‘মুক্তিযুদ্ধ’ শব্দটি বলার সঙ্গে মনে যে চিত্র ভেসে ওঠে তা হলো বড়দের মুখে শোনা গল্পগুলো। রাতের অন্ধকারে পাক বাহিনীদের নিরীহ মানুষের ওপর চালানো নির্যাতন, চারপাশে ভয় আর আর্তনাদ, নিরীহ শিশু আর মা বোনের ওপর অত্যাচার। সেই অত্যাচার থেকে সবাইকে মুক্তি দিতেই আমাদের দেশের ছেলেরা ঝাঁপিয়ে পড়ে যুদ্ধ করতে, তাদের সঙ্গে যোগ দেন নির্যাতিত নারীরাও, তাদের ত্যাগের বিনিময় এ আমরা পেলাম স্বাধীন এ বাংলাদেশ। সময়ের সঙ্গে ইতিহাস চাপা পড়ছে নতুন প্রজন্ম এর অনেকেই আমাদের ইতিহাস ভাল করে জানেন না। তাদের সবার জানা উচিত, উচিত দেশকে ভালোবাসা।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নতুন প্রজন্মের চিন্তা ভাবনা কি? তারা কতটা জানে? অথবা তাদের বুকের গভীরে মুক্তিযুদ্ধ ইতিহাস কতটা দখল করতে পেরেছে? লাল সবুজ পতাকাওয়ালা পাঞ্জাবি বা গেঞ্জি পড়াটা কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ নয়। মুক্তি যুদ্ধের ইতিহাস জানার নির্ভরযোগ্য বেশ কিছু মাধ্যম নেই। যদিও মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শীরা দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে কালের গর্ভে। আমাদের তরুণ প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা, চেতনার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। আমরা মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েই একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছি। কিছু দুষ্টলোক ইন্টারনেটে ভুল তথ্য দিয়ে প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর বেশিরভাগই ১৪ থেকে ৩৫ বছর বয়সী মানব-মানবী। তাদের কেউই মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি। ১৯৭১ সাল তাদের কাছে এক কল্পনার ইতিহাস।
বর্তমান প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য এবং ওই চেতনাকে ধারণ ও লালন করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ বছরের ইতিহাসে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের চারতলায় মুক্তিযুদ্ধ কর্নার স্থাপন করা হয়। দুঃসাহসী মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে প্রচুর বই লেখা উচিত। যুগ যুগ ধরে তরুণ প্রজন্ম এ ইতিহাস জেনে দেশকে ভালোবাসতে শিখবে।' আমাদের জীবনে ধর্ম যেমন একটা বিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে আছে ঠিক তেমনি করে আমাদের প্রজন্মের কাছে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসটাও এখন যেন একটা বিশ্বাসের ওপর হাত-পা ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নানা ধর্মে যেমন নানা রকম বিশ্বাস প্রচলিত ঠিক তেমনি আমাদের মুক্তিযুদ্ধেও যেন নানা রকম বিশ্বাস প্রচলিত হয়ে আসছে আর এমনটা হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধকে দলীয়করণ করে।
আজও অনাহারে অর্ধাহারে ধুঁকে ধুঁকে মরছে শত সহস্র বাংলাদেশি; এখনো বস্ত্রের অভাবে লজ্জা ঢাকতে পারছে না অনেকেই কিংবা শীতবস্ত্রের অভাবে বিভিন্ন স্থানে মৃত্যুর খবর ভেসে আসে পত্রিকার পাতায় কিংবা টেলিভিশনের পর্দায়; এখনো লাখো বাংলাদেশি ফুটপাতে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন; আমাদের শিক্ষাঙ্গন আজ কলুষিত, রাজনীতি, সন্ত্রাসী, দখলবাজি, চাঁদাবাজি। বেজন্মারা যতই গালমন্দ করুক যতই ভর্ৎসনা করুক, দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোরেরা দেশটাকে যতই ধ্বংসের পথে নিয়ে যাক নতুন প্রজন্ম ততই এই দেশটাকে আগলে রাখবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এই দেশটাকে গড়বে, স্বাধীনতা ও বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ সবার ঘরে ঘরে পৌঁছে দিবে। একবার শুধু তাদের সুযোগ দাও, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তাদের হাতে তুলে দাও।
আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যেন জন্ম নেয়ার পর পরই বুক ফুলিয়ে বলতে পারে, সার্থক জন্ম আমার জন্মেছি এই দেশে। নতুন প্রজন্মের একটা সমস্যা আছে- তাহলো তাদের প্রশ্নের কোনো শেষ নেই।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:৩১