somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

ভালোবাসাবাসির দিনগুলি

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এরপর থেকে সুরভি'র সাথে আমার নিয়মিত দেখা হতে লাগল। দেখা করতে যেতে কি যে ভালো লাগে, কি যে আনন্দ বলে বুঝাতে পারব না। রাস্তার এত জ্যামও আমাকে দেরী করাতে পারত না। ঢাকা শহরের এক মাথায় থাকি আমি আরেক মাথায় থাকে সুরভি। ঢাকা শহরের এমন কোথাও বাদ নেই যেখানে আমরা যাইনি। মাসের প্রথম সপ্তাহে গেলাম মিরপুর বেড়িবাঁধ, দ্বিতীয় সপ্তাহে যাই, জিন্দা পার্ক, তৃতীয় সপ্তাহে যাই, বুড়ি গঙ্গা নদীর ওই পাড়, চতুর্থ সপ্তাহে যাই ধানমন্ডি। এইভাবে টানা তিন বছর সমস্ত ঢাকা শহর চষে বেড়ালাম। সন্ধ্যার পর সুরভিকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসি, এই ছিল রুটিন। যত দিন যাচ্ছে ততই সুরভি'র প্রতি মায়া মমতা আর ভালোবাসা চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়েই চলেছে। মনে মনে নিজেকে বুঝাই, যা হচ্ছে আল্লাহর ইচ্ছা'ই হচ্ছে, আমার কোনো হাত নেই। স্বচ্ছ, পবিত্র সম্পর্ক। এযুগের ছেলে মেয়েদের মতো নয়।

তিন বছরে ঢাকা শহরের সব রেস্টুরেন্টে খাওয়া হয়ে গেল। তখন আমার হাতে টাকা পয়সা ভালোই ছিল। দুই হাতে খরচ করতাম। আমি কৃপণ মানূষ নই। বিশেষ বিশেষ দিনে যখন আমাদের দেখা হতো- সুরভি আমার জন্য নিজের হাতে রান্না করে নিয়ে আসতো। কত রকমের রান্না যে জানে মেয়েটা! রান্না খুব স্বাদ হয়। একদিন বৃক্ষমেলা গিয়েছি- সুরভিকে বললাম, কোথাও চলো ক্ষুধা লাগছে। ঠিক তখন সুরভি ম্যাজিকের মতো করে আমার প্রিয় খাবার গুলো আমার সামনে দিল। এরকম বহুবার হয়েছে। আইডি ভবনের পেছনের গলিটা আমাদের খুব প্রিয় ছিল। ঐ রাস্তা দিয়ে কত বার যে হেঁটে গিয়েছি। ঢাকা শহরের অসংখ্য অলি-গলিতে আমাদের অনেক স্মৃতি। যেদিন রাস্তায় জ্যাম কম থাকতো- বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রিকশায় করে ঘুরে বেড়াতাম। সন্ধ্যার পর রাস্তার পাশে হাজার রকমের খাবারের দোকান বসে। সেই সব খাবার আমরা বিসমিল্লাহ বলে খেয়ে নিতাম। কখনও পেট খারাপ হয়নি। অনেক ডাবওয়ালা, গেন্ডারির রস বিক্রেতা, ঝালমুড়িওয়ালা, ফুচকাওয়ালা আমাদের কয়দিন না দেখলেই বলতো, মামা আসেন না কেন? অনেকদিন পর দেখলাম, নিয়মিত আসবেন, আপনাদের না দেখলে ভালো লাগে না- ইত্যাদি ইত্যাদি।

