somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

ধাবমান কালো চোখে আলো নাচে- ১৪ (ধারাবাহিক উপন্যাস)

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কেউ কি কোথাও আছো? থাকলে কথা বলো, আমার সাথে কথা বলো। কে আছো ওই মহাশূন্যে? ঈশ্বর বা সর্বময় সর্বশক্তিমান কেউ- আমার দিকে তাকাও। অন্তত একটু আভাস দাও আমায়। তুমি যে আছো, আমায় বুঝতে দাও। আমি কাউকে কিচ্ছু বলব না। শুধু একটিবার, মাত্র একটিবার চুপি চুপি আমায় দেখা দাও। আমি একা, বড় একা। খুব নিঃসঙ্গ একজন। মৃত্যুর আগে একটিবার তোমার অস্তিত্বের উৎস আমাকে উপলব্দি করতে দাও ....
শীতের মধ্যরাত। চারপাশে ঘুমন্ত নগরী। শশীভূষন কুয়াশা মাখা আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজের মনের গোপন কথাগুলি বলছে। এটা তার অনেক দিনের অভ্যাস।

যুবক বয়সে একবার শশীভূষন তার স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করে আত্মাহত্যা করতে চেয়েছিল। তখন তার মেয়ে অলকার বয়স মাত্র চার বছর। সত্যি সত্যি আত্মহত্যা করবার জন্য তিনহাত দড়ি নিয়ে একটা তেতুল গাছের শক্ত মজবুত ডালে উঠে বসে ছিল। শশীভূষনের পড়নে ছিল একটা সবুজ ফতুয়া, ধুতি আর কাঁধে গামছা। ধুতিটা বেশ ময়লা এবং পুরোনো। কিছুক্ষন পর তো সে মরেই যাবে তাই গাছের ডালে বসে আরাম করে একটার পর একটা বিড়ি খাচ্ছে। চারদিক খুব বেশি নির্জন এবং অন্ধকার। তার মনে হচ্ছে মৃত্যু মানেই অপার শান্তি। আর বেঁচে থাকা মানেই অপার দুশ্চিন্তা। কেন যে সে আরও আগে মরেনি এই ভেবে তার রাগ লাগছে এখন। বেঁচে থাকতে কত কি যে লাগে তার ইয়ত্তা নেই। চাকরি করো, বাজার করো, সামাজিকতা রক্ষা করো, মেয়েকে স্কুলে দিয়ে আসো, বউ বাচ্চাকে নিয়ে বেড়াতে বের হও। বউ এর হাজারটা চাহিদা পূরন করো। পূজোয় নতুন জামা কিনো, নানান জনের কটু কথা সহ্য করতে হয়। কাজেই বেঁচে থাকলে নানান বায়নাক্কা সহ্য করতে হয়। মরে যাও, সব সমস্যার সমাধান।

তার বউ লতা বড্ড দজ্জাল মেয়ে। একটা দিন শান্তি দেয় না। শিব ঠাকুর মেয়েদের শরীরের শক্তি দেয় না কিন্তু গলায় খুব জোর দেয় পুরুষের শান্তি নষ্ট করার জন্যে। আর গলার জোর শশীভূষনের একেবারেই নেই। ঝগড়ার সময় শশীভূষন কিছুক্ষন বলে ক্ষান্ত দেয় কিন্তু লতার গলা চলতেই থাকে, চলতেই থাকে। তার ইচ্ছা মাঝে মাঝে করে লতার গলা টিপে ধরতে। সে ভদ্রলোক না হলে কবেই লতাকে গলা টিপে মেরে ফেলতো। শশীভূষন শুনেছে তার শ্বাশুড়িও নাকি এমন দজ্জাল ছিল, খুব চিৎকার চেচামেচি করতো। যখন সামনে কাউকে পেত না, তখন জানালা খুলে রাস্তার মানূষদের সাথে গলাবাজি করতো। দিনের পর দিন কটু বাক্য শুনতে শুনতে শশীভুষনের বুকটা ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। ব্যাপারটা সহ্যের বাইরে চলে গেছে। এই সমাজে লতার মতোন কিছু নারী আছে তাদের কথা তীরের মতো এসে বুকে বিঁধে। তারপর সারা শরীরে জ্বালা ধরিয়ে দেয়। শশীভূষন বিড়িটা ফেলে দিয়ে আবার নতুন করে আরেকটা বিড়ি ধরালো। বিড়ি খেতে আজ বেশ লাগছে। আজ মরে যাবে বলে পুরো এক পেকেট কিনেছে। সাথে একটা ম্যাচ বাক্স।

গাজীপুরের এই জংলে একসময় অনেক শেয়াল দেখা যেত। হরিণও নাকি ছিল। এখন এসব কিছুই নেই। থাকলে ভালো হতো তাহলে তাকে গলায় দড়ি দিয়ে মরতে হতো না। শেয়াল আর নেকড়ে তাকে খুবলে খুবলে খেত। এই জঙ্গলটা আর আগের মতো নেই। যে যার ইচ্ছে মতো গাছ কেটে নিচ্ছে। জঙ্গলটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা হয়ে গেছে। শশীভূষন মাথা বাঁকা করে আকাশের দিকে তাকালো। আজ কি চাঁদ উঠবে না? এই ঘুটঘুইটা অন্ধকারের তাকে ফাঁস নিতে হবে? বিড়ি খেতে তার অভ্যাস নেই। খুব কাশি আসছে। বার কয়েক কেশে নিল সে। বেসুরে গলায় দুই লাইন গান গাইল- 'আক্কলে খাইছে মাটি, বাপে-পুতে কামলা খাটি''। কিছুক্ষন পর সে মরে যাবে, জীবনটা চলে যাবে। আরেকটা বিড়ি ধরিয়ে সে তার স্ত্রী লতার কথা ভাবলো। তার মৃত্যুর পর এত তেজ দেখাবে কার কাছে মাগী? মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদবে, কাঁদুক কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাক। তাই তো শশীভুষন চায়। তবে তার বাচ্চা মেয়েটার জন্য বুকটা খুব টনটন করবে। মাত্র চার বছর বয়সে সে তার বাবাকে হারাবে। রাতে বাবার গলা জড়িয়ে ধরে ঘুমায় অলকা। থাক, মায়া বাড়িয়ে আর লাভ নাই। লতাকে শিক্ষা দেয়ার জন্য অন্য আর কোনো পথ নেই।

