somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

শঙ্খ

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সে ঘুমাচ্ছে। আরাম করে ঘুমাচ্ছে। তার মন নেই, নেই বিবেক। আছে শুধু একটা লম্বা শরীর, সাথে আছে চোখ, জিভ। ঘুমানোর আগে ইচ্ছে মতোন খেয়েছে। কেউ তাকে খাবার সংগ্রহ করে দেয়নি। নিজের খাবার নিজকেই সংগ্রহ করতে হয়েছে। শীতের সময় তার ঘুম ভালো হয়। গরমে বড্ড কষ্ট। আর বর্ষাকালে তার ঘরে পানি ঢুকে যায়। তখন নতুন ঘরের সন্ধান করতে হয়। খুব ক্ষধা না পেলে তার ঘুম ভাঙ্গে না। তার ঘুমের জায়গাটা গভীর অন্ধকার। অন্ধকার ছাড়া সে ঘুমাতে পারে না। সবচেয়ে বড় কথা অন্ধকার তার কাছে সবচেয়ে নিরাপদ মনে হয়। মাটির নিচের অন্ধকার এর তুলনা হয় না। তবে বর্ষাকালে মাটির নিচে মোটেও নিরাপদ নয়। আজকাল বাইরে বের হলেই সারাক্ষন ভয় কাজ করে। ক্ষুধার চেয়ে ভয়টাই বেশি।

ব্যাঙ আর ইঁদুর তার প্রিয় খাবার। একেবারে সহজলভ্য। ব্যাঙ যখন বাঁচার লক্ষ্যে জোরে লাফ দেয় তখন সে শূন্য থেকে ব্যাঙটাকে মুখের মধ্যে পুড়ে নেয়। মাটিতে লম্বা গর্ত করে ইঁদুর সেখানে তার পরিবার নিয়ে থাকে। ক্ষুধা পেলে সে হুট করে ইঁদুরের গর্তের ভেতর ঢুকে পড়ে। তারপর একটু একটু করে পেটে চালান করে পুরো পরিবারটিকে। মোটেও সুখকর কিছু না। আস্ত জিনিস গিলতে তার খুব কষ্ট হয়। বেশ বেগ পেতে হয়। যেন দম বন্ধ হয়ে আসে। ইঁদুর আর ব্যাঙ যত'ই সর্তক থাকুক তার কাছে হার মানতেই হয়। লম্বা ঘুমের আগে খাবার সংগ্রহের জন্য সে বের হয়। অলৌকিক ক্ষমতা তার আছে। সে ঠিকই বুঝে কোনটা তার খাবার, কোনটা নয়। চাঁদের আলো আর আর শীতের বাতাস তাকে চিনিয়ে দেয় উত্তর দক্ষিন। যখন সূর্য হেলে পড়ে দক্ষিনে তখন তার শরীর ঠিকই বুঝে নেয়। বেশির ভাগ সময়ই তাকে আত্মগোপন করে থাকতে হয়। মানুষই তার সবচেয়ে বড় শত্রু। তার পরিবারের অন্য সদস্যদের এই মানুষরাই পিটিয়ে মেরেছে, পুড়িয়ে মেরেছে, এমনকি আস্ত ইট দিয়ে মাথা থেতলে পর্যন্ত দিয়েছে। একমাত্র তার পরিবারের মধ্যে সে'ই বেঁচে আছে। যদিও তার মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে প্রতিশোধ নিতে।

তার রাতের আহার শেষ। সে ঘরে ফিরছে। এমন সময় তার পথে আজিজ মাস্টার বাঁধা সৃষ্টি করলো। লোকটা এখনও তাকে দেখতে পায়নি। সে ইচ্ছা করলে একটুখানি বিষ আজিজ মাস্টারের গায়ে দিয়ে দিতে পারে। মুহূর্তের মধ্যে বুক দাপড়ে মরে যাবে। বিষের আঘাতে মুখ দিয়ে ফেনা বের হয়ে যাবে। আজিজ মাস্টারের শালা তার ভাইটিকে পিটিয়ে মেরেছে স্কুল মাঠে। কিন্তু সে আজিজ মাস্টারকে ছোবল দিবে না। তার মনে আছে গতবার বর্ষায় সে আজিজ মাস্টারের বৈঠকখানার ঘরের চালায় আশ্রয় নিয়েছিল, কেউ তাকে বিরক্ত করেনি। বর্ষা শেষ হওয়ার কয়েকদিন আগে সে ধরা পরে গেল আজিজ মাস্টারের বউ লতার কাছে। ভয় পেয়ে সে ফণা তুলে প্রস্তুত হয়েছে শেষ লড়াই এর জন্য। লতা বড় ভালো মানূষ। তাকে মারেনি, কাউকে জানায়নি, একটুও আঘাত করেনি বরং চলে যেতে সময় দিয়েছিল। তার সব মনে আছে। তাই আজ সে আজিজ মাস্টারকে দেখে পথে ছেড়ে গাছের কোনায় সরে গেল।

