পনের বিশ জন উঠতি বয়সের ছেলেরা মিলে ২/৩ জন মেয়ে ভাড়া করে ইঞ্জিন চালিত নৌকা নিয়ে বিশেষ বিশেষ দিন গুলোতে পিকনিক করতে বের হয়। কেউ কেউ বলে আনন্দভ্রমন। এ সমস্ত মেয়ে গুলোকে প্রমোদবালা যেতে পারে। আর নৌকা গুলোকে প্রমোদ তরী। মেয়ে গুলো জামা কাপড় খুলে নাচানাচি করে। এক কথায় কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি। একজন একজন করে প্রতিটা ছেলের সাথে জড়াজড়ি করে। বিকট শব্দে তখন হিন্দি গান বাজতে থাকে। এইসব প্রমোদবালারা যাত্রা পালায় অশ্লীল ভাবে নাচে। যদিও তারা নাম দেয় যাত্রা, আসলে কোনো যাত্রাপালা হয় না। হয় নগ্ন নাচ। মানুষ রাত জেগে টিকিট কেটে এই রকম নাচ উপভোগ করে।
পিকনিকের নামে নৌকায় নর্তকীদের অশ্লীল নৃত্য এখন এটা উৎসবের মতো করে পালন করা হচ্ছে। এই প্রমোদবালাদের সারাদিনের জন্য দুই হাজার টাকা দেয়া হয়। আর কেউ যদি শারীরিক সম্পর্ক করতে চায় তার জন্য আলাদা টাকা। প্রমোদবালাদের একটাই দাবী থাকে তাদের নাচ যেন ভিডিও না করা হয়। তারপরও তাদের নগ্ন করে ভিডিও করা হয়। নৌকা থাকে নদীর মাঝখানে- তখন কে কার কথা শুনে। তাছাড়া এতগুলো ছেলের সাথে দুই তিনজন মেয়ে পেরে ওঠে না। বেশির ভাগ সময়ই তাদের উপর অনেক শারীরিক অত্যাচার করা হয়। মেরে তাড়িয়ে দেয়া হয়। তারা তাদের ন্যায্য পারিশ্রমিকটুকুও পায় না। দরিদ্র অসহায় মেয়েরাই এই লাইনে আসে। সমাজ তাদের চাকরি দিতে পারে। বেঁচে থাকার জন্য তারা এই পেশায় আসতে বাধ্য হয়। যদিও দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে।
নৌকা গুলো খুব সুন্দর করে সাজানো হয়। প্রতিটি নৌকা সামিয়ানা দিয়ে ঘিরে রাখা হয়। নৌকায় মাইক কিংবা সাউন্ড বক্স লাগানো হয়। দিনভর এ সকল নৌকায় উঠতি বয়সী যুবক কিংবা মাঝ বয়সী নারীদের নিয়ে বেহায়াপনা করে থাকে। জুয়াড়ির দল অবাধে জুয়া খেলে। বিশেষ করে নদী পারের ছেলেরা এই ভ্রমনও সবচেয়ে বেশি এগিয়ে। আমি নিজের চোখে তূরাগ নদী, বালু নদীসহ নারায়নগঞ্জ, গাজীপুর, ফরিদপুর ইত্যাদি জায়গায় এই নৌকা ভ্রমন দেখেছি। এখন এই নৌকায় পিকনিক সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে আরও থাকে ইয়াবা, ফেন্সিডিল, বিয়ার, গাঁজা সহ নানা রকম মাদক। পুলিশ মাঝে মাঝে এদের খুব আগ্রহ নিয়ে ধরে, টাকার বিনিময়ে পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
আরেক দল আছে বর্ষা মৌসুমে নৌ বনভোজনের নামে স্কুল-কলেজপড়ুয়া ছেলেরা মনোরঞ্জনের জন্য যাত্রার নর্তকী ও নিষিদ্ধ পল্লীর মেয়েদের দিন চুক্তিতে ভাড়া করে। কিছু দুষ্টলোক নাটোর, কুষ্ঠিয়া, টাঙ্গাইল থেকে অর্ধ শতাধিক যাত্রার নর্তকীসহ নিষিদ্ধ পল্লীর মেয়েদের এনে অসামাজিক কাজে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ভাড়া দিচ্ছে। যারা এই কুকর্মের পেছনে আছে- তারা বুক ফুলিয়েই বলে- প্রশাসন ম্যানেজ করেই এই কাজ পরিচালনা করি। প্রতিদিনই চাটমোহরের ছাইকোলা, মির্জাপুর, বওসা, নুরনগর ঘাট, ভাঙ্গুড়ার অষ্টমনিষা, রুপসী ঘাট, মেন্দা, ভাঙ্গুড়া এবং ফরিদপুরের বিভিন্ন ঘাট হতে পিকনিক অথবা বিনোদন ভ্রমণের নামে নৌকা ভাড়া করা হয়। এই সব প্রমোদবালাদের জন্য আমার খুব মায়া হয়। কিন্তু আমার কিছুই করার ক্ষমতা নেই। আহ কি কষ্টের জীবন তাদের!
যাদের একটু বেশি টাকা আছে তারা ছোট ছোট লঞ্চ গুলো ভাড়া নিয়ে চলে যায় মধ্য নদীতে। এসব লঞ্চে বেশ কিছু কেবিন আছে। প্রতিটা কেবিনে একটা করে মেয়ে আছে। একজন একজন করে ছেলে কেবিনে ঢুকে। এই সমস্ত মেয়ে গুলোর জন্য আমার খুব মায়া হয়। কিন্তু আমি তাদের জন্য কিছুই করতে পারি না। মেয়ে গুলোও নিজের দেহ বিক্রী করেও পর্যাপ্ত টাকা পায় না। আর যারা এই পিকনিকের আয়োজন করে তারা লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
এই উঠতি বয়সের ছেলে গুলো মানসিক ভাবে যৌন বিকৃতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। নদী পাড়ের গ্রাম গুলোতে ভয়াবহ সামাজিক অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ দণ্ডবিধি আইনে ২৯৪ এর খ ধারায় ও উপধারা ক'তে এইসব অশ্লীলতায় কঠিন শাস্তির কথা বলা হয়েছে। মহামারি আকারে এই প্রমোদ ভ্রমন ছড়িয়ে পড়ার আগেই সরকারের ব্যবস্থা করা উচিত।
(এইসব নোংরা নাচ আর গানের কিছু ভিডিও ইউটেব এ আছে। নাচ গুলো এতটাই নোংরা যে আমি সামুতে লিংক দিলাম না।)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:১৩