শুক্রবার ছুটির দিন।
বউ বাচ্চা নিয়ে একটা ভূতের মুভি দেখছি। মুভির নাম 'মাদার'। মুভিটা গত ৫ সেপ্টেম্বর মুক্তি পেয়েছে। আমরা তিন জন'ই মুভিটা মন দিয়ে দেখছি। মন দিয়ে দেখার মতোই চমৎকার একটা মুভি। চোখ মুখ বড় বড় করে মুভি দেখছি, ঠিক এমন সময় বাসায় শাহেদ এসে উপস্থিত। মুভি রেখে একটুও উঠতে ইচ্ছা করছিল না। কিন্তু বাসায় বন্ধু এলে তো তাকে বলা যায় না, দোস্ত তুই চলে যা মুভি দেখছি।
আমার মেয়ে আর বউকে বললাম, তোমরা দেখ- আমি আসছি।
তারা দু'জনেই বলল- তুমি আসো তারপর একসাথে দেখব।
খুব বিরক্ত মন নিয়ে বসার ঘরে এলাম।
শাহেদ আমাকে দেখেই বলল, আমার মন মেজাজ খুব খারাপ। আমি একটা কিছু করে ফেলব। আমার পক্ষে আর সহ্য করা সম্ভব না।
শাহেদ একাই হরবর করে কথা বলে যাচ্ছে। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
আমি নরম গলায় বললাম, শান্ত হয়ে বসে- কি হয়েছে বল?
শাহেদ বলল, আমি ঠিক করেছি আরেকটা বিয়ে করবো।
কেন বিয়ে করবি? তোর তো বউ আছে।
বউকে আর ভালো লাগে না।
কেন ভালো লাগে না?
জানি না কেন ভালো লাগে। ও আমাকে ধরলেই আমার বিরক্ত লাগে। ওর সাথে এক বিছানায় ঘুমাতেও ইচ্ছা করে না। ঘুমের মধ্যেও আমার গায়ে হাত দিলেও বিরক্ত লাগে।
ঘটনাটা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। ওদের বিয়ে হয়েছে চার বছর হয়ে গেছে। প্রেমের বিয়ে। ওর বউ নীলা খুব ভালো মেয়ে। চমৎকার রান্নার হাত। খুব সাংসারিক মেয়ে। কিন্তু শাহেদ আজ আমাকে এইসব কি বলছে?
আমি বললাম, ঘটনা কি খুলে বল। তোদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে?
শাহেদ বলল, আমি কি ঝগড়া করার মানুষ? তুই তো আমাকে ছোটবেলা থেকেই চিনিস।
তাহলে সমস্যাটা কোথায়?
জানি না সমস্যা কি। তবে ওকে আমার ভালো লাগে না।
কাকে ভালো লাগে?
বাইরে বের হলেই কত মেয়ে দেখি। তারা কত সুন্দর। তাদের দেখলেই মনে হয়- আমি কাকে বিয়ে করলাম! একে নিয়ে সারা জীবন পার করা আমার পক্ষে সম্ভব না।
তাহলে তুই কি এখন আরেকটা বিয়ে করতে চাস?
হুম, চাই।
তাহলে নীলার কি হবে?
নীলাও থাকবে আমার কাছে।
একসাথে দুই বউ রাখবি?
তাতে সমস্যা কি? আমার ইনকাম খারাপ না।
তুই আরেকটা বিয়ে করলে নীলা তোর সাথে থাকবে? থাকতে রাজী হবে?
নীলা যাবে কোথায়? থাক আমার কাছে, সমস্যা কি? তার ভালো মন্দে আমাকে কাছে পাবে।
তার মানে তুই নীলাকে ভালোবাসিছ?
হুম বাসি। তার মানে আরেকটা মেয়েকে ভালোবাসতে পারবো না, তা তো না। সত্যি কথা বলতে কি একজনে আমার মন ভরছে না। আমার আরেকজন চাই।
ঠিক এই সময় সুরভি চা নাস্তা নিয়ে হাজির।
সুরভি বলল, শাহেদ ভাই আপনার কি হয়েছে? চোখ মুখ এত শুকনা কেন?
আমি বললাম, ওর জন্য একটা মেয়ে দেখ। নীলাকে আর ওর ভালো লাগছে না।
সুরভি কঠিন চোখে শাহেদের দিকে তাকালো। শাহেদ মাথা নিচু করে ফেলল।
সুরভি রেগেমেগে বলল, পাশের ঘর থেকে আমি সব শুনতে পেয়েছি। শাহেদ ভাই আপনার এতটা অধপতন হলো কি করে? ছিঃ।
শাহেদ মাথা নিচু করেই বলল, ভাবী আমি খুব স্যরি। খুব বড় ধরনের একটা ভুল করতে যাচ্ছিলাম। আপনি আমার ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন। বলেই শাহেদ ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
কিছুক্ষন পর শাহেদের ফোন পাই। আজ রাতে তার বাসায় আমাদের দাওয়াত। নীলা রান্না করবে। আমাদের যেতেই হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:৪২