somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

নিজের চোখে দেখা কয়েকটি মৃত্যু

১৯ শে জুন, ২০১৮ রাত ৮:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১। ভদ্রমহিলা আমাদের বাসায় ভাড়া থাকতেন। তার দুইটা মেয়ে দশ-বারো বছর। স্বামী রেড ক্রিসেন্টে চাকরি করেন। কথা নেই, বার্তা নেই মহিলা হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। প্রচুর বমি করে বিছানায় লুটিয়ে পড়লেন। স্বামী এসে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেন। ডাক্তার বললেন, দুর্বলতা থেকে এমনটা হয়েছে। বিশ্রাম এবং প্রচুর ফলমল খেতে হবে। সাতদিনের মধ্যে মহিলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলেন। কিছুই খেতে পারেন না। খেলেই বমি। সারাক্ষন বিড়বিড় করে যেন কি বলেন। অদৃশ্য মানুষদের সাথে কথা বলেন। আমি তাকে দেখতে দেখলাম- তিনি পাগলের মতো আচরন করছেন। ছটফট করছেন। নানান আবোল তাবোল কথা বলছেন। রুগ্ন শরীর নিয়ে ইশারায় কিছু বলতে চাচ্ছিলেন। বলতে পারলেন না। তিনি মারা গেলেন। আমার জীবনে দেখা প্রথম মৃত্যু।

২। আমার খালুর ছিল লোহা লক্করের ব্যবসা। তিনি প্রতিদিন বাসায় ফেরার সময় দুই হাত ভর্তি ফল নিয়ে বাসায় ফিরতেন। তার অনেক গুলো ছেলেমেয়ে। এখন সবাই বড় হয়েছে। নামী দামী চাকরি করে। একদিন খালু সাহেব তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে এলেন। সেদিন তার হাতে ফল ছিল না। খালা বললেন, আজ তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে এলে যে! খালু বললেন, আজ আমার শরীরটা ভালো লাগছে না। তিনি বিছানায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকলেন। আমি তার রুমে গিয়ে দেখি- তার নাক দিয়ে গলগল করে রক্ত পড়ছে। তিনি দুইহাতে নাক চেপে বসে আছেন। খালু চোখের ইশারায় আমাকে কিছু বলতে চাচ্ছিলেন। আমি এত রক্ত দেখে দিশেহারা হয়ে গেলাম। খালু সাহেব আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাত বাড়িয়ে দিলেন। আমি তার কাছে গিয়ে তার হাত ধরলাম। তিনি আমার কোলে মারা গেলেন।

৩। আমার বন্ধুর বাবা ওয়াদুত সাহেব বারডেম হাসপাতালে ভর্তি। তিনি একজন সরকারি চাকরিজীবি। আমাকে খুব পছন্দ করেন। আমি রোজ তাকে দেখতে হাসপাতালে যাই। তার কি অসুখ ডাক্তাররা ধরতে পারছেন না। তবে রক্তে সমস্যা এইটুকু ডাক্তাররা বলেছেন। সতের দিন তিনি হাসপাতালে আছেন। এক সন্ধ্যায় তাকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছি। তখন তিনি ঘুমাচ্ছিলেন। আমাকে রেখে আমার বন্ধু আর তার মা বাসায় গেল। তারা রাতের খাবার খেয়ে হাসপাতালে ফিরবেন। তারা হাসপাতালে ফিরে এলে আমি বাসায় ফিরব। আমি ওয়াদূত সাহেবের পাশের সিটে বসে পত্রিকা পড়ছি। হঠাত ওয়াদুত সাহেবের ঘুম ভেঙ্গে গেল। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, আমি এখানে কেন? আমার খুব ভয় করছে। আমি বললাম, আংকেল কোনো ভয় নেই। আমি আছি। আমি ওয়াদুত আংকেলের পাশে বসে তার হাত ধরলাম। তিনি দরজার দিকে তাকিয়ে বললেন, আমি যাবো না, আমি যাবো না। আমার ভয় লাগছে। আমাকে নিও না। প্রচন্ড ভয়ে তার চোখ মুখ সাদা হয়ে গেছে। তার পুরো শরীর কাঁপছিল। কাঁপতে কাঁপতে তিনি আমার কোলে মাথা রেখে মারা গেলেন।

৪। কোনো এক শুক্রবার, বিকেলবেলা। উত্তর বাসাবো যাচ্ছিলাম। ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। আমার সামনে এক মেয়ে ও তার বাবা হেঁটে হেঁটে গল্প করতে করতে যাচ্ছে। নিরিবিলি রাস্তা। হঠাৎ মেয়েটির বাবা বুকে হাত দিয়ে রাস্তায় পড়ে গেলেন। মনে হচ্ছিল তীব্র ব্যথায় তিনি ছটফট করছিলেন। মেয়েটা চিৎকার করে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিল। আমি দৌড়ে কাছে গেলাম। মেয়েটি তার বাবাকে আমার কোলে দিয়ে রিকশা সিএনজি খুজছে। পুরো রাস্তা খালি, কোনো সিএনজি রিকশা নাই। লোকটি ব্যথায় বিকট আর্তনাদ করতে করতে মনে হয় আমার কোলেই মারা গেলেন। প্রায় বিশ মিনিট পর আমি আর মেয়েটি তার বাবাকে টেনে হেচড়ে বড় রাস্তায় নিয়ে যাই। তারপর সিএনজিতে করে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নিয়ে যাই। ডাক্তাররা দেখে বললেন, উনি মারা গেছেন।

৫। সুরভির মা কিভাবে মারা গেলেন সেই ঘটনাটা বলি। তখন অবশ্য সুরভির সাথে আমার পরিচয় ছিল না। পুরো ঘটনা সুরভির কাছ থেকে শুনেছি। হুমায়ূন আহমেদের যে রোগ হয়েছিল, সুরভির আম্মুর সেই অসুখটাই হয়ে ছিল। সুরভির আম্মু তিন মাস ধরে হাসপাতালে ভর্তি। পানির মতো টাকা খরচ হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে এক লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। বাংলাদেশে অসুখ বিসুখ মানেই টাকার খেলা। প্রচুর টাকা লাগে।
সুরভির মা বিছানা থেকে নামতে পারেন না। মাথার চুল পড়ে যাচ্ছে। পুরো শরীর শুকিয়ে গেছে। একটূ কথা বললেই হাঁপিয়ে উঠেন। সুরভি সারারাত জেগে মায়ের পাশে বসে থাকে। একদিন রাত দুইটায় ঘুম থেকে উঠে তিনি সুরভিকে বললেন, আজ শরীরটা খুব ভালো লাগছে। আমাকে একটা সুন্দর শাড়ি পড়িয়ে দে, মাথায় তেল দিয়ে চুল আচড়ে দে। সুরভি তার মাকে শাড়ি পড়িয়ে দিন, মাথায় তেল দিয়ে চুল আচড়ে দিল। তারপর দুইজন নানান বিষয় গল্প করতে থাকলো। দুইজনই খুব হাসছিল। গল্পে গল্পে ভোর হতে শুরু করেছে। মসজিদে আযান দিল। মা মেয়ে দুইজন একসাথে নামাজ পড়লো। তারপর তিনি মেয়েকে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদলেন। সুরভিকে অনেক আদর করে দিলেন, দোয়া করে দিলেন, কপালে চুমু দিয়ে দিলেন। তারপর সুরভিকে অনেকক্ষন শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখলেন নিজের বুকের মধ্যে। কিছুক্ষন পর সুরভি বুঝতে পারলো তার মা মারা গেছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০১৮ রাত ৮:১৭
২৯টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×