আজিজ মাস্টার চলে যাবার পর সে গভীর মাটির তলদেশে তার ঘরে গেল। সমস্ত শরীর জুড়ে আলস্যভর করেছে। তার ঘরে ভয়াবহ অন্ধকার। কিছুই দেখা যায় না। অবশ্য দেখার দরকারও নেই। সে তার জিভ বের করলেই সব কিছু টের পেয়ে যায়। বিশেষ করে বিপদ। গলা থেকে পেটে নেমেছে ইঁদুর আর ব্যাঙ কিন্তু এখনও হজম হয়নি। তার এখন ঘরে থাকতে ইচ্ছা করছে। নিজেকে বড় একা লাগছে। সে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তার ঘর থেকে বের হলো। ততক্ষনে আকাশ ফরসা হতে শুরু করে দিয়েছে। সে এলোমেলো অনেকক্ষন ঘুরে বেড়ালো। তার কিছুই ভালো লাগছে না। শরীর অন্য কিছু চাইছে। মাটির পথ দিয়ে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা দলবেঁধে স্কুলে যাচ্ছে। ছোট ছোট বাচ্চাদের কি সুন্দর মসৃন পা। যদিও তার কোনো সৌন্দর্যবোধ নেই। আজিজ মাস্টারের মেয়ে রুপা তার সামনে দিয়েই মাত্র'ই খালি পায়ে হেটে গেল। আর একটু হলে তার নরম গায়ে পা বসিয়ে দিত। রুপা মেয়েটা একটা গেছো মেয়ে, ভাব্লো সে মনে মনে।

সাপটা বালাসুর গ্রাম পেরিয়ে একটা ঘাসজমির কাছে এসে থামল। এক রাখাল ছেলে কয়েকটা গরুকে ঘাস খাওয়ার জন্য মাঠে ছেড়ে দিয়েছে আর সে বসে আছে একটা পেয়ারা গাছের সবচেয়ে উঁচু ঢালে। এখানেই আজিজ মাস্টারের মেয়েটা মাঝে মাঝে আসে রাখাল ছেলেটার কাছে। দু'জনের বেশ ভাব। নানান গল্প করে তারা। এব্যাপারে তার কোনো মাথা ব্যথা নেই। আজ তার খোলস ছাড়ার দিন। একটু একটু করে সে তার খোলস বের করছে। বড় যন্ত্রনা। বড় কষ্ট। প্রায় এক ঘন্টার চেষ্টায় সম্পূর্ণ খোলস বের করতে সে সক্ষম হলো। এখন সে গভীর কামার্ত অবস্থায় আছে। সে পাগলের মতো ছুটছে। শুধু ছুটছে। তার মনে কোনো প্রেম নেই, ভালোবাসা নেই। শুধু আছে বীজবপনের অস্থিরতা। ফোস ফোস করে বারবার সে গরম শ্বাস ফেলছে। তার সমস্ত ঘ্রান শক্তি দিয়ে সে নারীসাপ খুঁজছে। এই মুহূর্তে নারী সাপকে আলিঙ্গন না করতে পারলে তার শান্তি নেই।

সূর্যটা যখন ঠিক মাথার উপর তখন'ই সে অকস্মাৎ তার দেখা পেয়ে গেল। গন্ধ শুকে শুকে একবারে তার কাছে চলে এলো। পূর্ব পরিচয় নেই। তবুও তারা মুখোমুখি হলো। চোখে চোখ। দু'জনেই মস্ত ফণা তুলে প্রস্তুত। দু'জন দু'জনকে ক্রমাগত ছোবল মেরে চলেছে। আর যেন বলছে তোমাকে চাই। বন্ধু তোমাকে চাই। ভাষাহীন, ভালোবাসাহীন তাদের এই আক্রমণ। দু'জন দু'জনকে জড়িয়ে মাটিতে আছড়ে-আছড়ে পড়ছে। কিন্তু নেই কোনো ফিসফাস, চিৎকার। শুধু আজ প্রয়োজন দুজন দু'জনকে। এই রতিক্রিয়াতে উপভোগ্যের কিছু নেই দু'জনের। আছে শুধু প্রয়োজন। আছে শুধু বাধ্যতামূলক অলৌকিক নির্দেশ। দূর থেকে দাঁড়িয়ে রাখাল আর আজিজ মাস্টারের মেয়ে রুপা পুরো ঘটনাটা দেখল। রাখাল বলল- একেই বলে শঙ্খ।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:৫৯
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×