দক্ষিন এশিয়ার একটি দেশ-বাংলাদেশ। ১৯৪৭ সালে দেশটির সীমানা নির্ধারণ হয়। ১৯৭১ সালে দেশটি স্বাধীন হয়। স্বাধীনতার পর থেকেই দেশটিতে প্রতি বছর বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং নদী ভাঙ্গন সহ অনেক সমস্যা বিদ্যমান। মাত্র ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই দেশটাতে জনসংখ্যা প্রায় আঠারো কোটি। রাজধানী হচ্ছে ঢাকা। ভয়াবহ এক নোংরা শহর। ঢাকাতে দুই কোটির উপরে লোক বাস করে। রাজধানীতে চোর, ডাকাত, পকেটমার এবং ছিনতাইকারী আছে। দেশটির বেশির ভাগ মানুষই অমানবিক। তারা কোনো নিয়ম নীতি মানেন না। যেখানে সেখানে গাড়ি হোন্ডা পার্ক করে রাখে। উলটো পথ দিয়ে গাড়ি/হোন্ডা চালানো অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেছে। ফুটপাতে নানান রকম দোকান, এসব দোকান থেকে পুলিশ নিয়মিত টাকা নেয়। এই দেশের সরকারী অফিস গুলোতে ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না। ঘুষ খাওয়ার জন্য তারা যেন হা করে বসেই থাকে। এই দেশে চার কোটির বেশি যুবক বেকার। এই দেশে চাকরি পাওয়ার জন্য মামা চাচার জোর থাকা লাগে। এই দেশ যারা পরিচালনা করেন- তারা কোটি কোটি টাকার মালিক। খোজ নিলে জানা যাবে তাদের প্রত্যেকের বিদেশে বাড়ি আছে। এবং নিজ দেশে গাড়ি বাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অভাব নেই।
এই দেশ বিশ্বের কোনো দেশের সাথেই কোনো কিছুতেই পারে না। ফুটবলে পারে না, ক্রিকেটে পারে না, হকি'তে পারে না, সাঁতার এ পারে না। তবে এই দেশ বিশ্বের অনেক দেশ থেকে এগিয়ে আছে দুর্নীতিতে, জনসংখ্যায়, আর অমানবিক আচরণে। এই দেশের রাষ্ট্রপতি শরীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে বিদেশ যান। হয়তো দেশের চিকিৎসার প্রতি তার কোনো আস্থা নাই। এই দেশের সরকারী হাসপাতাল গুলো দালালে ভরা। টাকা দিলে সিট পাওয়া যায় নইলে ফ্লোরে বিছানা পেতে রোগীকে থাকতে হয়। এই দেশে সরকারি অফিসের একজন কেরানীরও পাঁচ তালা বাড়ি আছে দুই তিনটা। এই দেশের নিয়ম হলো- যাদের টাকা আছে তাদের আরও টাকা হয়। এবং যাদের টাকা নাই তাদের কোনো কালেও টাকা পয়সা হয় না। তারা কোনো রকমে ডাল ভাত খেয়ে জীবন যাপন করে। এই দেশের সব শ্রেণির মানূষ তেলামি, চামচাগিরি খুব পছন্দ করে। এই দেশের সবচেয়ে অদ্ভূত নিয়ম হলো- যারা চাকরি করে তারা একসময় অবসর নেয় কিন্তু যারা রাজনীতি করে তারা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অবসর নেন না। তারা ক্ষমতা খুব ভালোবাসেন। রাজনীতিবিদিদের মিথ্যা কথা এদেশের মানুষ সত্য বলে ধরে নেয়। এই দেশের রাজধানীতে পনের মিনিট বৃষ্টি হলে হাঁটু পর্যন্ত পানি জমে যায় রাস্তায়। সমুদ্রের মতো বিশাল বিশাল ঢেউ দেখা যায়। স্বাধীনতার পর থেকেই এ অবস্থা। কোনো সরকারই আজ পর্যন্ত বন্যা থেকে জনগনকে মুক্তি দিতে পারেন নি। অথচ কথা ছিল এ শহরকে সিঙ্গাপুর বানানো হবে।
