somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

প্রস্টিটিউট

১৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তখন শাহেদের অফিস ছিল গুলশান- ২। সে রোজ বাস থেকে বনানী কাকলী নেমে রিকশা করে গুলশান-২ যেত। প্রতিদিন'ই কাকলীর রাস্তাটায় জ্যাম থাকে তাই শাহেদ জ্যামে বাসে বসে না থেকে চেয়ারম্যান বাড়ি থেকে হেঁটে কাকলী মোড়ে আসতো। ঠিক কাকলী মোড়ের আগের ওভার ব্রীজের কাছে প্রতিদিন একটা মেয়ের সাথে তার দেখা হতো। মেয়েটা খুব সুন্দর। একদম সহজ সরল সুন্দর। প্রতিদিন দেখা হতে হতে মেয়েটার চেহারা শাহেদের মনে গেঁথে যায়। একদিন রাতে শাহেদ মেয়েটাকে স্বপ্নেও দেখে ফেলল। স্বপ্নটা এই রকম, শাহেদ আর মেয়েটি হাত ধারাধরি করে বি আর টি সি বাসে করে কোথায় যেন যাচ্ছে। বাসে শাহেদ ও মেয়েটি ছাড়া আর কোনো যাত্রী নেই। মেয়েটি শাহেদের কাঁধে মাথা রাখে। শাহেদ এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে মেয়েটির ঠোঁটে ঠোঁট রাখতেই ঘুম ভেঙ্গে যায়। শাহেদ লাফ দিয়ে বিছানায় উঠে বসে সিদ্ধান্ত নিল, আগামীকাল সে মেয়েটির সাথে কথা বলবে। বলবেই।

শাহেদ চেয়ারম্যান বাড়ি ওভার ব্রীজের কাছে দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক এই সময় মেয়েটি বাস থেকে নামলো। একবার শাহেদের দিকে তাকালো কি?
শাহেদ কোনো ভনিতা না করে সরাসরি মেয়েটির চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার নাম কি?
মেয়েটি বলল, নীলা। আমার নাম নীলা।
শাহেদ বলল, নীলা আপনি কি আমার সাথে এক মগ এক্সপ্রেসো কফি খাবেন প্লীজ?
না, কফি খাবো না। এমনিতেই আজ আমার দেরী হয়ে গেছে।
শাহেদ বলল, আপনার অফিস কোনটা?
নীলা ওভার ব্রীজের সাথেই একটা বিল্ডিং দেখিয়ে বলল, চলুন আমার সাথে আমার অফিস দেখাই।
শাহেদ বলল, আজ যাবো না। অন্য কোনো সময় যাবো। আর শুনুন অফিস শেষে আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করবো। আমাকে কিছুক্ষন সময় দিবেন প্লীজ। প্লীজ। আমার কিছু বলার আছে।
নীলা শাহেদের করুন গলায় 'প্লীজ' 'প্লীল' বলা শুনে খিল খিল করে হেসে ফেলল।
শাহেদ বলল, ঠিক বিকেল সাড়ে পাঁচটায় গ্লোরিয়া জিন্স ক্যাফেতে আমি অপেক্ষায় করবো।

শাহেদ আর নীলা মুখোমুখি বসে আছে। তাদের দু'জনের সামনে কফির মগ। কফির মগ থেকে ধোয়া বের হচ্ছে। শাহেদ মুগ্ধ চোখে নীলার দিকে তাকিয়ে আছে। নীলার সাঁজ বলতে চোখে মোটা করে কাজল আর কিছুই না। কোনো কোনো মেয়ে আছে তাদের খুব বেশি সাঁজতে হয় না। শুধু মাত্র চোখে কাজল দিলেই অপূর্ব দেখায়। শাহেদ কফিতে একটা চুমুক দিয়েই বলল, শোনো মেয়ে আমি কোনো ভণিতা করতে পারবো না। তোমাকে আমার খুব ভালো লেগেছে। আমি তোমাকে ভালোবাসতে চাই। শুধু ভালোবাসবো না, আমি তোমাকে বিয়েও করবো। আমি বাবা মার একমাত্র সন্তান। ইস্টওয়েস্ট কোম্পানীতে চাকরি করি। অনেক টাকা মায়না পাই। সেগুন বাগিচা'য় আমাদের নিজের ছয়তলা বাড়ি। সব কিছু মিলিয়ে আমি মনে করি, তুমি আমার সাথে ভালো থাকবে, সুখে থাকবে।
নীলা শাহেদের চোখে চোখ রেখে বলল, কাউকে না জেনে, শুনে এবং না বুঝে এ সমস্ত কথা বলতে আপনার একটুও বাঁধল না? চেনা নেই, জানা নাই, হুট করে বলে দিলেন- ভালোবাসবেন, বিয়ে করবেন! আগে আমাকে জানুন, চিনুন, বুঝুন। আপনি কি জানেন(?) আমি একজন প্রস্টিটিউট। আমার যে উপরের রুপ দেখছেন সেটা নকল। মেকি। আমার সারা শরীরে অসংখ্য খামচি আর কামড়ের দাগ। দিনের পর দিন নানান লোকের খামচি আর কামড় খেতে খেতে গায়ের দাগ গুলো কালো হয়ে গেছে। জামা খুললেই দেখবেন কতটা কুৎসিত দেখায়।
শাহেদের চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে। নীলা গ্লোরিয়া জিন্স ক্যাফে থেকে বের হয়ে গেল। নীলার চোখেও কি পানি নেই? শাহেদ বোকার মতো চোখে পানি নিয়ে নীলার চলে যাওয়া দেখল।

