একদিন শাহেদ অফিসে খুব রেগে গেল।
রেগে গিয়ে চিৎকার করে তার সামনে থাকা মহিলাকে বলল, অই কুত্তী, চুপ থাক। বুড়ি, ধুমসি মাগি। তুই বেশ্যার চেয়েও খারাপ। শাহেদের মুখের ভাষা শুনে- মুনা অবাক হয়ে শাহেদের দিকে তাকিয়ে আছে। সে প্রচন্ড অবাক হয়েছে। মুনা এতটাই অবাক হয়েছে যে, সে মুখ দিয়ে কোনো কথাই বলতে পারছে না। এরপর শাহেদ তার পাশে বসা মঈনের দিকে তাকিয়ে বলল, তুই মাগির দালালের চেয়েও খারাপ। তুই ধান্ধাবাজ এবং তুই অসৎ। নানান মিথ্যা বলে অফিস থেকে টাকা নিস। বাটপারির টাকা দিয়ে জমিদারি করিস। আসলে তুই ফকিন্নির পোলা। হঠাৎ মুনার পাশে বসে থাকা কামাল বলে উঠলো, শাহেদ আপনি অফিসের ম্যানার জানেন না। অনেক হইছে, থামুন। এবার শাহেদ আগের চেয়ে তিন গুন বেশি রেগে গিয়ে বলল, কামাইল্লা ফকিন্নির পোলা আমারে ম্যানার শিখাও। যোগ্যতা নাই চাচার কারনে চাকরি পাইছো। এখন ভাব মারো। তোদের সবার মুখোশ আমি খুলে দিব। বদের বদ। অমানুষ।
এই সত্য ঘটনা তারা বায়িং হাউজের।
তারা বায়িং হাউজ শার্ট, গেঞ্জি, জিন্স প্যান্ট, বুতাম আর জিপার ইউরোপের বিভিন্ন দেশ গুলোতে পাঠায়। শাহেদ এই অফিসের সবচেয়ে পুরাতন স্টাফ। সে শুধু পুরান স্টাফ'ই না, সে কাজে দক্ষ, পরিশ্রমী। গত চার বছরে সে মাত্র চারদিন ছুটি কাটিয়েছে। তারা বায়িং হাউজের শুরু থেকেই সে আছে। অনেক দুঃখ সুখের সঙ্গী সে এই কোম্পানীর। কিন্তু গত কয়েস মাসে এই প্রতিষ্ঠানে বেশ কিছু নতুন লোকজন এসেছে। দুঃখের বিষয় যারা এসেছে তারা একেবারেই নতুন। আগে কোনো তাদের চাকরির অভিজ্ঞতা নেই। কোম্পানীর (সি ই ও) মালিকের ভাগ্নে। সিইও শালা একটা গাধা। চরম গাধা। প্রতিষ্ঠানের মালিক দেশের বাইরে থাকায় সে বেশ কয়েকজন অমানুষকে নিয়োগ দিয়েছেন। তারা অফিসের কাজ কিছুই পারে না। কিন্তু তাদের বড় বড় কথা আছে। কাজ না পারাটা দোষের না। কিন্তু কাজ শিখতে না চাওয়া অবশ্যই দোষের। এবং কাজ না শিখে, না করে- এমন ভাব দেখায় যেন পুরো অফিসের কাজ শুধু মাত্র সে একাই করছে।
তারা বায়িং হাউজ উত্তরাতে। বিশাল অফিস। বেশ সাজানো গুছানো। প্রতিটা রুমে এসি আছে। শাহেদ এর রুমে মোট চারজন বসে। একজন মুনা, মুনা অফিসে এসেছে মাস দুয়েক হলো। বিরাট বদ মহিলা। মহিলারা যে এত বদ হয় মুনাকে না দেখলে শাহেদ কোনো দিন জানতেই পারতো না। মুনার চেহারার মধ্যে বদ এর স্পষ্ট ছাপ আছে। চিমসা চেহারা। কুটনি মহিলা। সুযোগ পেলেই কোনো কারন ছাড়াই কুটনামি করতে থাকে শাহেদের নামে। সারাদিন পুরো অফিস ঘুরে বেড়ায়। সবার টেবিলে গিয়ে রঙ ঢং করতে চেষ্টা করে। যদিও রঙ ঢং করে কোনো লাভ নাই। কারন মুনার বয়স চল্লিশের উপরে। বয়স লুকিয়ে রাখা যায় না। শাহেদের ইচ্ছা করে এই মাগিকে মরিচ ট্রিটমেন্ট দিতে।