একবার সুরভি তার কাজিনের বিয়েতে গেল ফেনী। বিয়ে শেষে সে ঢাকা ফিরতে পারছে না। কারণ সেদিন বাস চলাচল কি কারনে যেন বন্ধ ছিল। কিন্তু সেদিনই সুরভি'র ঢাকা আসা খুব দরকার ছিল। সুরভি আমাকে মন খারাপ করে ঘটনা জানালো। আমি বললাম কোনো চিন্তা করো না। আমি সব ব্যবস্থা করছি। আমি আমার আব্বাকে ফোন দিলাম। আব্বা সব সমস্যার সমাধান করে দিল। আমার আব্বা পরিবহনের নেতা। তার আছে গাড়ির ব্যবসা। সে একটা প্রাইভেটকার পাঠিয়ে দিল ফেনী। দুপুর তিনটায় সুরভি ঢাকা চলে এলো। প্রায়ই আব্বার কাছ থেকে গাড়ি নিয়ে সারা ঢাকা শহর ঘুরে বেড়াতাম। আব্বা কোনো প্রশ্ন করে না, গাড়ি চাইলেই পাঠিয়ে দেয়। সুরভি'র সাথে আমি ঘুরে বেড়াই- এটা নিশ্চয়ই কোনো অপরাধ নয়। অনেকেই লুকোছাপা করে। লুকানোর কি আছে? আমি বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াতাম। একটি মেয়েকে আমার ভালো লাগে, তাকে নিয়েই তো আমি ঘুরবো। রাস্তায় যদি কেউ আমাকে দেখে ফেলে- তাতে আমার কিছু যায় আসে না। যদিও সুরভি কিছুটা ভয় পেত। আমি তাকে ভরসা দিতাম।

তখন আমি বিভিন্ন অনুষ্ঠান, বিয়ে জন্মদিন সেমিনার এর ছবি তুলে বেড়াই। ইনকাম ভালোই। কিন্তু একাজে সম্মান নেই। যাই হোক, হু হু করে সময় চলে যাচ্ছে। আমরা দুইজন মহা আনন্দে ঘুরে বেড়াই। একদিন সব বন্ধু বান্ধব মিলে গেলাম আমাদের গ্রামের বাড়িতে। আব্বা, ছোট চাচাকে ফোন দিয়ে আগেই সব ব্যবস্থা করে রেখেছে। সুরভিকে নিয়ে গেলাম। তার আমাদের গ্রামের বাড়ি যাওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল। আমাদের ভাঙ্গা জমিদার বাড়ি দেখে সুরভি খুব মুগ্ধ! গ্রাম থেকে ঢাকা ফিরতে রাত ৯ টা বেজে গেল। সুরভি খুব ভয় পেল। বারবার বলছে- আব্বা আজ আমাকে মেরেই ফেলবে। আমি বললাম কোনো ভয় নেই। তোমার আব্বা বেশি চিল্লাচিল্লি করলে বাসা থেকে বের হয়ে আসবে। আমি আছি। তারপর তুমি আমাকে কোথায় নিয়ে যাবে? আমি বললাম- আমার বাসায়। সুরভি হেসে ফেলল, আমিও হেসে ফেললাম।
একদিনের ঘটনা বলি- আগার গা থেকে রিকশা করে মিরপুরের দিকে যাচ্ছি। সুন্দর বিকেল মায়া ভরা বিকেল।
সুরভি হঠাত বলল- এভাবে আমরা কতদিন ঘুরে বেড়াবো?
আমি বললাম, তুমি কি চাও?
সুরভি আমরা কি বিয়ে করবো না?
আমি পকেট থেকে একটা আংটি বের করে, সুরভি'র আঙ্গুলে পড়িয়ে দিয়ে বললাম, এনগেজমেন্ট করে রাখলাম।
সুরভি প্রচন্ড অবাক! আনন্দে তার চোখের কোনায় এক ফোটা জল ঝলমল করছিল।
আংটির ঘটনাটা হলো- আমার ভাবী আংটিটা বানাতে দিয়েছিলেন তার বান্ধবীর বিয়েতে উপহার দেয়ার জন্য। আমাকে ম্যামো দিয়ে বলেছিলেন আমি যেন বাসায় ফেরার পথে আংটিটা নিয়ে আসি।