সুপ্রিম কোর্ট বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত। এই আদালতে আপনি প্রচুর টাকা খরচ করলে যে কোনো মামলা জিতে যাবেন। এই দেশের মানুষের সাথে দেশের ওয়েদারের খুব মিল। মুহূর্তেই বদলে যায়। গরমের সময় বৃষ্টি আর বৃষ্টির সময় প্রচন্ড রোদ থাকে। এই দেশের মানুষ গাছ কাটতে খুব পছন্দ করে। সুযোগ পেলেই তারা গাছ কাটে। নানান অজুহাতে তারা গাছ কাটে। এই দেশে অসংখ্য নদী আছে। কিন্তু তারা কোনো দিনও নদী শাসন করতে পারেনি। নদী যে একটি দেশের কত বড় সম্পদ তা তারা আজও বুঝতে পারেনি। এই দেশে কোনো সৎ মানুষ নেই। সৎ মানুষ যা ছিল তারা সবাই ৭১ এর যুদ্ধে মরে গেছে। এই দেশের মানূষ টাকাওয়ালা লোকদের খুব সম্মান করে। যদিও টাকাওয়ালা লোকটা অসৎ ভাবে টাকা করেছে। দুষ্টলোকরা কিভাবে টাকা করেছে তা নিয়ে দেশের জনগনের কোনো মাথা ব্যথা নাই। এই দেশের মানুষ খুব সাহসী। তারা বাঘ, হাতী পিটিয়ে মেরে ফেলে। এমনকি তারা দিনের বেলা হাজারো মানুষের সামনে কুপিয়ে মানুষ মেরে ফেলে, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হাড় ভেঙ্গে দেয়। গলা কেটে মানুষ মেরে ফেলে। পুলিশ তাদের কোনো দিনও ধরতে পারে না। র্যাব নামের এক বাহিনি আছে তারা মানূষ ধরে গুলি করে মেরে ফেলে। তাদের বিচারের আওতায় আনা হয় না। বড় অদ্ভুত দেশ এই বাংলাদেশ! এই দেশে কিছু মানুষ খারাপ কাজ করে তাদের টাকা নেই বলে আর কিছু মানুষ খারাপ কাজ করায় তাদের প্রচুর টাকা আছে বলে।
পৃথিবীর মধ্যে সবচাইতে কম মাংস খায় বাংলাদেশের মানুষ। খাবে কিভাবে(?) এক কেজি মাংসের দাম পাঁচ শ' টাকা। বছরে একজন বাংলাদেশী গড়ে ৪ কেজি মাংস খায়। পৃথিবীর যে ৫৮ টি দেশে এখনো মৃত্যুদণ্ড বহাল আছে তার মধ্যে একটি হলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মানুষ খুব দুঃখি। তারা ভাতে দুঃখি, কাপড়ে দুঃখি, ভালোবাসায় দুঃখি, প্রেমে দুঃখি, খেলায় দুঃখি, সুখে দুঃখি- তাদের দুঃখের শেষ নেই। ঢাকা শহর খুবই নোংরা। শুধু ঢাকা শহর না আসলে সারা দেশটাই নোংরা। পৃথিবীর যে ৫৮ টি দেশে এখনো মৃত্যুদণ্ড বহাল আছে তার মধ্যে একটি হলো বাংলাদেশ। ছোট্ট এই দেশটিতে প্রায় সাতশোরও বেশি নদী আছে। এই নদীতে ডুবে প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ মরে। এই দেশে কোটি কোটি টাকার ইয়াবা বিক্রি হয়। এই দেশে পরিবহন সেক্টরের অবস্থা খুব বাজে। নৌ পরিবহনের অবস্থাও ভালো না। রেল যোগাযোগের অবস্থাও ভালো না। বেশির ভাগ সময়ই সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। এক ঘন্টার রাস্তা যেতে সময় লাগে তিন ঘন্টা। এই দেশের ফুটপাতে কুকুরের পাশাপাশি মানূষও ঘুমায়। বছরের পর বছর ফুটপাতে তারা থাকে পুরো পরিবার নিয়ে। মহিলা অধিদফতরে গেলে দেখা যায়- প্রতিদিন অসংখ্য নারী তার স্বামীর নামে নালিশ দিচ্ছে। স্বামী সংসারের খরচ দেয় না, মারধোর করে। নেশা করে। ইত্যাদি ইত্যাদি। আবার সিটি কর্পোরেশনের অফিসে গেলে দেখায় যায় হাজার হাজার তালাকের কাগজ জমা পড়েছে। এই দেশে শিক্ষার মান খুব খারাপ। আসলে দারিদ্রতা বাড়ার ফলে শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মানুষ।
