গত এক মাস ধরে রাতে ভালো ঘুম হচ্ছে না। শেষ রাতের দিকে কিছুটা ঘুম আসলেও তখন অদ্ভুত সব স্বপ্ন দেখছি। ঘুমের অভাবে চোখের নিচে কালি পড়েছে। চোখ মুখ হয়ে যাচ্ছে লাবন্যহীন। মনে হচ্ছে ১৫ বছর বয়স বেড়ে গেছে। রাতে খেতে ইচ্ছা করে, না খেয়েই বিছানায় যাই। সুরভি বেশ চিল্লাচিল্লি করে, আমি গায়ে মাখি না। দুপুরের খাবার খাই বিকেল চারটায়। তাছাড়া হোটেলে খেতে আর ভালো লাগে না।
গত শক্রবার স্বপ্নে দেখি- ফুটপাত দিয়ে হাঁটছি- হঠাত পড়ে গেলাম ঢাকনাবিহীন ম্যানহলে। বিকট দুর্গন্ধ। একটু একটু করে আমি নোংরা পানিতে ঢুবে যাচ্ছি আর মরে যাচ্ছি।
শনিবার স্বপ্নে দেখি- বাসে উঠেছি, প্রচন্ড ভিড়। এক হাত দিয়ে হেন্ডেল ধরে রেখেছি, অন্যহাতে ফাইলপত্র। বুঝতে পারছি কে যেন পকেটে হাত দিয়ে ম্যানিব্যাগ নিয়ে যাচ্ছে। বুঝতে পারছি কিন্তু কিছু করতে পারছি না। চিৎকার করে বলছি প্লীজ নিও না, নিও না। অল্প ক'টা টাকা আছে। এখনও মাস শেষ হতে অনেক দেরী।
রবিবার- রাত তিনটা বেজে গেছে তবু ঘুম আসছে না। সুনীলের 'বিশাখার জন্মদিন' বইটা পড়ছি, শেষের দিকে আর মাত্র কয়েক পাতা বাকি আছে। ঠিক তখন ঘুমিয়ে পড়লাম। আর স্বপ্নে দেখলাম- ফুটপাত দিয়ে হাঁটছি। রাস্তায় জ্যাম দেখে এক লোক তার বাইক নিয়ে ফুটপাতে উঠে গেছে। বাইকওয়ালা আমার পেছনে। হর্ন দিচ্ছে। আমি ইচ্ছা করে জায়গা দিচ্ছি না। শেষে বাইকওয়ালা আমাকে ধাক্কা দিল। আমি মাটিতে পড়ে গেলাম। বাইকওয়ালা বাইক নিয়ে আমার উপর দিয়েই চলে গেল- আমার কোমরটা ভেঙ্গে দিয়ে।
সোমাবার রাতের ঘটনা। রাত ১১ টায় বিছানায় গেলাম। ঠিক করলাম আজ ঘুম না এলেও চোখ বন্ধ করে পড়ে থাকব। ঘুমের দরকার আছে- সুন্দর এবং সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য। এপাশ ওপাশ করতে করতে ফযরের আযান দিয়ে দিল। তখন একটা ঝিমুনি এলো। আর স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম- বাসে উঠতে গিয়ে পড়ে গেছি। পা ভেঙ্গে গেছে। আমাকে হাসপাতালে নেওয়া হলো। ডাক্তার বলছে- পা কেটে ফেল। আমি বললাম- না না আমার পা কাটবেন না। ডাক্তার বললেন- চুপ, কোনো কথা না। হলুদ দাঁত বের করে নার্স বলল- অসুবিধা নেই, আমাদের হাসপাতাল থেকেই হুইলচেয়ার দেয়া হবে।
মঙ্গলবারের ঘটনা- কখন ঘুমিয়েছি জানি না। কিন্তু দুঃস্বপ্ন থেকে মুক্তি নেই। সুরভি আর আমি নিউ মার্কেটে যাচ্ছি। ঠিক নীলক্ষেত পেট্রোল পাম্পের সামনে আমাদের রিকশাকে একটা মাইক্রো ধাক্কা দিল। সুরভি আর আমি দুইজন দুই দিকে ছিটকে পড়লাম। সুরভি'র অবস্থা খুব খারাপ। তার মাথা দিয়ে গল গল করে রক্ত পড়ছে। কিন্তু কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসছে না। আমি চিৎকার করে বলছি- হেল্প হেল্প।
ঘটনা বুধবারের- ছোট একটা অনুষ্ঠান ছিল। সুরভি বিরানী রান্না করছে। সে অস্থির বিরানী রান্না করে। যাই হোক, রাত ১১ টায় গেস্টরা সব চলে গেল। আমি কিছুক্ষন ফেসবুকে গুতাগুতি করে বিছানায় গেলাম। সুরভি গভীর ঘুমে। তার কোনো ঘুমের সমস্যা নেই। বালিশে মাথা রাখা মাত্র গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়। আমি বিছানায় শুয়ে আছি কিন্তু আমার খুব ভয় করছে। কিসের ভয় জানি না। একবার মনে হচ্ছে কেউ ছাদে হাঁটছে। একবার মনে হচ্ছে দরজায় কেউ নক করছে। আবার মনে হচ্ছে- পাশের ঘরে কেউ আছে। প্রচন্ড ভয় নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। আর স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম। আমার সব মৃত আত্মীয় স্বজনরা আমার পাশে বসে আছেন। তারা সবাই সাদা জামা পড়া। তাদের দেখে আমি খুশি না হয়ে বরং ভয়ে অস্থির। তারা আমাকে নিয়ে যেতে আসছে। আমি যাব না। তবু তারা জোর করছে। আমি দৌড়াচ্ছি। পথ ঘাট কিছুই চিনি না। অন্ধকার রাস্তা।
বৃহস্পতিবার রাতটা আমার জন্য আনন্দের রাত। রাত ১২ টায় চা খেতেও সমস্যা নেই। কারন পরের দিন শুক্রবার। দেরী করে ঘুম থেকে উঠলেও সমস্যা নেই। অনেকরাত পর্যন্ত লিখলাম আর পড়লাম। বিছানায় শুয়ে অনেকক্ষন গেমস খেলে-খেলে মোবাইলের চার্জ সব শেষ করে ফেললাম। শেষে ঘুম। আর ঘুম মানে স্বপ্ন। স্বপ্নে দেখি- আমার অস্টেলিয়া যাওয়ার ভিসা হয়ে গেছে। প্লেনের টিকিট আমার হাতে। কিন্তু সুরভি খুব মন খারাপ করে এয়ারপোর্ট এ আমাকে বিদায় দিতে এসেছে। সুরভি'র কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমি প্লেনে উঠলাম। আর ঠিক তখন প্লেনের মধ্যে আমি চিৎকার চ্যাচামেচি করতে লাগলাম। আমি যাব না..., আমি যাব না...। সুরভিকে ফেলে আমি যাব না। প্লেন থামাও।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:১৩