মনে হয় আমি বেশি দিন বাঁচবো না। শুনেছি মৃত্যুর আগে মানুষ খাবারের কোনো স্বাদ পায় না। আমি ইদানিং কোনো খাবারের স্বাদ পাচ্ছি না। বাসায়- হোটেলে, আত্মীয় স্বজনের বাসায়। সব কিছুই কেমন মাটি মাটি লাগে। সুরভি'র রান্নার বেশ নামডাক আছে। ইদানিং তার রান্নাও আমার কাছে ভালো লাগে। বেচারি মন খারাপ করে। সুরভি যেন মন খারাপ না করে, আমি এমন ভাব দেখাই তরকারি খুব মজা হয়েছে। এক আকাশ আগ্রহ দেখিয়ে বলি- আমাকে আরেক চামচ দাও। সুরভি আমার অভিনয় ধরে ফেলে। গত তিন মাসে প্রায়'ই রাতে না খেয়ে ঘুমিয়েছি। তাতে একটা উপকার হয়েছে- ওজন কমেছে। যদিও আমি মোটা না। যাই হোক, এখন হুট করে মরে গেলে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়বে সুরভি।
স্ট্রোক জিনিসটা কি?
স্বপ্নে দেখি স্ট্রোক করে মরে গেছি। তিন মাস ধরে শুধু স্বপ্নে দেখি আমি মরে গেছি। রাতে ঘুম ভালো হয় না। তন্দ্রার মতো একটু আসে তখনই বিকট সব দুঃস্বপ্ন দেখি। খুন, রক্ত, একসিডেন্ট। মৃত আত্মীয়স্বজন। স্ট্রোক করাটা আজকাল ডাল ভাত হয়ে গেছে। গতকাল খবর পেলাম আমার এক বন্ধু স্ট্রোক করে মরে গেছে। বয়স মাত্র ত্রিশ। সকালে নয়টায় অফিসে গেছে। নিজের টেবিলে বসেই কাজ করছিল। বেলা বারোটায় স্ট্রোক করে মরে গেল! আমারও মনে হয় এরকম কিছু হবে। মৃত্যুতে আমি ভয় পাই না। মরতে তো হবেই। কিন্তু জীবনের শখ আহ্লাদ কিছুই পূরন করতে পারলাম না। খুব শখ ছিল সুরভিকে নিয়ে আমস্টারডাম যাবো, বালি যাবো, গ্রান্ড ক্যানিয়ন যাবো।
সব চেয়ে বড় সত্য হলো- মানুষের মৃত্যু কোনো ঘটনাই না। ঘর থেকে বের হলে যে কোনো সময়, যে কেউ মরে যেতে পারে। নিজের চোখে দেখলাম- আজ সকালে মগবাজার মোড়ে এক বয়স্ক মহিলা বাসে উঠতে গিয়ে বাসের চাকার নিচে চলে গেল। ভয়াবহ অবস্থা। দোষটা বাস ড্রাইভারের। লোকজন ধাক্কাধাক্কি করে বাসে উঠছে কিন্তু বাসওয়ালা বাস থামায়নি। কখনও থামায়ও না। এভাবেই আমাদের প্রতিদিন দৌড়ে দৌড়ে বাসে উঠতে হয়। বয়স্ক মহিলা বাসের সাথে তাল মিলাতে পারেনি। মুহূর্তে রক্তে ভেসে গেল চারপাশ! কয়েক মাস আগের কথা বলি- তখন মৌচাক মগবাজার ফ্লাইওভারের কাজ চলছিল পুরোদমে। আমি অফিস শেষ করে হেটে হেটে বাসায় ফিরছি। হঠাত মৌচাক মোড়ে কয়েক মন ওজনের একটা লোহার খন্ড আমার একহাত দূরে দাপাশ করে পড়লো। আর এক পা আমি সামনে বাড়ালেই মোটা রোডের খন্ডটা আমার মাথার উপরে পড়তো। মুহূর্তের মধ্যে আমার মাথা থেতলে আমি মরে যেতাম। কাজেই ঘর থেকে বের হলে যে কোনো সময় মৃত্যু হতে পারে।
একদিন আমার মৃত্যুর সংবাদ প্রচার করা হবে সারা শহর জুড়ে। কাজেই যদি কোনো কারনে মরেই যাই- তাই আপনাদের কাছ থেকে আগেই বিদায় নিয়ে রাখতে চাই। আসলে দীর্ঘদিন ধরে ব্লগে থাকতে-থাকতে আপনারা আমার আত্মার আত্মীয় হয়ে গেছেন। একসময় ম্যাট্রিক পরীক্ষার সময় পরীক্ষার্থীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মুরব্বিদের সালাম করতো আর দোয়া চাইতো। আমি যদি হুট করে মরেই যাই- তাই আগে ভাগে আপনার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলাম। অনেক সময় ব্লগে কঠিন মন্তব্য করেছি। অনেকের মন্তব্যের উত্তর দেইনি। নানান ভাবে অনেক ব্লগারকে হয়তো কষ্ট দিয়েছি। যে কনো লেখার সাথে অকারনেই নিজের ছবি দিয়ে আপনার বিরক্ত করেছি। তাই আমার সকল ভুল কর্মকান্ডের জন্য আমি ক্ষমাপ্রারথী। দয়া করে আমার কথা গুলো সস্তা আবেগের কথা ভেবে উড়াইয়ায়া দিবেন না। আপনারা সকলে ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। জয় বাংলা।
রবীন্দ্রনাথ দিয়ে শেষ করি-
সব তর্ক হোক শেষ ,
সব রাগ সব দ্বেষ ,
সকল বালাই ।
বলো শান্তি , বলো শান্তি ,
দেহ-সাথে সব ক্লান্তি
পুড়ে হোক ছাই ।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:০৪