আমি কখনও সুরভি'কে বলিনি- আমি তোমাকে ভালোবাসি। সে তার সমস্ত ভালোত্ব দিয়ে, মেধা দিয়ে, রুচি দিয়ে বুঝে নিয়েছিল- আমি তাকে কতটা ভালোবাসি। আমি বিশ্বাস করি, বারবার ভালোবাসার কথা মুখে বললে ভালোবাসার প্রকাশটা সুন্দর হয় না। আমার কথা, আমার আচার-আচরন, আমার সততা, আমার স্বচ্ছতায় যে ভালোবাসা প্রকাশ পাবে, সেটাই আসল ভালোবাসা। একদম বুকের ভেতর থেকে উঠে আসা ভালোবাসা। সুরভি টের পেয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ তো অনেক আগেই বলে দিয়েছেন- হৃদয়ের গভীর থেকে যা উঠে আসে তা অন্য হৃদয়ের গভীরে গিয়েই পৌছায় ঠিক। একদিন বিকেলে আমরা মোহাম্মদ পুরের জেনিভা ক্যাম্পে কাবাব আর লুচি খেতে গিয়েছিলাম। রেস্টুরেন্ট থেকে বের হওয়ার সময় দেখি- এক লোক রিকশাওয়ালাকে খুব মারছে। সবাই তাকিয়ে দেখছে। কিন্তু কেউ সাহায্যের জন্য সামনে এগিয়ে যাচ্ছে না। সুরভি আমার দিকে তাকিয়ে বলল- যাও, রিকশাওয়ালাকে বাঁচাও। আমি বাংলা সিনেমার নায়কের মতো সেখানে গেলাম। ভদ্রলোককে বললাম এবার থামুন, অনেক মেরেছেন। ভদ্রলোক রেগে আমাকে একটা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন। আর বললেন আমাকে চিনিস? আমি অমুক। আমি উঠে বা হাতে ভদ্রলোককে একটা থাপ্পড় দিলাম। এক থাপ্পড়েই কাজ হলো।

আমি জানি না, প্রেম কি? ভালোবাসা কি? একটা মেয়ের সাথে রাস্তায় ঘুরে বেড়ানোই কি প্রেম? বারবার তার কথা মনে পড়া বা তার জন্য অস্থির লাগাই কি ভালোবাসা? একদিন আমি আবিস্কার করলাম- সুরভি'র সাথে আমার সম্পর্কটা আসলে প্রেম ভালোবাসার'ই। আমি অন্য আর দশজনের মতো প্রেম ভালোবাসা করতে চাইনি। সুরভি আমার সবার আগে আমরা ভালো বন্ধু। তারপর প্রেমিকা বলা যেতে পারে। আমি সহজ সরল জীবন যাপন করি। আমাদের সহজ সরল সম্পর্ক। কোনো ঘোর প্যাচ নেই। একদিন আমার মনে হলো এবং খুব তীব্রভাবে অনুভব করলাম- এই মেয়েটাকে আমার সর্বক্ষনের জন্য প্রয়োজন। যে আমাকে ভালোবাসবে। যে আমাকে মঙ্গলময় সত্য পথ দেখাবে। অন্যভাবে বললে- যে আমার সব কথা খুব মন দিয়ে শুনবে, আমাকে বুঝবে, রাত দুইটায় চা বানিয়ে দিতে বললেও একটুও বিরক্ত না হয়ে হাসিমুখে চা বানিয়ে দিবে। আমার 'টুকরো টুকরো সাদা মিথ্যা' বইটি সুরভিকে উৎসর্গ করেছি। সেখানে লিখেছি-
''যদি রাত তিনটায় ঘুম থেকে ডেকে বলি,
খুব চা খেতে ইচ্ছা করছে। একটু চা বানাও তো!
একটুও বিরক্ত না হয়ে সে হাসিমুখে আমার জন্য চা বানিয়ে নিয়ে আসবে।''


যারা আগের পর্ব দু'টি পড়েন নি, তাদের জন্য।

১ম পর্ব

২য় পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৪৯
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×