সুন্দর ঝলমলে একটি দিন।
আমি সকাল নয়টায় বাসা থেকে বের হয়েছি। সাদা শার্ট আর জিন্স প্যান্ট পড়েছি। পায়ে সুন্দর একটা জুতো। অন্যদিনের তুলনায় আজ জ্যাম খুব কম। প্রচুর বাতাস কিন্তু রোদ কড়া। রোদে চামড়া জ্বলছে আর বাতাসে আমার মাথার লম্বা চুল গুলো উড়ছে। রোদটা আমাকে একেবারে কাহিল করে দিচ্ছে, সহ্যের বাইরে। তবুও কিছু করার নেই। হিম শীতল ঠান্ডা পানি খাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে পড়েছি। আশে-পাশে কোনো দোকানপাট দেখছি না। কপাল বেয়ে ঘাম পড়ছে টপ টপ, টপ। সাদা শার্ট অনেকখানি ঘামে ভেজা। মেজাজ অত্যাধিক খারাপ। মেজাজ খারাপের কারন হচ্ছে- এক পরিচিত লোক একটা চাকরির জন্য আমাকে গুলশানে এক অফিসে পাঠিয়েছেন। দুই ঘন্টা বসে থাকার পর সেই অফিসের সিইও বললেন, সিভি রেখে যান দেখি কি করা যায়। আমি যা বুঝার বুঝে গেলাম। আমি এমনটাই ধরে রেখেছিলাম।
রাগে জিদে গুলশান এক থেকে সিগারেট টানতে টানতে হাটতে শুরু করলাম। হেঁটে হেঁটে শূটিং ক্লাব এসে পড়লাম। চক্রাকার বাসে উঠলাম। নামবো মগবাজার। ভুল করে নেমে গেলাম মধুবাগ-বউ বাজার। তার মানে এখন আমাকে যেতে হবে মগবাজার ওয়ারলেস। ওয়ারলেস থেকে রকশা বা বাসে করে বাসায়। প্রচন্ড রোদ। গলা শুকিয়ে কাঠ। পানির জন্য জীবন বের হয়ে যাচ্ছে। ঠান্ডা পানি। এক হোটেলে ঢুকলাম ঠান্ডা পানি খাবো। সেই হোটেলে ঠান্ডা পানির ব্যবস্থা নেই। তিন চারটা দোকানে খোজ করলাম, ঠান্ডা পানির বোতল। কোনো দোকানে ঠান্ডা পানি পেলাম না। ওয়ারলেস যাবো, ভাড়া বিশ টাকা কিন্তু কোনো রিকশাওয়ালা ত্রিশ টাকার কমে যাবে না। ত্রিশ টাকা দিয়েই রিকশা নিলাম। রিকশায় বসে দেখি রিকশার সিট ভালো না। পিছলা খেয়ে পড়ে যাচ্ছি। আমি রিকশাওয়ালাকে বললাম, ভাড়া বেশি নিবা এদিকে সিটও পিছলা, ঠিকভাবে বসতে পারছি না- পড়ে যাচ্ছি। এটা কেমন কথা।
রেল যাচ্ছে। রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মুহূর্তের মধ্যে লম্বা জ্যাম লেগে গেছে। ভয়াবহ গিট্রু টাইপ অবস্থা। এদিকে আমি রোদে পুড়ছি কিন্তু রিকশার হুড লাগাতে ইচ্ছা করছে না। ঠিক এই সময় সুরভি'র ফোন। সে ফোনে জানালো তরকারি কাটতে গিয়ে হাত কেটে ফেলেছে। অনেকখানি কেটে ফেলেছে। খুব রক্ত পড়ছে, ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। মনে হয় সেলাইও লাগবে। ট্রেন যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। আমি আমার রিকশাওয়ালাকে বললাম, গাড়ির পেছনে না থেকে বাম পাশ দিয়ে একটু টেনেটুনে সামনে যাও। কয়েকটা গাড়ির আগে যেতে পারলে আমার একটু সময় বাঁচে। আমার হাতে সময় কম। রিকশাওয়ালা খুব বিরক্ত হয়ে গাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিল। সাথে সাথে গাড়ির অনেকখানি রঙ উঠে বিছরি অবস্থা। নতুন মেরুন রঙের চমৎকার গাড়ি। ড্রাইভার মুহূর্তের মধ্যে রেগে মেগে দৌড়ে এসে রিকশাওয়ালার কলার ধরলো। আমি ড্রাইভারকে বললাম, শান্ত হোন।
ড্রাইভার রিকশাওয়ালাকে বলল, বিশ হাজার টাকা দে হারামজাদা। আমি যথেষ্ঠ বিজ্ঞ লোকের মতো বললাম, ড্রাইভার সাহেব উনার কলার ছাড়ুন। আমার সাথে কথা বলুন। ড্রাইভার আমার কথা শুনে কিছুটা আশ্বস্ত হলো। রিকশাওয়ালার কলার ছেড়ে আমার দিকে তাকালো। আমি বললাম, ভালো করে চেয়ে দেখুন, বাম পাশে জায়গা নেই। সেখানে আবার একলোক পেয়ারা নিয়ে বসে আছে। আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই ড্রাইভার বললেন, গাড়িতে ম্যাডাম আছে- আপনি ম্যাডামকে বুঝিয়ে বলুন। আমি রিকশা থেকে নেমে গাড়ির দরজার সামনে গেলাম। কুঁজো হয়ে তাকিয়ে দেখি গাড়ির ভিতর এক পরী বসে আছে। দারুন সুন্দরী। উগ্র সুন্দরী নয়। মনোমুগ্ধকর সুন্দরী। মেয়েটাকে দেখে খুব ভালো লাগলো। কেমন সুন্দর চোখ মুখ! চোখে কাজল দিয়েছে মোটা করে। কপালে একটা ছোট্র টিপ। ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। মুখটা ভারী মিষ্টি। মেয়েটাকে দেখার পর থেকে কেমন শান্তি-শান্তি লাগছে। রোদের তাপও তেমন কড়া মনে হচ্ছে না। ঠান্ডা পানির তৃষ্ণা ও বোধ করছি না।
পরিশিষ্ট
মেয়েটা আমাকে তার গাড়িতে করে বাসায় নামিয়ে দিয়ে গেল। বাসায় যেতে যেতে তার ব্যাগ থেকে ঠান্ডা পানির বোতল বের করে আমার হাতে দিল। আমি ঢোক ঢোক করে বোতলের সবটুকু পানি শেষ করে দিলাম। মেয়েটা বলল, আমার ব্যাগে নুডুলস আছে। মা জোর করে দিয়েছে দিয়েছেন- আপনি ইচ্ছা করলে খেতে পারেন। আমি লক্ষ্মী ছেলের মতোন বাটির সবটুকু নুডুলস আগ্রহ নিয়ে খেয়ে ফেললাম। বিদায় নেওয়ার সময় মেয়েটাকে বললাম, আপনি যেমন সুন্দর আপনারও মনটা তার চেয়ে বেশি সুন্দর। আমি মন থেকে আপনার জন্য প্রার্থনা করবো যেন কোনো হৃদয়বান ছেলের সাথে আপনার বিয়ে হয়। দৌড়ে ছয় তালায় উঠলাম। উঠে দেখি সুরভি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। তার হাত কাটেনি। সুরভি বলল, হাত কাটার কথা না বললে তুমি এত দ্রুত বাসায় ফিরতে না। দুপুরে দু'জন একসাথে ভাত খাবো। আজ তোমার প্রিয় খাবার রান্না করেছি। সাথে আছে ইলিশ মাছের ডিম আছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৯:০৮