১৯৭৩ সালের এক রাত, নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে আইসল্যান্ডবাসী। কিন্তু তারা জানেনা আইসল্যান্ডের মহাকাশে তখন প্রবল আলোড়ন। উল্কাপিন্ড ভলকানো ছুটে আসছে কোনো সতর্কসংকেত ছাড়াই। যেকোনো মূহুর্তে ভলকানোর আঘাতে বিধ্বস্ত হবে আইসল্যান্ড। অনেক প্রাণের স্পন্দন থেমে যাবে, অনেক স্বপ্নের অকাল সমাধি ঘটবে। হয়তো ঘুমের মধ্যেই অনেকে চলে যাবে না ফেরার দেশে। কিছুক্ষণ পরই ঘটল সেই অনাকাঙ্খিত বিস্ফোরণ। ভলকানো আঘাত করল আইসল্যান্ডের হৃদপিন্ডে। ছাড়খার হয়ে গেল অনেক বসতবাড়ি, জমি-জমা।
পুড়ে ছাই হয়ে গেল পাথুরে পাহাড়গুলো। সব রাস্তাঘাট নিঃশ্চিহ্ন হয়ে গেল, প্রায় সব পরিবারই তাদের সহায়-সম্বল হারিয়ে পথে বসে গেল। আল্লাহর অসীম কুদরতে সব ধ্বংস হয়ে গেলেও ঘনবসতি পূর্ণ না হওয়ায় একটি মানুষেরও মৃত্যু হলো না। কিন্তু ভলকানোর আঘাত চিরস্থায়ী একটা দাগ রেখে গেল আইল্যান্ডিকদের ভবিষ্যতের দেয়ালে।
আইসল্যান্ডের জনগন খুব বেশ শান্তিপ্রিয় এবং মানবিক মানসিকতা সম্পন্ন। পৃথিবীর মধ্যে এই দেশে অপরাধীর সংখ্যা সবচেয়ে কম। ইউরোপ মহাদেশের একটি দ্বীপ রাষ্ট্র আইসল্যান্ড। রাজধানী রেইকিয়াভিক। ১৭৮৬ সালে জন্ম এই শহরের। শুরুতে নরওয়ে-র অধীনে থাকলেও, ১৯১৮ সালে আইসল্যান্ড স্বাধীনতা পায় এবং ১৯৪৪ সালে এখানে প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা হয়। এই দেশটি অতি রুক্ষ। গাছের পরিমাণ খুবই কম, কোনো বন নেই। এখানে কৃষি ও খনিজ সম্পদ খুব কম। আইসল্যান্ডের পানি এতটাই বিশুদ্ধ যে কোনো প্রকার বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া ছাড়াই পানি প্রত্যেক ঘরে ঘরে সরবরাহ করা হয়।
এই দেশের জনগন নিজেদের একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে মনে করতেই পছন্দ করেন। দেশটির আবহাওয়া মাঝারি ধরনের অর্থাৎ বেশি গরমও নয় আবার বেশি ঠান্ডাও নয়। প্রাচীন নরওয়ে দেশের ভাষা থেকে আইসল্যান্ডের ভাষার উৎপত্তি। আইসল্যান্ডের সাথে নিকটতম ইউরোপীয় প্রতিবেশী দেশ স্কটল্যান্ডের দূরত্ব প্রায় ৮০০ কিলোমিটার। আইসল্যান্ড পৃথিবীর তৃতীয়-সুখী দেশ। গ্রীষ্মে গড় তাপমাত্রা ১০ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাফেরা করে। এই দেশে কোনো এতিমখানা বা বৃদ্ধাশ্রম নেই।
দ্বীপের চারপাশের সমুদ্রে বিভিন্ন জাতের মাছ পাওয়া যায় এবং মৎস্যশিকার এখানকার লোকদের আদি ও প্রধান পেশা। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের মূলপর্বে উঠেছে, সেই সঙ্গে জনসংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম দেশ হিসেবে বিশ্বকাপে ওঠার রেকর্ড গড়েছে দেশটি। ১৯১২ সালে আইসল্যান্ডে ফুটবল লিগ শুরু হলেও প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ১৯৩০ সালে। কিন্তু এই ম্যাচে ফিফার কোনো স্বীকৃতি ছিল না। আইসল্যান্ড প্রথম ফিফা স্বীকৃত আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ১৯৪৬ সালে ডেনমার্কের সঙ্গে। মজার কথা হলো- আইসল্যান্ড ফুটবল দলের সদস্যরা প্রত্যেকে অপেশাদার। আইসল্যান্ডের আয়তন প্রায় ৩৯ হাজার বর্গ মাইল। যা প্রায় বাংলাদেশের আয়তনের এক-তৃতীয়াংশ সমান। তিমি মাছ প্রদর্শনীতে আইসল্যান্ড বিখ্যাত। এর থেকে সরকারি খাতে মোটা অংকের রাজস্বও যোগ হয়ে থাকে। এদেশের পুলিশ তাদের সাথে অস্ত্র হিসেবে বন্দুক বহন করে না। ঝামেলা বিহীণ একটি দেশ।
৪ লাখ ৩২ হাজার মানুষের বসবাস আইসল্যান্ডে। এর মধ্যে প্রায় ১ লাখ ২২ হাজার অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক মানুষ আইসল্যান্ডের রাজধানী রিকজাভিক বা এর আশেপাশের এলাকায় থাকে। প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন একজন মহিলা। তিনি সমকামী ছিলেন তবে তিনি তা গোপন করেননি। এই দেশের জনগন কোক এবং আইসক্রীম খেতে খুব পছন্দ করে। যদিও বছরের বেশিরভাগ সময় বরফে ঢাকা থাকে দেশ।
সারাবিশ্বে বিখ্যাত খাবারের রেস্তোরা ম্যাকডোনাল্ড’স। ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশেই এর শাখা রয়েছে। তবে আইসল্যান্ডে কোনো ম্যাকডোনাল্ড’স নেই। প্রায় ৯৮% মানুষ ইন্টারনেট ব্যাবহার করে। এই দেশের জনগন প্রচুর বই পড়ে। এক জরিপে বলা হয়েছে, আইসল্যান্ডের ১০% মানুষ তাদের জীবনকালে একটি হলেও বই প্রকাশ করে। পৃথিবীর সর্বোচ্চ বই এবং পত্রিকা প্রকাশনী রয়েছে তাদের।
দেশটি এতটাই পরিষ্কার যে সেখানে কোনো মশা নেই। দেশেটির জাতীয় খেলা হ্যান্ডবল। আইসল্যান্ডে কোনো সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী বা বিমান বাহিনী নেই। ১০০০ বছর আগে দেশটিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আইসল্যান্ডের সংসদ ৯৩০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি বিশ্বের প্রাচীনতম সংসদ এর মধ্যে একটি । এই দেশে মানুষ থেকে ভেড়ার সংখ্যা দ্বিগুণ। এই দেশে মুসলমানের সংখ্যা ৭৯০ জন। রমজান মাসে তাদের ২২ ঘন্টা রোজা রাখতে হয়।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:০১