এই ছবিটার মজার একটা ইতিহাস আছে। ইতিহাসটা অন্য কোনো সময় বলব।
বেশ কয়েকমাস আগের কথা।
আবদুল গফুর সাহেবের 'আমার কালের কথা' বইটা পড়ে শেষ করে, ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি রাত প্রায় দুইটা। আমি বাতি বন্ধ করে শুয়েছি। জানালা দিয়ে এক রাশ আলো এসে ঢুকেছে। ঘুম আসছে না। এপাশ ওপাশ করছি। সুরভি পাশে গভীর ঘুমে। সে সব সময়ই বালিশে মাথা রাখার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়ে। আমি বাম পাশ ফিরতেই সুরভি আমার গায়ে একটা হাত রেখে বলল, ঘুম আসছে না তোমার?
আমি এক আকাশ অবাক হয়ে বললাম, তুমি ঘুমাওনি?
সুরভি বলল, ঘুমিয়ে ছিলাম কিন্তু একটা স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে গেছে।
আমি বললাম, আমাকে ডাকোনি কেন?
সুরভি বলল, তুমি মন দিয়ে বই পড়ছিলে তাই ডাকিনি।
আমি বললাম, কি স্বপ্ন দেখলে? সুরভির চোখের কোনায় পানি।
সুরভি সত্যি সত্যি কেঁদে ফেলে বলল, আমি মনে হয় বেশি দিন বাঁচবো না। প্রায়ই মাকে স্বপ্ন দেখি। মা আমাকে ডাকেন। মার পাশে দাদু বসা। দাদুও হাত ইশারা করে আমাকে ডাকেন। ইদানিং এই রকম স্বপ্ন প্রায়ই দেখছি।
এই ছবিটার পেছনেও মজার একটা গল্প আছে। খুব শ্রীঘই লিখব।
সুরভি যখন অর্নাস ১ম বর্ষে তখন হঠাৎ সুরভির মা এক কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়। ক্যান্সার। তিনি তিন মাস হাসপাতালে শয্যাশায়ী। সুরভির বাবা চিকিৎসার কোনো ত্রুটি করেন নি। সুরভির কোলে মাথা রেখেই তিনি মারা যান। মারা যাবার আগে তিনি সুরভিকে বললেন, আমার চুল গুলো এলোমেলো হয়ে গেছে, একটু আচড়ে দে তো। সুরভি চুল আচড়ে দিল। সুরভির বাবার কাছ থেকেও শুনেছি, তিনি মারা যাবার আগে প্রায়ই বলতেন, স্বপ্নে তিনি তার মা আর দাদুকে দেখতেন। তারা তাকে খুব আদর নিয়ে ডাকেন। তাদের কাছে চলে আসার জন্য অনুরোধ করেন।
গতকাল রাতের কথা। আমরা ঘুমিয়ে পড়েছি। গভীর ঘুম। হঠাৎ কান্নার শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম স্বপ্ন দেখছি। স্বপ্ন নয় সুরভি কাঁদছে। আমি প্রচন্ড অবাক! বললাম, কি হয়েছে সুরভি? কাঁদছো কেন?
সুরভি বলল, মাকে স্বপ্নে দেখেছি। মা আমাকে ডাকছেন। তিনি নাকি আমার অপেক্ষায় আছেন।
আমি সুরভিকে কি বলব ভেবে পাই না। কি বলে ভরসা দিব ভেবে পাই না।
আমি একজন আধুনিক মানুষ। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। লজিক দিয়ে আমি সব কিছু চিন্তা করি। অলৌকিক কোনো কিছুর উপর আমার বিশ্বাস নেই।
এটা আমাদের বিয়ের আগের ছবি। ঢাকা শহরের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে আমরা যাইনি। কত শত ঘটনা আর স্মৃতি যে আছে। সব আমি লিখব ব্লগে।
স্বপ্ন সম্বন্ধে অনেক দর্শন, বিজ্ঞান, কাহিনী ইত্যাদি আছে। কিছু কিছু স্বপ্ন আর স্বপ্ন থাকে না। বাস্তবের কাছাকাছি চলে যায়। প্রকৃতপক্ষে প্রতিটি স্বপ্নেরই একটা অর্থ কি নেই? মনোবিজ্ঞানিরা বলবেন, স্বপ্ন হচ্ছে মানুষের অবদমিত মনের প্রতিফলন। ইদানিং দেখছি, সুরভির চোখের চারপাশ কালো হয়ে গেছে। ঠিক মতো খায় না, ঘুমোয় না। আমাকে বলে, আমি মরে গেলে তুমি আবার বিয়ে করবে? আমাকে কোথায় কবর দিবে? আমার শাড়ি গুলো কি তোমার নতুন বউ পড়বে? তোমার নতুন বউ কি তোমাকে আমার মতোন করে ভালোবাসতে পারবে? শোনো, লক্ষ্মী একটা মেয়েকে বিয়ে করবে। যে তোমাকে বুঝবে। তোমাকে ভালোবাসবে। আমি বলি, সুরভি ফালতু কথা বাদ দাও।
সারাদিন অফিস করার পর বাসায় এসে সুরভির এরকম কথা শুনতে ভালো লাগে না। সুরভির হাতের রান্না আমার খুব বেশি পছন্দ। ইদানিং তার রান্না আর আগের মতো স্বাদ হয় না। তরকারিতে লবন দিতে ভুলে যায়। ভাত নরম করে ফেলে। প্লাউ রান্না করলেও ঝরঝরা হয় না। তার গাছের যত্ন নেয় না। অদ্ভুত অদ্ভুত কথা বলে। আজ বলল, বাবু ধরো একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলে, আমি তোমার পাশে নেই। তখন তোমার কেমন লাগবে? এদিকে আমার অফিসের অবস্থাও ভালো না। শুনছি বেশ কয়েকজনকে ছাঁটাই করা হবে। সব কিছু মিলিয়ে আমার মানসিক অবস্থা ভালো না।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:২৬