ঠিক এই সময়ে এই পথ ধরে এক সাধু যাচ্ছিল। শশীভূষনকে দেখে বলল- কে বাবা তুমি? এত রাতে গাছে উঠে বসে আছো? হাতে আবার দড়ি? ঘটনা কি?
শশীভূষন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। নিশ্চিন্তে মরতে এসেছিল, মরতে গিয়েও ঝামেলা হচ্ছে। পোড়া কপাল আমার! আজকাল আর নিরিবিলি জায়গা খুঁজে পাওয়া যায় না। ঠিক মরার সময় উটকো এক সাধু এসে হাজির। কি মতলব কে জানে! শশীভূষন বিড়িতে লম্বা টান দিয়ে সাধুর দিকে তাকালো। অন্ধকারে সাধুর হাবভাব কিছুই ঠাহর করা যাচ্ছে না। সাধু আবার প্রশ্ন করলো- মরতে চাইলে তো মরার অনেক পথ আছে। গলায় দড়ি দিয়ে কেন? ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দাও, দুর্গাপুরের পাহাড় থেকে লাফিয়ে নিচে পড়তে পারো অথবা এক বোতল ফিনাইল খেয়ে নাও। শুধু শুধু গাছটাকে কষ্ট দিবে কেন বাবা? তারপর মানূষ এসে এই নিঃষ্পাপ গাছটাকে অভিশাপ দিবে। শশীভূষন মনে মনে ভাবল, সাধুটিকি তাকে বাঁচাতে চেষ্টা করছে। এখন হয়তো তাকে কোনো উপদেশ-টুপদেশ দিবে। সাধুর উপদেশে কাজ হবে না। আজ তাকে মরতেই হবে। লতা মাগীকে শিক্ষা দিতে হবে।

শশীভূষন হাতের বিড়িটা সাধুর পায়ের কাছে ফেলে বলল, কোথা থেকে আসলেন? বিড়ি টিড়ির বদ অভ্যাস আছে?
সাধু বলল, আমাদের কোনো কিছুতেই মানা থাকতে নেই।
খাবেন নাকি একটা?
সাধুটি হাত বাড়ালো। শশীভূশন বিড়ি আর ম্যাচ বাক্স এগিয়ে দিল।
সাধু বিড়িতে লম্বা একটা টান দিয়ে বিড়বিড় করে যেন কি বলল।
শশীভূষন মনে মনে ভাবলো বিড়ির মতো জিনিস আর হয় না। মুহূর্তের মধ্যে অনেকখানি দূরত্ব ঘুচিয়ে দেয়। দু'জন অপরিচিত লোককে বন্ধু বানিয়ে দেয়।
সাধু বিড়িটি শেষ করে শশীভূষনের দিকে তাকিয়ে বলল- তুমি কেন মরতে এসেছে?
দুনিয়াজুড়ে মানুষের দুঃখের শেষ আছে?
তোমার দুঃখটা কি?
আমার বঊ আমাকে বড় কটু কথা কয়।
তুমি কেমন পুরুষ মানুষ হে, বউ এর কারনে মরতে এসেছো! বউ কেন তোমাকে আজেবাজে কথা বলে? সাধু সামান্য হেসে বলল, বউ এর রাগটাই দেখলে ভালোবাসাটা দেখলে না। আচ্ছা, তুমি মরলে তোমার বউ এর লাভটা কি?
তুমি তাকে চিনো না সাধু বাবা। সে বড় কঠিন নারী। মুখে একটুও মধু নেই। সারা শরীরে আছে বিষ।
সে কি তোমাকে কখনও দুই একটা মধুর কথা বলেনি? আরে বাছা রেগে গেলে সকলেই দুই একটা বেফাঁস কথা বলে, তাতে দোষের কিছু নেই।
শশীভূষন সামান্য রাগ দেখিয়ে বলল- আমি মরে মাগীকে একটা শিক্ষা দিব। মাগি মাটিতে গড়াগড়ি করে কাঁদবে। তাতেই আমার বড় সুখ হবে।
সাধু বলল, তার মানে সে কেঁদে সুখ পায় আর তুমি কাঁদিয়ে? মাথা গরম করো না। তোমার বউ তোমাকে ভালোবাসে। দেখে গিয়ে এতক্ষনে তোমাকে খুঁজে খুঁজে হয়রান হচ্ছে।
শশীভূষন বলল, সাধু বাবা তুমি আমার মত ঘুরাবার চেষ্টা করো না। আজ আমাকে মরতেই হবে।
সাধু বলল- মরাটা গুরুত্বপূর্ণ কিছু না। বেঁচে থাকাটাই আসল।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:১৪
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×