বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। সবাইকে সালাম ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমার আজকের পোস্ট। আমি দীর্ঘ দশ বছর সামুর সাথে আছি। প্রথম দুই বছর রেজিট্রেশন করি নাই। ব্লগে আসতাম, লেখা পড়তাম, চলে যেতাম। কাজেই দশ বছর না বলে আট বছর বলা ভালো। সামু ব্লগে অনেক উত্থান পতনের সাক্ষী আমি। ফেসবুকের চেয়ে বেশি আকর্ষণ করে সামু ব্লগ। ব্লগ হলো এক ধরনের নেশা। তবে অবশ্যই ভালো নেশা। কত ব্লগার রাগ-অভিমান করে সামু থেকে চলে গেছে। আবার কত নতুন ব্লগার জয়েন করেছে তার হিসাব রাখলে- চমকে যেতে হতো। সামু ব্লগে ব্লগিং করে অনেকে হিরো হয়েছেন। এক সময় তাদের কেউ চিনতো না। ঘটনা চক্রে এদের সবাইকে আমি চিনি। যদিও তারা আমাকে চিনেন না। কয়েক বছর আগের কথা- একটা পত্রিকা অফিস একদিন এক অনুষ্ঠানে- নামকরা পাঁচ জন ব্লগারকে আমন্ত্রন জানায়। (যখন ব্লগারদের কুপিয়ে মারা চলছিল)। সেই অনুষ্ঠানে আমার দায়িত্ব ছিল ছবি তোলা। সেই পত্রিকাতে তখন আমি ফোটোসাংবাদিক হিসেবে কাজ করি।
'আমার ব্লগ' নামে একটা ব্লগ ছিল। (এখন আছে কিনা আমি জানি না, জানতে চাইও না) সামু থেকে রাগ করে অনেকে এই 'আমার ব্লগ' এ জয়েন করেছিল। আবার এই 'আমার ব্লগ' থেকে সামু ব্লগে অনেকে এসেছেন। 'আমার ব্লগ' এর ব্লগাররা সর্ব প্রথম ব্লগে অশ্লীল ভাষার ব্যবহার শুরু করে। সে যাই হোক, সেই সময় আরও অনেক ব্লগ ছিল- কিন্তু তারা উপরে উঠতে পারেনি। অনেক ব্লগ তো বন্ধই হয়ে গেছে। অনেক ঝড় ঝাপটার পরে আআমদের সামু টিকে আছে। এবং আমার বিশ্বাস আজীবন টিকে থাকবে। দুষ্ট উদ্যেশে যে ব্লগ গুলো খোলা হয়েছিল- সেসব আজ হারিয়ে গেছি। সেই ব্লগ গুলোর নামও আজ মনে নেই। কিছু ব্লগার ছদ্মনাম ব্যবহার করে ব্লগের পরিবেশ নষ্ট করতো পরিকল্পিত ভাবে। এবং আমি বলব, তারা বেশ সফলও হয়েছিল। আমার ধারনা দূর থেকে বসে তথাকথিত 'বস' কলকাঠি নাড়তো। প্রচুর টাকাও হয়তো খরচ করতো।
এখন পর্যন্ত প্রায় ১৬ টা ব্লগ বেশ ভালো ভাবে টিকে আছে। একসময় আমার খুব ইচ্ছা করছিল- নিজেই একটা ব্লগ খুলে ফেলি। আমার মতে এখনও ব্লগে কিছু সংকট আছে। অবশ্য সেটা বলার সময় এখন নয়। সে যাই হোক, 'সামহোয়ার ইন' ব্লগ-এর পরিচালনাকারী সৈয়দা গুলসান ফেরদৌস জানা আপাকে এক আকাশ ধন্যবাদ জানাই। আমার দুঃখ-কষ্ট-হাসি-আনন্দের সব কথা তার ব্লগে মন খুলে লিখে হালকা হই। ব্লগে কিছু লেখার পর বিপুল আনন্দ পাই। নিজের চিন্তা ভাবনা সকল ব্লগারদের সাথে শেয়ার করার আনন্দ- অনেক বড় আনন্দ। আমি অনুভব করি- সামু ব্লগটা আমার রক্তের সাথে মিশে গেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই পত্রিকা পড়ি না, আগে সামু খুলি। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একবার সামুতে চোখ বুলিয়ে নিই। আমার বিশ্বাস ভদ্র রুচিশীল ব্লগাররা প্রগতিশীল ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মানের সম্ভাবনাকে অনেকদূর এগিয়ে নিবে। একজন ব্লগারের মুখে যখন শুনি, ব্লগার মানে হল নতুন প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা- তখন খুব ভালো লাগে। আনন্দ হয়। মনের গোপন হতাশা অনেকখানি কেটে যায়।
