অদ্ভুত! অদ্ভুত!! অদ্ভুত!!!
কোনো কথা নেই, শুধু থাপ্পড়। দিলাম ঠাস করে একটা থাপ্পড়। চাটাক করে শব্দ হলো। এখন থেকে এই ট্রিটমেন্ট'ই চলবে। চলবেই। কিছু বুঝতে পারছেন না, তাই তো? আচ্ছা, বুঝিয়ে বলছি। আমি মরে গেছি। সত্যি সত্যিই আমি মরে গেছি। কিভাবে মরলাম? দুই বাস পাল্লা-পাল্লি শুরু করেছে। দু'জনেই আগে যেতে চায়। কেউ কাউকে সাইড দিচ্ছে না। এদিকে আমি বাসের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম- মহাখালি মোড়ে। যাবো মিরপুর- ১০। হঠাৎ আমি পাল্লা দেওয়া দুই বাসের চিপায় পড়ে সাথে সাথে মৃত্যুবরন করি। আমার সারা শরীর থেতলে যায়। যাকে বলে একবারে স্পট ডেড।
মৃত্যুর পর বিশেষ বিবেচনায় আমাকে অদৃশ্য করে পৃথিবীতে পাঠানো হলো, সাথে একটা অলৌকিক ক্ষমতাও দেওয়া হলো। অলৌকিক ক্ষমতাটি হলো- আমাকে কেউ দেখতে পাবে না, কিন্তু আমি ইচ্ছা করলে যে কাউকে থাপ্পড় দিতে পারব। থাপ্পড় দেয়ার ক্ষমতাটি এমনি এমনি পাইনি, ফেরেশতার কাছে এমন আহাজারি করেছি, এমন কান্না-কাটি করেছি যে ফেরেশতাদের মন গলে গেল। ফেরেশতারা আমাকে বললেন, আসলে তোমার এখন মরার কথা ছিল না, ঘটনা চক্রে তুমি মরে গেছো। এটা খুব দুঃখজন। আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। কান্না থামাও আর বিলাপ করো না। বিশেষ বিবেচনায় তোমাকে একটা অলৌকিক ক্ষমতা দিয়ে পৃথিবীতে পাঠানো হলো। যতদিন ইচ্ছা থাকো পৃথিবীতে। আমি আনন্দে ফেরেশতাকে জড়িয়ে ধরলাম।
আমার মৃত্যু হয়েছে আজ ৭ দিন। আমার লাশ মর্গে পড়েছিলো পুরো একটি দিন। পুলিশের ঝামেলা শেষে আমার ক্ষত বিক্ষত দেহটি আমার পরিবারের কাছে দেওয়া হয়। আমার থেতলে যাওয়া শরীর দুইদিন পর কবরে নামানো হয়। এই দুই দিন আমার আত্মার খুব কষ্ট হয়েছে। কবর দেওয়ার পর পরম শান্তি অনুভব করেছি। আমার মনে হয়, পৃথিবীতে জীবিত অবস্থায় খুব বেশি পাপ করিনি বলে- ফেরেশতারা আবার আমাকে দুনিয়াতে পাঠাতে রাজী হয়েছে। সাথে দিয়েছে এক অলৌকিক ক্ষমতা। এই ক্ষমতা আমি যথা সময়ে, যথা জায়গায় কাজে লাগাবো- ফীরশতাদের কথা দিয়েছি। দুষ্টলোকদের জন্মের শিক্ষা দিয়ে দিব। আমার থাপ্পড় খেয়ে খেয়ে দুষ্টলোক গুলো বদলে যাবে। তারা ভালো মানুষ হয়ে যাবে।
আমি আমার বাসায় গেলাম। কেউ আমাকে দেখতে পাচ্ছে না। আমি সবাইকে দেখতে পেলাম। সুরভি মন খারাপ করে খাটের এক কোনায় বসে আছে। সুরভি'র কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে আমার মেয়ে। তাদের দু'জনের চোখের কোনায় পানি। সুরভি আর পরীকে দেখে আমার বুকের ভেতরে মোচড় দিয়ে উঠল। আমি তাদের খুব কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। সুরভি'র নিঃশ্বাস যেন আমার গায়ে লাগছে। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। আমার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছে- সুরভি মন খারাপ করো না, আমি আছি। তোমাদের কাছেই আছি। কোনো ভয় নেই। আর শোনো, আলমারি'র ড্রয়ারে আমার দুইটা ক্রেডিট কার্ড আর তিনটা এটিএম কার্ড আছে। তাতে কম করে হলেও ছয় লাখ টাকা আছে। পিন নম্বর আমার লাল ডায়েরীতে লেখা আছে। ছয় লাখ টাকায় তোমরা দুইজন কম করে হলেও তিন বছর আরামে চলতে পারবে।
