আজ ছুটির দিন।
তাই আজ সারাদিন শুয়ে বসে পত্রিকা পড়ে কাটাচ্ছি। পত্রিকায় কি কি পড়লাম তা আপনাদের কিছুটা জানাই। এক পত্রিকা লিখেছে- ''সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ''মুক্তিযোদ্ধা কোটা থাকবে এবং হামলাকারীরা ছাড়া পাবে না''। প্রধানমন্ত্রী যখন বলেছেন- মন্দ বলি কি করে? এদিকে সংসদে রওশন এরশাদ বলেছেন, ''দেশ ঠিকভাবে বলছে না।'' রওশন ম্যাডাম আমার সংসার'ই ঠিকভাবে চলছে না আর একটা দেশ ঠিকভাবে পরিচালনা করা চারটিখানি কথা না। পত্রিকায় দ্বিতীয় পাতায় লিখেছে, ''চাঁদ দেখা কমিটি আগামীকাল বৈঠক করবেন।'' মানে কি? ঈদ তো এখনও অনেক দেরী আছে। তাহলে তারা কিসের বৈঠক করবেন? শেষের পাতায় ছোট করে নিউজ হয়েছে- ''বোনকে বাঁচাতে গিয়ে পুকুরে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু।'' এই নিউজ গুলো আমাকে খুব কষ্ট দেয়। তৃতীয় পাতায় লেখা- ''আগামীকাল উদবোধন হবে যমুনা ফিউচার পার্কে ভা্রতীয় ভিসা সেন্টার।'' এই নিউজটা পড়ে বুঝতে পারলাম পত্রিকাটা এক সপ্তাহ আগের। আহ আমি কি নির্বোধ! এক সপ্তাহ আগের পত্রিকা মন দিয়ে পড়ছিলাম। পুরান পত্রিকা পড়েই বুঝতে পারলাম আমি অনেক পিছিয়ে আছি।
পুরান পত্রিকা পড়ে মেজাজ খুব খারাপ হয়েছে। এদিকে মনে হচ্ছে- চায়ে চিনি কম। বিনা কারনে সুরভির সাথে চিল্লাচিল্লি করলাম। আসলে চায়ে চিনি ঠিকই ছিল। সুরভি চুপ করে সব সহ্য করলো। আহা বেচারার মনটা খারাপ করে দিলাম। বিকেলবেলা বাইরে গেলে সুরভির জন্য এক বাটি আইসক্রীম আনবো। সে আইসক্রীম খুব পছন্দ করে। আমি নিশ্চিত আইসক্রীমের বাটি দেখে সে খুব খূশি হবে। এবং আমার বিনা কারনে চিল্লাচিল্লি করার অপরাধটা ক্ষমা করে দিবে। আগেও এমন হয়েছে।
নতুন পত্রিকা হাতে নিলাম। সরাসরি চলে গেলাম সাহিত্য পাতায়। অন্য কোনো নিউজ পড়লে হয়তো মেজাজ খারাপ হতে পারে। শুক্রবারের সাহিত্য পাতাটা আমি খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ি। সাহিত্য সাময়িকীতে আজ একটা সুন্দর গল্প পড়লাম। গল্পের নাম 'তিন ছাগল'। মনে হয় ভারতীয় লেখক। চমৎকার গল্প। তিন ছাগলের বাড়ি তিন জেলায়। ঘটনা চক্রে তিন ছাগলের দেখা হয়ে যায়। তিনটাই নিজেকে মহা পন্ডিত মনে করে। কেউ কারো চেয়ে কম না। আসলে খালি কলস।
প্রথম ছাগলের আছে গলার জোর। তার সাথে মিথ্যায় কেউ পারে না। শহরে আমার আট তালা বাড়ি আছে। বাড়িতে লিফট আছে। নিচতালা পুরোটাই খালি। ত্রিশ টা গাড়ি একসাথে পারকিং করে রাখা যায়। ইত্যাদি ইত্যাদি। এই ছাগল গলার জোরেই টিকে আছে। গলার জোর থাকাটাও একটা বড় গুন। সবার এই গুন থাকে না। এই ছাগল আবার নিয়মিত নামাজ রোজা করে। আমার ধারনা ছিল যারা নামাজ রোজা করেন তারা মিথ্যা বলেন না। বললেও কম বলেন। এখন দেখছি- আবহাওয়ার মতো মানুষও পুরো বদলে গেছে।
দ্বিতীয় ছাগল ভয়াবহ কৃপণ। আগে একটা মোবাইল ব্যবহার করতো নয় শ' টাকা দামের। সে মোবাইল রাবার দিয়ে প্যাচিয়ে রাখতে হতো। ইদানিং সে একটা স্মার্ট ফোন কিনেছে। স্মার্ট ফোন কেনার পর থেকে সে নিজেকে বুদ্ধিমান ভাবতে শুরু করেছে। জ্ঞানী ভাবতে শুরু করেছে। যে জ্ঞানী না, সে যদি নিজেকে জ্ঞানী ভাবতে শুরু করে তাহলে তো সমস্যা। বিরাট সমস্যা। এরা দেশের জন্য, সমাজের জন্য ক্ষতিকর।
আমি মনে মনে ভেবেছিলাম তৃতীয় ছাগলটা ভালো হবে। বেশ ভালো। কিন্তু এটা আরও বেশি খারাপ। তবে এই ছাগল অনেক ক্ষমতাবান। তার ছোট চাচা সমাজকল্যাণ মন্ত্রনালয়ের উপ সচিব। এই ছাগল নিজেকে বেশ জ্ঞানী মনে করে। জ্ঞানী মনে করা ভালো। কিন্তু ভিতরে ভিতরে বিরাট বলদ। প্রতিটা মানুষের মুখে আলগা একটা মূখোশ থাকে। সেই মূখোশ একবার দেখে ফেললে- তার প্রতি আর শ্রদ্ধা আসে না। ভালোবাসা আসে না। ঘৃণা আসে, শুধু ঘৃণা।
গতকাল রাত থেকে দেখছি- পাশের বাসায় বিশাল রান্না বান্নার আয়োজন চলছে। কম হলেও সাত জন মিলে কাজ করছে। কেউ পেয়াজ কাটছে, কেউ মশলা বাটছে, কেউ হামান দিস্তায় কি যেন গুড়া করছে। সকাল থেকে পুরোদমে রান্না শুরু হয়েছে। সুন্দর ঘ্রান ছড়িয়েছে চারপাশে। ঘ্রানই বলে দিচ্ছে- খাবারটা দারুন মজা হবে। কাল রাত থেকেই মনে হচ্ছে- ওরা যদি আমাদের দাওয়াত দিত। সুরভি আর আমি গিয়ে খেয়ে আসতাম। আচ্ছা, দাওয়াত ছাড়াই যদি ওদের কাছে গিয়ে বলি- আমরা আপনাদের প্রতিবেশী। আপনাদের ঠিক উলটো পাশেই থাকি। আপনাদের বাসায় কি অনুষ্ঠান হচ্ছে? কারো বিয়ে নাকি? না জন্মদিন? তখন তারা নিশ্চয়ই বলবেন, প্লীজ ভিতরে আসুন। খেয়ে যান। প্লীজ। প্লীজ মানা করবেন না।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২১