somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

নিন্দিত নগরবাসী

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আজকের সকালের ঘটনাটা দিয়েই লেখাটা শুরু করি।
সকাল আট টায় বাসা থেকে বের হই। আজ বাসায় নাস্তা করিনি। সুরভি সকালে নুডুলস রান্না করেছে। কেন জানি নুডুলস খেতে ইচ্ছা করেনি। বেচারা খুব মন খারাপ করেছে। অসহায় মানুষের মতো বাসের জন্য আধা ঘন্টা রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে থেকেও বাসে উঠতে পারলাম না। শেষে হাঁটা শুরু করলাম। অনেকক্ষন পরপর দুই একটা বাস এলেও এমন ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। তাদের সাথে আমি পেরে উঠি না। আমার মতো অসংখ্য মানুষের প্রতিদিনকার রুটিন এটা। শুক্রবার, শনিবার নেই- আল্লাহর ত্রিশ দিন'ই একই অবস্থা। অথচ সরকার বলছে দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে। তবে আমার বিশ্বাস করতে ভালো লাগে, দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে।

সকাল সাড়ে এগারোটায় মৌচাক মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, অফিসের কাজে নতুন বাজার যাবো। বাসে উঠতে পারছি না। ভয়াবহ অবস্থা। যা-ও দুই একটা বাস আসছে- সেগুলো আবার দরজা লাগানো। হেলপার মাথা বের করে বলছে- সিট নাই, সিট নাই। ইচ্ছা করছে হেলপারকে টেনে নামিয়ে কিছুক্ষন পিটাই। চারদিকে মানূষের ব্যস্ততা। এমন সময় এক মেয়ের চিৎকার শুনতে পেলাম। কে বা কারা তার মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে। ফ্লাইওভার ব্রীজের নিচে চারজন পুলিশ বসা। তাদের কানে হেডফোন। হয়তো তারা তাদের স্মার্ট ফোনে গান শুনছে, ফেসবুক চালাচ্ছে। আমি দেখলাম ১৬/১৭ বছরের এক ছেলে দৌড়াচ্ছে। মুহূর্তের মধ্যে সে কোথায় যেন উদাও হয়ে গেল। এদিকে বেশ কিছু জনতা চিৎকার করে বলল- ধর ধর ধর....। পুলিশ তখনও তাদের মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত।

মৌচাক মার্কেটের সামনে এই ঘটনা নতুন না। প্রতিদিন এই ঘটানা ঘটছে। সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা এবং রাতে প্রতিদিন একই ঘটনা ঘটছে। একই ছেলেপেলে প্রতিদিন এই কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু দেখার কেউ নেই। বলার কেউ নেই। প্রতিদিনই পুলিশ আয়েশি ভঙ্গিতে ব্রীজের নিচে বসে থাকে, মোবাইল নিয়ে তারা ভীষন ব্যস্ত। প্রতিদিনই কারো না কারো- মোবাইল, গলার চেন, কানের দুল খোয়া যাচ্ছে। আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানূষই তো দরিদ্র। যাদের জিনিসপত্র খোয়া যায়, তারা বুঝে কেমন লাগে। আমরা দেখলে বা শুনলে দুই একবার হা হুতাশ করি। ব্যস এই পর্যন্ত'ই। ঘটনা কিন্তু থেমে নেই। প্রতিদিনই ঘটছে। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর।
মৌচাক এলাকায়, খুব মন দিয়ে আপনি কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকলেই বুঝতে পারবেন- চার পাচ জনের একটা দল নিয়মিত এই কাজ করছে। প্রথমে দূর থেকে ফলো করে, তারপর মোবাইল বা গলার চেন অথবা কানের দুল চিল পাখির মতো ছোঁ মেরে নিয়ে যায়। যদি দুই একজন জনতার কাছে ধরাও পড়ে, তাতেও কোনো লাভ নেই। ওদের হাত অনেক লম্বা। মুহূর্তের মধ্যে ওদের দলের লোক এসে ওকে বাঁচিয়ে নিয়ে যাবে। কারন এইসব মোবাইল, সোনার চেন, মেয়েদের হাত ব্যাগ ইত্যাদি ছিনিয়ে নেওয়া জিনিসপত্রের ভাগ অনেকের পকেটে যায়।

শুধু মৌচাক না, ফার্মগেট, গুলিস্তান, সদরঘাট, মহাখালি, কমলাপুর, সায়দাবাদ ইত্যাদি এলাকায় প্রতিদিন, দিনের পর দিন একই ঘটনা অহরহ ঘটছে। আর সন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ছিনতাই তো চলছেই। যুগযুগ ধরে চলছে। তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরের লোক নয়। কিন্তু পুলিশ তাদের ধরবে না। প্রতিদিনের বখরা যথা সময়ে স্থানীয় থানায়, পাতি নেতাদের কাছে, বড় ভাইদের কাছে চলে যায়। কোন এলাকায় কারা চুরী ছিনতাই করে অথবা কারা লোক দিয়ে ছুরী ছিনতাই করায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সব জানে। কিন্তু তারা মুখ খুলবে না। মুখ খুললে তারা অই এলাকায় আর ব্যবসা করতে পারবে না। পদ্মা সেতু আর মেট্রোরেল করলেই দেশ এগিয়ে যাবে? ২০৪১ সালে তো চুরী ছিনতাই আরও বাড়বে। সরকার এসব ব্যাপারে নজর দেয় না কেন?