আমি বসে আছি সাপ্তাহি'ক 'সুপ্রভাত' পত্রিকা অফিসের সম্পাদকের ঘরে। এই সম্পাদক বিরাট বদ। অল্প বয়সী মেয়েদের চাকরী দেয়। আর সময় বুঝে নিজের রুমে ডেকে নিয়ে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে দেয়। আর তখন বাইরে লাল লাইট জ্বালিয়ে রাখে। লাল লাইট জ্বলে থাকার মানে হচ্ছে, সম্পাদক মহোদয় ভীষন ব্যস্ত। গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় নিয়ে মিটিং হচ্ছে। এই সময় তাকে কিছুতেই বিরক্ত করা যাবে না। সম্পাদক সাহেব আরাম করে একটা সিগারেট ধরালেন ঠিক এই রকম সময়ে আমি কষে একটা থাপ্পড় দিলাম। সম্পাদক সাহেব চেয়ার থেকে ছিটকে মাটিতে পড়ে গেলেন। গালে হাত দিয়ে আশেপাশে তাকাচ্ছেন, মনে হয়- যে থাপ্পড় দিয়েছে তাকে খুঁজছেন। আমি আরেকটা ধ্রাম করে থাপ্পড় দিলাম। সম্পাদক বাবাগো, মাগো বলে চিৎকার দিতে লাগলো।
আমি বসে আছি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী নুরুল আমিন হাওলাদারের উত্তরার ফ্ল্যাটে। রাত ১১ টা। স্বাস্থ্যমন্ত্রী'র পুরো পরিবার গেছে দুবাই ভ্রমনে। রাস্ট্রীয় কাজের খুব চাপ তাই তিনি পরিবারের সাথে দুবাই যেতে পারেন নি। এখানে, এই ফ্ল্যাটে এসেছেন যৌনতা উপভোগ করতে। এই ফ্ল্যাট তার রঙ্গশালা। তিনি প্রতি সপ্তাহে একবার আসেন। অল্প বয়সী মেয়ে তার ভীষন পছন্দ। তার সামনে বিদেশী মদের বোতল। অলরেডি অর্ধেক বোতল শেষ করে ফেলেছেন। এই বদ মন্ত্রী প্রায় ছয় বছর স্বাস্থ্যমন্ত্রী পদ দখল করে আছেন অথচ সরকারি হাসপাতাল থেকে সামান্য দালাল দূর করতে পারেনি। আমার দৃষ্টিতে এটা অনেক বড় অন্যায়। দিলাম ঠাঠিয়ে এক থাপ্পড়। মন্ত্রী নুরুল আমিন হাওলাদার সোফায় বসে ছিলেন। থাপ্পড়ের চোটে সোফা নিয়ে উলটিয়ে পড়ে গেলেন। আমি আরেকটা থাপ্পড় দিলাম। মন্ত্রী লাফ দিয়ে উঠে বলতে লাগলেন, আমাকে মাফ করে দেন। আমি ভালো হয়ে যাবো। আমি ভালো হয়ে যাবো।
এখন, আমি আছি শিক্ষা অধিদপ্তরের সচিবের রুমে। সচিব বালাসুর গ্রামের হেড মাস্টারকে বলছেন, তিন লাখ টাকা না দিলে আপনার স্কুলের জন্য কিছুই করতে পারব না। আপনার স্কুল পাকাও হবে না, এমপিও ভুক্তও হবে না। নো নেভার। হেড মাস্টার সাহেব খুব বিনীতভাবে বলছেন- স্যার গ্রামের দরিদ্র ছেলে মেয়েরা এই স্কুলে পড়ে। তাদের বেশির ভাগ বাবা'রা কৃষক। সচিব রেগে গিয়ে বললেন, আমি কোনো কথা শুনতে চাই না। আপনি এখন যেতে পারেন। ঠিক এই সময় আমি শিক্ষা সচিবকে একটা তিন মন ওজনের থাপ্পড় দিলাম। থাপ্পড়ের চোটে সচিব চেয়ার নিয়ে উলটিয়ে পড়ে গেল। খুব রাগ লাগল তাই আমি আরেকটা থাপ্পড় দিলাম। সাথে সাথে সচিব হেড মাস্টারকে বললেন, ভাই সাহেব আপনি বসুন, আমি আজই আপনার কাজ করে দিচ্ছি। একটাকাও দিতে হবে। বুঝা যাচ্ছে, মুখের কথায় কাজ হয় না। থাপ্পড়ে কাজ হয়।
