ভূত বলতে কিছু নেই। কিন্তু অনেকের'ই ভূতের ভয় আছে। ভূতের গল্প শুনতে আমার অনেক ভালো লাগে। সবার জীবনেই অনেক ভূতের গল্প আছে। আমি তাদের কাছ থেকে ভূতের গল্প শুনি। মনে মনে হাসি আর আমি আমার মতো করে তাদের ভূতের রহস্য ভেদ করে বিপুল আনন্দ পাই। যাদের কাছ থেকে আমি ভূতের গল্প শুনি- কখনও তাদের ভূল ধারনা গুলো শুধরে দিতে পারি নি। তারা ভূত আছে এটা বিশ্বাস করতেই বেশি পছন্দ করে। আজ আপনাদের সাথে নানান মানুষের কাছ থেকে শোনা তিনটা ভূতের গল্প শেয়ার করবো।
১। রাত ১১টা। গ্রামের নাম কুচিয়া গ্রাম। পাঁচজন বন্ধু মিলে শ্মশানের কাছে আড্ডা দিচ্ছিল। শ্মশানটি সন্ধ্যা নদীর কাছে। শ্মাশানের পেছনে একটা পুরোনো ভাঙ্গা বাড়ি। এই ভাঙ্গা বাড়ির উঠানে বসে খুব আড্ডা দিচ্ছিল তারা পাঁচজন। পাঁচ জনের মধ্যে চার জনই কুচিয়া গ্রামের, একজন এসেছে শহর থেকে বেড়াতে বন্ধুর বাড়িতে। তার নাম সজল। এই সজলের কাছ থেকেই এই ঘটনা আমি শুনেছি।
অনেকক্ষন তারা নানান বিষয়ে গল্প করছিল, হঠাৎ সজলের প্রস্রাব চাপে। সে প্রস্রাব করতে ভাঙ্গা বাড়ির পেছনে যায়। তখন সে দেখতে পায় একটা মেয়ের লাশ পড়ে আছে। সহজ সরল চেহারা, সূতি শাড়ি পড়া, হাত ভরতি কাঁচের চুড়ি, কপালে সিঁদুর দেয়া। মেয়েটা ভীষন সুন্দরী। মেয়েটিকে দেখে মনে হচ্ছিল- মেয়েটা মরেনি। ঘুমিয়ে আছে। সজল মেয়েটিকে দেখে এতই বিমোহিত হয়ে পড়লো যে, এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে মেয়েটির হাত ধরলো। সাথে সাথে মেয়েটি চোখ মেলে তাকালো। আর বলল, ওরা আমাকে মেরে ফেলেছে। তুমি এখন আমাকে পোড়ানোর ব্যবস্থা করো। তা না হলে আমি শান্তি পাবো না। এই বলেই মেয়েটি চোখ বন্ধ করে ফেলে আর তখন সজল অজ্ঞান হয়ে যায়।
২। এই গল্প শুনেছি সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের এক সচিবের কাছে। গল্পটি এই রকমঃ তখন তার বয়স অল্প। চাকরী জীবনে প্রবেশ করেছেন কয়েক বছর হলো। তিনি অফিসের কাজে দিনাজপুর গিয়েছেন। উঠেছেন সরকারি ডাক বাংলোয়। রাতে খেয়ে বিছানায় গেছেন। তার ঘুম আসছিল না। সে বালিশে হেলান দিয়ে- 'দ্য লস্ট সিম্বল' বইটি পড়ছিলেন। হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেল। চারপাশ গভীর অন্ধকার। তিনি ইলেকট্রিসিটি আসার অপেক্ষায় আছেন। এমন সময় তিনি তার ঘরে শব্দ পেলেন। কিসের শব্দ? কি রকম শব্দ? তিনি ভালো করে শব্দটি শোনার চেষ্টা করলেন। তার মনে হলো শব্দটি আসছে খাটের নিচ থেকে। মনে হলো যেন কোনো বাচ্চা মেয়ে অভিমান করে কাঁদছে। তিনি ভয় না পেয়ে বিদ্যুৎ এর জন্য অপেক্ষা করতে থাকলেন।
প্রায় এক ঘন্টা পর কারেন্ট এলো। তখন তিনি খাটের নিচে দেখেন কিছুই নেই, শুধু একটা কাঠের বাক্স আছে। তিনি কাঠের বাক্সটি টেনে বের করলেন। এবং বাক্সের মুখ খুলে দেখতে পেলেন- একটা ৩/৪ বছরের ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ে। বাচ্চাটি মৃত। গলা টিপে সম্ভবত বাচ্চাটিকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বাচ্চাটিকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শোয়ালেন।
বাচ্চাটি কে? কোথা থেকে এলো তার কিছুই খোজ পাওয়া যায়নি। এই ঘটনার পর থেকে তিনি বাচাচটিকে প্রায়ই স্বপ্নে দেখেন। বাচ্চাটি স্বপ্নে এসে তাকে নানান ঘটনা আগে থেকেই জানিয়ে দেন বলে তিনি দাবী করেন।
৩। এখন বলল রফিক সাহেবের গল্প। তখন তার বয়স একুশ বছর। একদিন তিনি নাটোর গিয়েছেন তার বন্ধুর বাড়ি। রাতে তার ঘুম আসছিল না। তাই সে কাউকে না ডেকে, চুপি চুপি ঘর থেকে বের হয়ে- কিছু দূর গিয়ে একটা কালভার্ট এর উপরে বসেন। সুন্দর জোছনা রাত। সামনে যতদূর চোখ যায় ধানক্ষেত। ধানক্ষেত বাতাসে দুলছে। কালভার্ট এর নিচে খাল। খালের পানি কলকল শব্দে বয়ে যাচ্ছে। মিষ্টি ঠান্ডা বাতাস। ঠিক এমন সময় তিনজন লোক একটা লাশ নিয়ে গোরস্থানে যাচ্ছে। রফিক বলল, ভাই আপনাদের কাছে ম্যাচ আছে। অনেকক্ষন ধরে বসে আছি, সিগারেট খেতে পারছি না। ভুলে ম্যাচ বাক্সটা রেগে এসেছি। তিনজন তিনজনের দিকে তাকিয়ে চোখে চোখে কথা বলল। তাদের একজন বলল, আপনি আমাদের সাথে কিছু দূর চলেন, সেখানে আমাদের আরও লোক আছে। তাদের কাছে ম্যাস বাক্স আছে। মরার খাট চারজন ধরতে হয়। এত রাতে লোকজন পাইনি। আপনি যদি একটু সাহায্য করেন। তাহলে খুব ভালো হয়। রফিকের তাদের দেখে খুব মায়া লাগল। সে আগ্রহ নিয়ে খাটের একটি পায়ায় তার কাঁধে নিল। যাচ্ছে ও যাচ্ছেই, পথ আর শেষ হয় না। হঠাত রফিকের মনে হলো, খাটে কেউ নেই। থাকলে ভারি লাগতো। তাছাড়া মরার খাট যারা বহন করে তারা আল্লাহ খোদার নাম নেয়। কিন্তু এরা তিন জন'ই চুপ করে আছে। রফিক হঠাৎ করে চিৎকার করে বলল, আমি আর যাবো না। বলেই উলটো দিকে এক দৌড় দিল।
তারপর রফিকের আর কিছুই মনে নেই। বাড়ির লোকজন ভোরে কালভার্ট এর নিচে রফিককে অজ্ঞান অবস্থায় দেখতে পায়।
এই গল্পটি শুনেছিলাম আমাদের ভাড়াটিয়ার কাছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:২৮