নতুন ব্লগারদের উদ্যেশে আমি বলতে চাই- চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই। কাজেই ব্লগে সব লিখে ফেলুন। মন খুলে লিখুন। একজন ব্লগার তার লিখনীর দ্বারা বহুল জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারে। আমি নিশ্চিত ৫টি ভাল পোস্ট পড়লে আপনি একটি ভাল পোস্ট লেখার উপাদান পাবেন। কাজেই প্রচুর পড়ুন আর লিখুন। আমার তো খুব ইচ্ছে করে লিখে লিখে পৃথিবীটা বদলে দেই।
'ধান ভানতে শিবের গীত' গাওয়ার মতো ব্যাপার হয়ে গেল। কি লিখতে গিয়ে কি লেখা শুরু করলাম। আমি দুঃখিত। বেশ কিছুদিন ধরে ইচ্ছা করছে- সামুর ১০ জন শ্রেষ্ঠ ব্লগারের তালিকা করি, একদম নিরপেক্ষ ভাবে। আমার মতে সামুর একজন শ্রেষ্ঠ ব্লগার 'চাঁদগাজী। আমি তার সম্পর্কে কিছু জানি না। বা সে দেখতে কেমন তাও জানি না। ব্লগে ছবির জায়গায় সে একটা ট্রাকটরের ছবি দিয়ে রেখেছে। তবে ব্লগ থেকে জানতে পেরেছি তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং প্রবাসী। তার প্রতিটি পোষ্ট, ব্লগ লিখতে আমাকে অনুপ্রাণিত করে। রাজনীতিবিদরা যে কথা বলেন না, কিন্তু 'চাঁদগাজী' সাহেব অনায়াসেই বলেন- ''শিক্ষা, টেকনোলোজী, সামাজিক অর্থনীতি ও রাজনীতি জাতিকে এগিয়ে নেবে।'' তার আর একটি কথা আমার খুব ভালো লাগে। কথাটি আমাকে সাহস যোগায়, হতাশায় কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। কথাটি হলো- ''সম্পদহীনদের জন্য শিক্ষাই সম্পদ''। আসলেই তো তাই! আমার ইছা করে তার এই কথাটি সারা বাংলাদেশ ছড়িয়ে দেই। খুবই দামী কথা। গুরুত্বপূর্ণ কথা।
''চাঁদগাজী'' সাহেবের প্রতিটা পোষ্ট মৌলিক। আমার ধারনা তিনি একজন অভিজ্ঞ লোক। তারপর প্রচুর পড়াশোনা। তার পোষ্ট গুলো পড়লে বুঝা যায়- তিনি দেশ নিয়ে খুব ভাবেন, দেশকে খুব ভালোবাসেন। দেশের মানূষের জন্য তার এক আকাশ মায়া। তিনি সহজ সরল ভাষায় খুব সুন্দর লিখেন। তিনি শুধু সমস্যার কথা লিখেন না। সমাধানের কথাও লিখেন। তিনি সব রকমের পোষ্ট পড়েন এবং মন থেকে মন্তব্য করেন। আমি এক হাজার টাকা বাজি রেখে বলতে পারি- পুরো সামু ব্লগে তার মতো সুন্দর করে আর কেউ মন্তব্য করতে পারেন না। তার মন্তব্যের মধ্যে একধরনের হালকা খোঁচা থাকলেও, একটা ভালো লাগা কাজ করে, একটা আনন্দও কাজ করে। দুষ্ট ব্লগারদের তিনি সঠিক মন্তব্য করে শিক্ষা দেন। তিনি নতুন ব্লগারদের খুব উৎসাহ দেন, পরামর্শ দেন- এই ব্যাপারটা আমার খুব ভালো লাগে। তিনি ৪ঠা জানুয়ারী ''১৯৭২ সালের পর থেকে ছাত্রলীগ জাতির বিশাল ক্ষতি করে চলেছে'' নামে একটা পোষ্ট দেন। আবার ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭ তে একটা পোষ্ট দেন ''নিরপেক্ষ নির্বাচন করে শেখ হাসিনাকে ইতিহাস গড়তে হবে'' শিরোনামে। ৪ ডিসেম্বর তিনি ''প্রতিটি বাংগালী মাতৃভুমির জন্য আরো বেশী অবদান রাখতে চান!'' নামে একটি পোষ্ট দেন। সামু ব্লগে তিনি কখনও ফালতু বা অপ্রয়োজনীয় পোষ্ট করেন না। তারা প্রতিটা লেখা গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়োপযোগী। সবচেয়ে বড় কথা কম করে হলেও তিনি প্রায় চল্লিশ হাজার মন্তব্য করেছেন। এত মন্তব্য সামুতে আর কেউ করেনি।
'চাঁদগাজী' ভালো থাকুক, সুস্থ থাকুন। ভালো থাকুক, সুস্থ থাকুক প্রতিটা ব্লগার। সব ব্লগারের জন্য এক আকশ শুভ কামনা। জয় বাংলা।
(দ্বিতীয় পর্ব আগামীকাল)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:৫০