এক
গ্রামের নাম রসুলপুর।
একেবারে সুন্দরবনের কাছে। অন্যসব গ্রামের মতোই একটি গ্রাম সুন্দর গ্রাম। এই রসুলপুর'ই আমাকে শিখিয়েছে কি করে পৃথিবীকে ভালোবাসতে হয়। এই গ্রামের লোকজন দিন-রাত ঝগড়া করে, দলাদলি করে, হাঙ্গামা করে, কুটকচালি করে, একটা ভাঙ্গা স্কুল ঘর আছে- সেই স্কুলের প্রতি কারো নজর নেই। তবে মসজিদ পাকা করার ব্যাপারে তারা একমত।
এই গ্রামে এক কৃষকের সাথে আমি জমিতে চাষ করেছি। বর্ষাকালে বিলে মাছ ধরেছি। সাইক্লোন বিন্ডিং এর চারপাশে নানান রকম গাছ লাগিয়েছি। রসুলপুর গ্রামের প্রতিটা গাছ, পুকুর, খাল-বিল, গরু আমার বন্ধু হয়ে গিয়েছিল। তাদের সাথে আমি কথা বলতাম। অনেকদিন রসুলপুর যাই না। ঈদের পরদিন যাবো। রসুলপুর আমাকে ডাকছে।
আধুনিক যন্ত্রপাতি আমাকে মজা দেয় কিন্তু আনন্দ দিতে পারে না। ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ, মোবাইল ফোন, এসি, ইন্টারনেট এগুলো ঠিক আমাকে নির্মল আনন্দ দিতে পারে না। গাছপালা, মাটির পথ, সবুজ ক্ষেত, নদী, খাল-বিল এসব আমাকে এক আকাশ নির্মল আনন্দ দেয়।
দুই
বিশাল রাজ প্রাসাদ।
রাজার বাড়ির সিংহ-দরজার পাশে, লোহার খাঁচার একটা মস্ত বাঘ ছিল। রাজার বাড়ির সামনে দিয়ে যত লোক যাওয়া-আসা করত, বাঘ হাত জোড় করে তাদের সকলকেই বলত, ‘একটিবার খাঁচার দরজাটা খুলে দাও না দাদা!’
শুনে তারা বলত, ‘তা বইকি! দরজাটা খুলে দি, আর তুমি আমাদের ঘাড় ভাঙো।’
এর মধ্যে রাজার বাড়িতে খুব নিমন্ত্রণের ধুম লেগেছে। বড়-বড় পণ্ডিত মশাইয়ের দলে-দলে নিমন্ত্রণ খেতে আসছেন। তাঁদের মধ্যে একজন ঠাকুর দেখতে ভারি ভালোমানুষের মতো ছিলেন।
বাঘ এই ঠাকুরমশাইকে বারবার প্রণাম করতে লাগল।
তা দেখে ঠাকুরমশাই বললেন, ‘আহা, বাঘটি তো বড় লক্ষ্মী! তুমি কি চাও বাপু?’
বাঘ হাত জোড় করে বললে, ‘আজ্ঞে, একটি বার যদি এই খাঁচার দরজাটা খুলে দেন! আপনার দুটি পায়ে পড়ি।’
ঠাকুরমশাই কিনা বড্ড ভালোমানুষ ছিলেন, তাই তিনি বাঘের কথায় তাড়াতাড়ি খাঁচার দরজা খুলে দিলেন।
তখন হতভাগা বাঘ হাসতে-হাসতে বাইরে এসেই বললে, ‘ঠাকুর, তোমাকে তো সবার আগে খাব!’
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৯:৩০