ধরুন, আপনি ফার্মগেটের জ্যামে আছে। গাড়ির জানালা খোলা, যে কোনো মুহূর্তে আপনার মোবাইল, ল্যাপটপের ব্যাগ ইত্যাদি নিয়ে যেতে পারে। আপনি এক ঘন্টা ফার্মগেট দাঁড়িয়ে থাকলে নিজের চোখেই সব দেখতে পাবেন। হাতে মোবাইল, রাস্তা পার হচ্ছেন কেউ একজন এসে আপনাকে ধাক্কা দিবে এবং দেখবেন আপনার হাতে মোবাইল নেই। ওদের'ই চার পাঁচ জন লোক আপনাকে ঘিরে থাকবে। দৌড় দিয়ে তাকে ধরতেও পারবেন না। আপনার পথ পথচারী সেজে আটকে দিবে। যদি পুলিশ মন থেকে চায়, ঢাকা শহরের সব চোর ছিনতাইকারী ধরবে। তবে এটা তাদের জন্য কোনো ব্যাপারই না। সরকার বড় বড় কাজ নিয়ে ব্যস্ত। প্রতিদিন সাধারন খেটে খাওয়া মানূষদের যে কত কষ্ট, কত বিড়ম্বনায় পড়তে হয়- তা সরকার জানে না। জানার চেষ্টাও করে না। শুধু তাদের আছে চ্যাটাং চ্যাটাং কথা। তাদের তো সকালে দৌড়ে দৌড়ে বাসে উঠতে হয় না, লম্বা সময় জ্যামে বসে থাকতে হয় না, হাসপাতালে দালালের ক্ষপ্পড়ে পড়তে হয় না, নদী ভাঙনের স্বীকার হতে হয় না, ত্রান নেওয়ার জন্য তুফানের মতো ছুটতে হয় না, বাজারে গিয়ে বড় মাছের দিকে তাকিয়ে ছোট মাছ কিনতে হয় না। সামান্য চেকাপের জন্য পঞ্চাশ জনের দল নিয়ে যায় সিঙ্গাপুর।

বিশ্বাস করুন, গত দশ বছরেও কিন্তু সরকার সরকারি হাসপাতাল থেকে দালাল দূর করতে পারেনি। হাসপাতাল গুলোতে ডাক্তারের চেয়ে একজন দালালের ক্ষমতা বেশি। যে কোনো সরকারি হাসপাতালে আপনাকে পায়ে পায়ে টাকা দিতে হবে। টাকা না দিলে সিট তো পাবেন'ই না। এমনকি অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালের বারান্দায় শুয়ে রাখার আগে আপনাকে টাকা দিতে হবে। বিশ্বাস করুন, যত বাজেট'ই থাকুক, নদী ভাঙ্গন রোধ করার জন্য- তাতে কোনো লাভ নেই। বাজেট থাকবে, বরাদ্দও হবে। কিন্তু কাজ হবে না। ফলাফল নদী ভাঙ্গন। প্রতিবছর একই ঘটনা। এদিকে, খাদ্যমন্ত্রী যতই কঠোর হুশিয়ারি দেখাক- ফলাফল শূন্য। খাদ্যে ভেজাল থাকবেই। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়বেই। আপনি কি জানেন সারা বাংলাদেশে অসংখ্যা পরিবার বছরে একবারও এক কেজি গরুর মাংস কিনতে পারে না। তারা বলে গরুর মাংস খাই বছরে একবার- শুধু কোরবানীর ঈদে। আর আমাদের দেশে এমন মন্ত্রীও আছে বিদেশ গেলে সাথে করে বাবুর্চিও নিয়ে যায়। এই বাবুর্চির রান্না ছাড়া তার চলেই না।

নানান সমস্যার জর্জরিত নগরবাসী। বছরের পর বছর ধরে। দেখার কেউ নেই। বলার কেউ নেই। আর এদিকে 'দেশ উন্নয়নের মহাসড়'কে চলে গেল। নগরবাসী বুঝতেই পারছে না। তারা বলছে, দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে- তাহলে এখনও কেন মানুষ রাস্তায়-রাস্তায় ঘুমায়? কেন লক্ষ লক্ষ যুবক বেকার? কেন লক্ষ লক্ষ মানুষ পেট ভরে তিনবেলা খেতে পায় না।
গুলিস্তান এলাকায় ছয় মাসের জন্য চার হাত ফুটপাত বিক্রি হয় দুই লক্ষ টাকায়। ঢাকার শহরের বিভিন্ন ফুটপাত থেকে প্রতিদিন কত টাকা চাদা আদায় হয়- আপনি শুনলে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়বেন। এবং এই টাকা কারা-কারা পায় শুনলে হয়তো বিশ্বাসই করবেন না। তবে সরকার যখন বলেছে, ''দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে''। এর উপরে আর কোনো কথাই নেই। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল আরও কত কি। উন্নয়নের কি আর শেষ আছে!

তবে, আমি বলি- ঢাকা শহরের মানূষের কষ্টের শেষ নেই। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত সীমাহীন কষ্ট।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:২৬
১৯টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×