লেখা শুরু করার আগে কয়েকদিন আগে স্বপ্নে কি দেখলাম সেটা বলে নিই।
মেসি ঢাকা এসেছে। মেসি!! সে বাংলাদেশের ফুটবল দলের কোচ হয়েছে। এবং ঘোষনা দিয়েছে সে কোনো পারিশ্রমিক নিবে না। বিনা পারিশ্রমিকে সে খেলা শেখাবে। মেসি জেনেছে বাংলাদেশ একটি দরিদ্র দেশ। তারা ফুটবল মনে প্রানে খুব ভালোবাসে। এবং এই দেশে তার ভক্তের সংখ্যা অ-নে-ক। তাই সে বাংলাদেশের কোচ হবার ঘোষনা দিয়েছে। তার বিশ্বাস ২০২২ সালে কাতারে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ ফুটবলে অংশগ্রহন করার সুযোগ পাবে। সে বাংলাদেশ সরকারের কাছে ফুটবলে উন্নয়ন করার জন্য কি কি করতে হবে তার একটা লিস্ট দিয়েছে। মধুর একটা স্বপ্ন দেখে আমারে ঘুম ভাঙল। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি তখনও আকাশ ফরসা হতে শুরু করেনি। কিন্তু মসজিদে আযানের ধ্বনি শুনতে পেলাম। স্বপ্নটা এত স্পষ্ট দেখলাম, যেন স্বপ্ন নয় বাস্তব। খুশিতে মনটা ভরে গেল।
খুব দুঃখের সাথে বলছি- বাংলাদেশ কোনো কিছুতেই পারে না। তার প্রধান কারণ তারা দুর্নীতিবাজ। বড় বেশি অমানবিক এবং লোভী। এই দেশের বেশির ভাগ জনগন দেশ নিয়ে ভাবে না। ভাবে শুধু নিজেকে নিয়ে। নিজেকে নিয়ে ভাবতে গিয়েই দেশের বারোটা বাজাচ্ছে। এবারে ফ্রান্স বিশ্বকাপ চাম্পিয়ন হয়ে- পেল বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩১৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। আর এবার ফিফার মোট পুরস্কার ছিল ৪০০ মিলিয়ন ডলার। খেলায় অংশ গ্রহনকারী ৩২ দলের প্রায় আটশ' খেলোয়াড় এই ৪০০ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে। সে যাই হোক, আমরা কেন ফুটবলে পারবো না? আমাদের পারতে হবে। সে যোগ্যতা আমাদের আছে। সবার প্রথমে আমাদের মাঠ দরকার। কমপক্ষে পনেরটা বিশ্বমানের মাঠ। এই মাঠ তৈরি করতে কারো কাছে হাত পারতে হবে না। আমাদের দেশে যে পরিমান দুর্নীতিবাজ আছে, তাদের যে পরিমান টাকা দেশ বিদেশে আছে- সেই টাকা দিয়ে অনায়াসে আধুনিক মাঠ বানানো কোনো ঘটনা নাই না। সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। চার সদস্য বা সাত সদস্য কমিটি ঘোষণা করে ফেলে রাখলে হবে না।
সারা বাংলাদেশ থেকে ঘোষনা দিয়ে খেলোয়াড় বাছাই করে নিতে হবে। প্রতিটা জেলা থেকে। কমপক্ষে একশো জন। সেনা বাহিনীতে যেভাবে লোক নেয় অথবা ক্লোজআপ ওয়ান যেভাবে সংগীত শিল্পী বেছে নেওয়া হয় সেভাবে খেলোয়াড় বেছে নিতে হবে। তারপর প্রতিটা খেলোয়াড় তৈরি করে নিতে হবে। তাদেরকে দিয়ে একটা শক্ত দল গঠন করতে হবে। ঝড় তুফান যা-ই আসুক রোজ তাদের অনুশীলন করতে হবে। এবং এই ফুটবল টিমের প্রতিটা সদস্য যেন মন প্রান দিয়ে খেলতে পারে সেদিকে খুব মনোযোগ দিতে হবে। তাদের পারিশ্রমিক অনেক বেশি দিতে হবে। যেন তাদের পরিবারের বেগ পেতে না হয়। পরিবার শান্তিতে থাকলে খেলোয়াড়রা মন প্রান দিয়ে খেলতে পারবে। যত টাকা লাগুন ভালো কোচ আনতে হবে। দক্ষ কোচ আনতে হবে। কোচকে সব রকম সুযোগ সুবিধা দিতে হবে। টাকার দিকে তাকালে হবে না। পানির মতো টাকা খরচ করতে হবে। কাজী সালাউদ্দিন বা সালাম মোরশেদীকে দিয়ে হবে না। আমাদের ফুটবল ফেডারেশনে আরও যোগ্য লোক লাগবে। বর্তমানে যারা আছে তারা আমাদের ফুটবলকে ৫০ বছর পেছনে নিয়ে গেছে।
