somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

একটি সাজানো বাগান চাই

২৪ শে মে, ২০১৮ রাত ১১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শাহেদ আজ একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলল।
সে চাকরি ছেড়ে দিবে। আর না, অনেক হয়েছে। গত পাঁচ বছর ধরে সে একটানা চাকরি করে যাচ্ছে। প্রতিদিন মনে মনে সে একবার করে বলেছে, চাকরির মায়রে বাপ। চাকরি করতে এসে তার অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। মানুষের বদমাশি গুলো তার চোখে স্পষ্ট ধরা পড়েছে। এই চাকরি করে-করে তার সাহিত্যিক মন নষ্ট হয়ে গেছে। গত পাঁচ বছর সে ঠিক মতো সাহিত্য চর্চা করতে পারেনি। সারাদিন গাধার মতো পরিশ্রম করে, রাতে বাসায় ফিরেই কিছু খেয়ে ঘুম। বউ নিয়ে যে শাহেদ চাঁদনী রাতে একটু ছাদে যাবে সেই উপায় নাই। শরীর ভরা থাকে ক্লান্তিতে।

শাহেদের বউ আছে। একটা পরীর মতো সুন্দর ফুটফুটে মেয়ে আছে। আপনারা হয়তো ভাবছেন, চাকরি ছেড়ে দিলে- শাহেদের সংসার চলবে কি করে? সেই ব্যবস্থা শাহেদ করতে সক্ষম হয়েছে। সে অনেক কষ্ট করে একটা ছোট ফ্লাট কিনতে সক্ষম হয়েছে। এই ফ্লাট থেকে প্রতিমাসে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা ভাড়া সে পাবে। এই ভাড়ার টাকা দিয়ে সে কোনো রকমে ডাল ভাত খেয়ে বউ বাচ্চা নিয়ে জীবন যাপন করতে পারবে। যদিও ৩৫ হাজার টাকা এযুগে কিছুই না। তারপরও ভালো। কারো কাছে হাত তো পাততে হবে না। মানুষের কাছে হাত পাতা প্রচন্ড কষ্টের।

শাহেদের সহকর্মীরা একেকটা শুয়োরের বাচ্চা। অমানুষের বাচ্চা। পাঁচটা বছর তার সীমাহীন কষ্ট হয়েছে একদল শুয়োরের সাথে অফিস করতে। বিবেকহীন মানুষ তারা। শাহেদকে সহজ সরল পেয়ে কুকুরের মতোন খাটিয়েছে। তারপরও শাহেদ মুখ বুঝে হাসি মুখে সব সহ্য করেছে। কারন এই চাকরি ছেড়ে দিলে, অন্য চাকরি পাওয়া মুখের কথা না। দেশে চাকরির বাজার একেবারেই মন্দা। ক্ষমতাবান মামা চাচা অথবা টাকা ছাড়া চাকরি সম্ভব না। নো নেভার। অবশ্য অল্প ক'জন আছেন ভাগ্যবান- মামা চাচা অথবা টাকা ছাড়াই চাকরি পেয়ে যান।

শাহেদ ঠিক করেছে বাকি জীবন আর কাজ করবে না। ফ্লাট ভাড়ার টাকা দিয়ে চলবে। অলরেডি তার পয়ত্রিশ বছর পার হয়ে গেছে। আর পয়ত্রিশ বছর কি সে বাঁচবে? কাজেই যতদিন বাঁচে হাসি আর আনন্দে বাঁচবে। সে সারাদিন তার প্রিয় মুভি গুলো দেখবে। প্রিয় বই গুলো পড়বে। আর ঘুরে বেড়াবে পছন্দের জায়গা গুলোতে বউ বাচ্চা নিয়ে। সকালে সুন্দর ঘুম বাদ দিয়ে অফিস যাওয়ার তাড়া থাকবে না। বাস আর রাস্তা ঘাটের যে অবস্থা, সকালে অফিসে যেতেই সব শক্তি শেষ হয়ে যায়। শাহেদ আজ আনন্দিত, ওই বদ সহকর্মীদের সাথে উঠা বসা করতে হবে না। তাদের মুখ দেখতে হবে না। তাদের কটূ কথা বা গা জ্বালানো কথা শুনতে হবে না। আল্লাহ তার দিকে মুখ তুলে তাকিয়েছেন এতদিন পর।

গত দশ বছরে শাহেদ অনেক কষ্ট করে, জীবনটা তেজপাতা করে একটু একটু করে টাকা জমিয়েছে এবং তার বাবা তাকে কিছু দিয়েছে তাই দিয়েই সে ফ্লাট কিনেছে। মানুষের জীবন অনেক ছোট। এই জীবনটা শুধু দুঃখে, কষ্টে পার করাটা কি ঠিক? আপনারা হয়তো বলবেন, কাজের মধ্যেই আনন্দে খুঁজে নিতে হয়। কাজ'ই মানুষকে মহৎ করে। যার কাজ সুন্দর, তার সব সুন্দর। এইসব ভাবের কথা দিয়ে জীবন চলে না। সহজ সরল সত্য কথা হলো- কোনো চাকরিজীবি সুখে নেই। তাদের পোহাতে হয় সীমাহীন কষ্ট। আর অপমান। মাস শেষে অল্প কয়টা টাকার জন্য কি প্রচন্ড কষ্ট'ই না করতে হয়। শাহেদের ঢাকা শহরের সব অফিস ঘুরা হয়ে গেছে। সে জানে কোন অফিসের কি অবস্থা।

শাহেদ বাচ্চাকে পড়াবে। স্কুলে নিয়ে যাবে। বউকে ঘরের কাজে সহায়তা করবে। চাকরি করলে তো বউকে সময় দেওয়ার সময়'ই পাওয়া যায় না। সেই সকালে বের হতে হয়। ফিরতে হয় রাতে। শুক্রবার ছুটির দিনেও অফিস কোনো না কোনো কাজ দিয়ে ব্যস্ত রাখে। আর তাদের কথা মতো কাজ না করলে অফিস থেকে বের করে দিবে। শাহেদের তো আরামের চাকরি না। সারাটা দিন রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে লোকাল বাসে চড়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে হয়। সে তো জমিদারের মতো- এসি রুমে বসে অফিস করে না। এক কথায় তার চাকরি কামলার চাকরি। আর এই চাকরি করতে গিয়েই সে বুঝেছে, ঢাকা শহরের সব মানূষ নষ্ট হয়ে গেছে, পচে গেছে। তার প্রমান পাওয়া যায়- রাস্তা ঘাটে, বাসে, অফিস আদালতে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৮ রাত ১১:১৮
১৭টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×