রাত দশটা। চারিদিকে ঠান্ডা বাতাস বইছে। আকাশের অবস্থা ভালো না। যে কোনো সময় ঝুম বৃষ্টি নামবে। শাহেদ বসে আছে 'লা ডিপ্লোমা বারে'। এ পর্যন্ত সে সাত পেগ ভদকা খেয়ে ফেলেছে। তার লিমিট পাঁচ পর্যন্ত। মদ খাওয়া তার নেশা না। তবে মাঝে মাঝে সে খায়। সত্যি কথা বলতে নীলার কথা শুনে তার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরেছে। নীলার কথা বলার ধরন দেখেই বুঝা গেছে নীলা যা বলেছে সব সত্য বলেছে। নাটক সিনেমায় এমন হয়, তাই বলে বাস্তবে? তাও আবার তার সাথে? এ ব্যাপারটা সে কিছুতেই মানতে পারছে না। মেয়েটি এই পেশা কেন বেছে নিল? নিশ্চয় সুখে সে এই পেশা বেছে নেয়নি। পৃথিবীর কোনো মেয়েই শখ করে এই পেশায় আসে না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে এবং অন্য কোনো উপায় না থাকলে এ পেশায় আসতে বাধ্য হয়। এর জন্য দায়ী কে? সমাজ না রাষ্ট্র? না ঈশ্বর? শাহেদ নানান কথা ভাবতে ভাবতে মোট বারো পেগ খেয়ে বার থেকে বের হলো। ততক্ষনে বাইতে তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়েছে। মনে হয় আজ সারা ঢাকা শহর ডুবে যাবে। শাহেদ ভিজতে ভিজতে বাসায় ফিরছে। বৃষ্টির পানি আর তার চোখের পানি মিশে একাকার হয়ে গেছে।

এক আকাশ ভয়, শংসয় আর দ্বিধা নিয়ে শাহেদ পরের দিন চেয়ারম্যান বাড়ির ওভার ব্রীজের সামনের আবাসিক হোটেলে গেল। চারতালা উঠে যা দেখলে তার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। একটা ঘরে অনেক গুলো মেয়ে। তাদের বয়স আঠারো থেকে ত্রিশের মধ্যে। তারা প্রত্যেকে বিকট মেকাপ দিয়েছে। জামা কাপড় গুলোও খুব শালীন নয়। মেয়ে গুলো অকারণেই খুব হাসাহাসি করছে। একজন আরেকজনের গায়ে ঢলে পড়ছে। শাহেদ নীলাকে খুঁজছে। ঠিক এমন সময় একজন দালাল এসে দাঁড়ালো শাহেদের সামনে। দালাল হাত কচলাতে কচলাতে বলল, স্যার আজ ভালো বেশ কয়েকটা মাল আছে। আপনি পছন্দ করে নিজে বেছে নিন। দালাল নিজেই একটা মেয়েকে টেনে নিয়ে এলো শাহেদের কাছে। বলল, স্যার এটাকে নিয়ে ওই রুমে যান। খুব এক্সপার্ট আছে। আপনাকে খুশি করে দিবে। তাছাড়া আজকে এখনও কারো সাথে করে নাই। আপনিই প্রথম। দালাল কি বলছে, সেদিকে শাহেদের কোনো লক্ষ্য নেই, সে কিছুই শুনছে না। সে খুজছে নীলাকে। ঠিক এমন সময় শাহেদ নীলাকে দেখতে পেলো। একলোক নীলাকে নিয়ে একটা রুমে ঢুকে গেল।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৩৪
৩২টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×