বাংলামটর মোড়ে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে আছি। এমন সময় ছাত্রলীগের এক কর্মী ফুটপাত দিয়ে হোন্ডা চালিয়ে যাচ্ছে। হোন্ডার পেছনে আরেকজন বসা, সেও ছাত্রলীগ নামধারী। বিশাল ক্ষমতাধর এই ছাত্রলীগের পোলাপান। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি এরা অনেকেই অল্প বয়সে গাড়ি বাড়ি করে ফেলেছে। সে যাই হোক, ছাত্রলীগওয়ালা বিকট শব্দে হর্ন দিয়েই যাচ্ছে। সামনে এক বয়স্ক লোক আছে, তাই সে খুব জোরে হর্ন দিচ্ছে। বয়স্ক লোকটি বলল, বাবা আপনি রাস্তা দিয়ে হোন্ডা চালান। ফুটপাত দিয়ে তো মানুষ হাঁটবেই। দুই ছাত্রলীগওয়ালা হোন্ডা থেকে নেমে বয়স্ক লোকটিকে ধাম করে একটা লাথথি দিলো পেটে। আমি আমার কাজ করলাম। দুইটাকে ইচ্ছেমতোন থাপ্পড় থেরাপি দিলাম কিছুক্ষন। আশা করি, এই দুই বদ বাকি জীবনে হোন্ডা নিয়ে ফুটপাতে উঠবে না।
এরপর একে একে সব দুষ্টলোকদের শায়েস্তা করতে লাগলাম। যে দোকানদার নকল জিনিস বিক্রি করে বা মাপে কম দেয় তাকে শায়েস্তা করলাম। যে সমস্ত বদ খাবারের জিনিসে ফরমালিন মিশায় তাদের শায়েস্তা করলাম। যে সমস্ত বখাটেরা মেয়েদের ভীড়ের মধ্যে গায়ে হাত দেয়, কুৎসিত মন্তব্য করে- তাদের শায়েস্তা করলাম। সব দুর্নীতিবাজদের শায়েস্তা করতে থাকলাম। ঘুষখোর পুলিশদের শায়েস্তা করতে থাকলাম। সরকারি অফিসে যারা কাজ না করে, বসে বসে কান চুলকায় তাদের শায়েস্তা করতে থাকলাম। অসৎ সাংবাদিকদের জীবনের শিক্ষা দিয়ে দিলাম। যারা খাদ্যে ভেজাল মিশায় তাদের শায়েস্তা করলাম।
ও, বলতে ভুলে গেছি- খাদ্যমন্ত্রী কাইয়ূম আলমকে চীন থেকে পোকা খাওয়া চাল কেনার জন্য থাপ্পড় দিয়েছি। সে বাকি জীবনে আর পোকায় খাওয়া চাল কিনবে বলে মনে হয় না। যেসব মন্ত্রীরা প্রচুর মিথ্যা বলে, তাদের থাপ্পড় দিয়ে দিয়ে কন্টোলে এনেছি। সিন্ডিকেটওয়ালাদের ইচ্ছে মতো শায়েস্তা করে দিয়েছি। শায়েস্তা মানে বুঝেছেন তো? থাপ্পড়। কোনো কথা নাই, শুধু থাপ্পড়। ঠাস। ঠাস। থাপ্পড় থেরাপি চলছেই, চলবেই।
আপনারা কি লক্ষ করেছেন, থাপ্পড় থেরাপিতে কাজ হচ্ছে। দেশ দিনদিন উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন অনায়াসে বলা যেতে পারে 'দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে'। এই থাপ্পড় থেরাপির কারণে আরও স্পষ্ট করে বলা যায়- ২০৪১ সালে সরকারের ভিশন পুরোপুরি সফল হবে। সবাই বলুন জয় বাংলা।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:২১