দেশটিতে শিক্ষিতের হার ৬৩% এবং দুই হাজারের বেশি পত্র পত্রিকা প্রকাশ হলেও, গড় পাঠক মাত্র ১৫%। বাংলাদেশের মতো খারাপ রাস্তা পৃথিবীতে আর কোথাও নেই। একই রাস্তা বছরে বেশ কয়েকবার ভাঙ্গা হয়। এদেশে যারা ঠিকাদারি ব্যবসা করে- তারা এক অর্থে ডাকাত এবং অমানুষ। কোনো রকমে গোঁজামিল দিয়ে কাজ শেষ করে। পনের দিন পর দেখা যায়- রাস্তা নষ্ট হয়ে যায়। রাস্তার যেমন বেহাল দশা তেমনি এদেশের মানুষের মন মানসিকতারও বেহাল দশা। এই আধুনিক যুগে এসেও, কোনো মেয়ে রাস্তা দিয়ে হেটে গেলে সব শ্রেনীর পুরুষ অতি কুৎসিত ভাবে তাকায়, তাকাবেই। কোলকাতাতে কোনো মেয়ে হেঁটে গেলে কেউ কুৎসিত ভাবে তাকায় না। এই বাংলাদেশে, এই যুগে এসেও একটা মাস্টার্স পাশ করা মেয়ে কোথাও একা চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যেতে সাহস পায় না। বাংলাদেশে ভ্রমন প্রিয় মানূষের সংখ্যা খুব কম। বেশির ভাগ মানুষই দরিদ্র, ঠিকভাবে তিনবেলা খেতে পায় না- ভ্রমণ করবে কি! তবে দরিদ্র এই দেশে দেখার অনেক কিছু আছে। যেমনঃ কক্সবাজার, সুন্দরবন, চা বাগান এবং নীলগিরি পাহাড় ইত্যাদি। কিন্তু বিদেশী পর্যটকেরা আসে না। কারন নানান সমস্যায় জর্জরিত এই দেশে, কোথাও গেলে ভোগান্তির শেষ নেই। যদিও দেশটির বর্তমান সরকার বলছে 'দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে'। কিন্তু আজও মানুষ ফুটপাতে ঘুমায়। না খেয়ে থাকে, চাকরি নেই, অসংখ্য নারী ফুটপাতে পতিতাবৃত্তি করে। মনে হয়, যা উন্নয়ন হওয়ার ওদের হয়েছে। ওদের ছত্রছায়ায় থাকা লোকদের হয়েছে। সাধারন মানুষদের না।
এই দেশের বেশির ভাগ মানুষ ধার্মিক। তাই অতি চালাক ব্যাক্তিরা ধর্মকে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থে। এই দেশে সবচেয়ে বড় সমস্যা যোগ্য নেতৃত্বের অভাব। সুতরাং দেশে একটাই সমস্যা অসৎ, অশিক্ষিত, লোভী রাজনীতিবিদ। অবশ্য যে জাতি যেমন, তাদের নেতাও তেমন। কারোর মধ্যেই সামগ্রিক অর্থেই দেশপ্রেম দেখা যায় না। ম্যালথাস-এর মতে- “একটি দেশের চরম দারিদ্র ও আর্থিক অস্বচ্ছলতার প্রধান কারণ, সে দেশের ভূমির তুলনায় জনসংখ্যার ব্যাপক বৃদ্ধি।” আমি নিজেই এই দেশের সন্তান। এই দেশেই খেয়ে পড়ে বেঁচে আছি। দেশটাকে অনেক ভালোবাসি। আমার বিশ্বাস এই দেশ এরকম থাকবে না। এই দেশ বদলে যাবে। বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। তখন কেউ নাক ছিটকাতে পারবে না। এই দেশে এখনও অনেক ভালো মানুষ আছে। তারাই দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এই দেশ আমাদের। এই দেশটাকে সামনের দিকে আমাদেরই এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। অন্য দেশের মানূষের দায় পড়েনি এই দেশকে নিয়ে ভাবার। কাজেই নিজেদের স্বার্থে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে আমাদের সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসাথে কাজ করতে হবে। সবাই একসাথে চাইলে- দেশকে খুব অল্প সময়ে অনেক দূর নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
নিজের দেশের ভালো ব্যাপারগুলো আমাদেরই তুলে ধরতে হবে, বাহিরের কেউ এসে এই কাজটি করবে না - এটা যত দ্রুত আমরা বুঝতে পারবো ততোই দেশ ও দেশের মানুষের ভালো। এই দেশ ভালো থাকুক, ভালো থাকুক এই দেশের সমস্ত মানুষেরা, ভালো থাকুক পৃথিবীর সমস্ত মানুষেরা। জয় বাংলা।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:০১