তারা চাষবাস করে তাদের কাঁচা মাল সুন্দরভাবে বাজারে নিয়ে যেতে পারবে। ছেলে মেয়ে গুলো শান্তিতে স্কুলে যেতে পারবে। যদি প্রাইমারী স্কুল গুলোর অবস্থা খুব করুন। প্রতিটা প্রাইমারী স্কুল মেরামর করা খুব দরকার হয়ে পরেছে।


প্রাইমারী স্কুলের পাশের একটি দোকান। একটি দোকান থেকেই তাদের আর্থিক অবস্থা বুঝা যায়।


অর্থমন্ত্রী তো লম্বা বাজেট পেশ করেন। কাঁচা রাস্তা পাকা করার জন্য অনেক বরাদ্দ থাকে। তবু কাঁচা রাস্তা পাকা হয় না কেন? অথবা এভাবেও বলা যেতে পারে- ১০০ কাঁচা রাস্তা করার বিল পাশ হলো। সেখানে ৫০ টা কাঁচা রাস্তা পাকা হয়। তাহলে যে ৫০ টা কাঁচা রাস্তা পাকা হলো সেই টাকা গুলো কোথায় যায়? সরকার কি অডিট করে না? আমার হিসাব মতে, স্বাধীনতার পর ভিবিন্ন সরকার কাঁচা রাস্তা পাকা করার জন্য যে পরিমান বরাদ্দ দিয়েছে- সে মোতাবেক যদি কাজ হলো তাহলে সত্যি সত্যি গ্রামে একটাও কাঁচা রাস্তা থাকতো না। এজন্য আমাদের দরকার সৎ লোক। গ্রামের কাঁচা রাস্তা উন্নয়নের জন্য প্রধান ভূমিকা রাখতে পারে এমপি। এমপিরা চোর না হলে- দ্রুত গ্রামের উন্নয় সম্ভব।


দূর থেকে দেখলে গ্রাম গুলো সুন্দর'ই লাগে। কিন্তু কাছে গেলে বুঝা যায়।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:৪৯
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×