১৯৩০ সালে প্রথম ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়। এত বছর পার হয়ে গেল আমরা আজও অংশ গ্রহন করতে পারলাম না বিশ্বকাপে! আমাদের চেয়ে ছোট দেশ বিশ্বকাপ ফুটবলে সুযোগ পেয়েছে। আমাদের চেয়ে গরীব দেশ বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পেয়েছে। আমরা কেন পারবো না? সামান্য ভুটান বা নেপালের কাছে আমাদের ছেলেরা হেরে যায়! আজিব !! এবার ফুটবল বিশ্বকাপে ফাইনাল খেললো ক্রোয়েশিয়া। এই ক্রোয়েশিয়া র্যাঙ্কিং এ আমাদের থেকে অনেক পিছিয়ে ছিল। আজ তারা কোথায় চলে গেছে! ফুটবল শুধু আমাদের কাছে খেলা নয় আরও অনেক কিছু। ১৯৭৪ সালে আমরা ফিফার সদস্যপদ লাভ করি। আজও আমরা সামান্য এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ বা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপও জিততে পারি না। বর্তমানে যারা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে আছে তাদের পদত্যাগ করা উচিত। তারা গত দশ বছরে নূন্যতম কোনো উন্নতি করতে পারেনি। ছোটবেলায় আমার বাসার সামনে সানরাইজ স্পোটিং ক্লাব ছিল। আমি এখানে নিয়মিত ফুটবল খেলতাম। খুব ভালো খেলতাম আমি। গোলকিপার, বেগি বা ডিফেন্সে সব জাগায় সমান পারদর্শী ছিলাম। কত কাপ আর মেডেল জিতেছি তার হিসাব নাই। কি কারনে যেন ক্লাবটা বন্ধ হয়ে যায়।
বহুদিন বাংলাদেশ ফুটবল দল না খেলে, মাঠের বাইরে থাকায় তাদের মানসিকতা নষ্ট হয়ে গেছে। এজন্য ঘনঘন খেলার আয়োজন করতে হবে। ঘরোয়া লীগের আয়োজন করতে হবে। গত কয়েক বছর ধরে তো 'বঙ্গবন্ধু কাপ'ও খেলা হচ্ছে না। আমরা কি সারা জীবন বাইরের দেশের খেলা দেখে যাবো? তাদের পতাকা বাড়ির ছাদে টাঙ্গাবো? তাদের খেলা দেখে গলা ফাটাবো? জাতি হিসেবে এটা আমাদের জন্য অনেক লজ্জার। কিছুদিন আগেও ক্রোয়েশিয়াকে কেউ চিনতো না। আজ তাদের সারা বিশ্ব চিনে। বাংলাদেশে একজন কোচ এক বছরও টিকে থাকতে পারে না কেন? সমস্যাটা কোথায়? বিদেশ থেকে একজন কোচ আসেন কিন্তু কিছুদিন পর চলে যান। কেন? বাংলাদেশের জাতীয় ফুটবলে ১০ বছরে ২০ কোচ এসেছেন! এক বছর না যেতেই তারা চলে গেছেন। এটা আমাদের জন্য খুব লজ্জার। সহজ সরল সত্য কথা হলো বর্তমানে বাংলাদেশে ফুটবলের অবস্থা খুব করুন। একেবারে যা-তা অবস্থা। কিন্তু আমি আশাবাদী মানুষ। আমার বিশ্বাস সবাই মিলে চেষ্টা করলে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো সম্ভব। একজন বাবাও তার সন্তানকে সবার আগে একটা বল কিনে দেন। ছুটির দিনে বাবা তার সন্তানের সাথে বল খেলেন। কবির ভাষায় বলতে চাই ''দেরী হোক, যায়নি সময়''।
ছোট বেলায় আবহানী মোহামেডানের খেলা দেখতাম। কত উত্তেজনা ছিল সেসময়। মানুষ পাগলের মতো মাঠে ছুটে যেত খেলা দেখতে। টিকিটের জন্য হাহাকার পড়ে যেত। টিভির দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতাম। কত বছর হয়ে গেল বাংলাদেশের খেলা দেখি না! উন্নয়নের মহাসড়কের সরকারকে অনুরোধ করবো ফুটবলের দিকে একটু নজর দেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিছু একটা করুন আল্লাহর দোহাই লাগে। আমি ঘরে বসে বাংলাদেশের লাল সবুজ জার্সি গায়ে দিয়ে আন্তর্জাতিক খেলা দেখতে চাই, যে খেলাতে বাংলাদেশ অংশ গ্রহন করবে। এটা অসাধ্য কিছু নয়। খুব সম্ভব। বাংলাদেশ খেলবে আমি চিৎকার দিয়ে গলা ফাটাবো। রাস্তায় আনন্দ মিছিল করবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমরা বাঙ্গালীরা অনেক দুঃখী। ফুটবলের উন্নয়ন করে আমাদের দুঃখ কষ্ট ভুলে থাকতে সহযোগিতা করুন। ফুটবল দিয়েই আমরা সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরবো। জয় বাংলা।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৯