শাহেদের পাশে বসে মঈন। মঈন তারা বায়িং এ জয়েন করেছে ছয় মাস হলো। কাজ করার নূন্যতম যোগ্যতা নেই। বায়িং হাউজের কাজ করার আগের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। নির্বোধ (ভাগ্নে) সিইও কে বোকা বানিয়ে চালাক মঈন অফিসে ঢুকে পড়েছে। বেতনটাও বাড়িয়ে নিয়েছে। সে নানান রকম ছলচাতুরী করে অফিস থেকে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে প্রতিমাসে অনেক টাকা নেয়। যেমন- পাটিকে কমিশন দেওয়ার কথা বলে, সে টাকা নেয় অফিস থেকে। কিন্তু এই টাকা পাটিকে দেয় না। নিজেই গাপ করে দেয়। অফিসের কাজে নানান জাগায় যাওয়ার নাম করে প্রতিদিন উবার পাঠাও এর বিল করে হাজার টাকা। আসলে সে কোথাও যায় না। অফিসে বসে ইউটিউবে নাচ গান দেখে। অথচ এই বদ মঈন নামাজের সময় হলে সবার আগে দৌড়ে নামাজ পড়তে চলে যায়। সবাইকে দেখায় সে কত ভালো মানূষ। আসলে সে মন থেকে নামাজ পড়ে না।
মুনার ডান পাশে বসে কামাল। কামাল হচ্ছে নিরব ঘাতক। যার চাচা আবার সচিব। সচিব সাহেব তারা বায়িং হাউজের মালিককে ফোন করে বলেছে ভাগ্নেকে পাঠালাম। তারা বায়িং এর মালিক চাকরি দিয়ে দিল যোগ্যতা না থাকা স্বত্তেও। এই কামাল একটা অমানুষ। অথচ ভালো মানূষের ভান ধরে থাকে। কোনো কাজ করে না। সারাদিন এক অর্থে শুয়ে বসেই কাটায়। আর পাকনা পাকনা কথা বলে। প্রচন্ড রকমের ফাঁকিবাজ। ভন্ড।
মুনা, কামাল আর মঈন অফিসে আসার পর থেকেই সমস্যা শুরু হলো। ঘটনা চক্রে এই তিন বদ মিলে গেছে। সারাক্ষন সম্পূর্ণ অকারনে সুযোগ পেলেই শাহেদকে খোচা দিয়ে কথা বলে। অবজ্ঞা করে কথা বলে। দিনের পর দিন। প্রতিদিন। এদিকে শাহেদ সহজ সরল ভালো মানূষ। অতিশয় ভদ্রলোক। চুপ করে মাথা নিচু করে নিজের কাজ করে যায়। সত্য কথা হলো শাহেদের কারনে এই তিনজনের অনেক অসুবিধা হয়ে গেছে। তারা অফিসে দেরী করে আসে। এর সাক্ষী শাহেদ। তারা কাজ না করে সারাক্ষন গল্পগুজব আর ইউটিউব নিয়ে থাকে। এগুলোর রাজসাক্ষী শাহেদ। প্রতিষ্ঠানের মালিক আর সিইও থাকে বাইরে বাইরে তারা এসবের কিছুই জানেন না। বরং তারা সারাদিন অনেক কাজ করে। অনেক পরিশ্রম করে ইত্যাদি লিখে কাগজ জমা দেয় এডমিনের কাছে। এই কাগজ যায় এমডি'র কাছে। তাদের কাজের বিবরন পড়ে এমডি তো মহা খূশি।
মুনা, মঈন আর কামাল মিলে- শাহেদের চাকরি খেয়ে দিল। সম্পূর্ণ বিনা অপরাধে শাহেদের চাকরি চলে গেল। অথচ সে একজন পরিশ্রমী এবং দক্ষ লোক। কিন্তু এই সমাজে মিথ্যার জন্য হয়। ওরা এমন অবস্থা ক্রিয়েট করেছে যে শাহেদের শুধু চাকরি না মান সম্মান যাওয়ার যোগাড় হয়েছে। শাহেদ মাথা নিচু করে অফিস থেকে চলে গেল। যে অফিসের প্রায় প্রথম থেকেই সে ছিল। অফিসের অনেক সুখ দুঃখের সাথী সে। শাহেদের মতোন ভদ্রলোক, ভালো মানূষ পর্যন্ত গালি দিতে বাধ্য হয়েছে, বাজে শব্দ ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছে। তাহলে বুঝা যায় অই তিন জন বদ শাহেদকে কি পরিমান মানসিক পেইন দিয়েছে। অবশ্য শাহেদের চাকরি চলে যাবে সে আগেই কিছুটা আঁচ করতে পেরেছিল। অফিসের এইচ আর তার বন্ধু মানূষ। সে শাহেদকে আগেই কিছুটা হিন্টস দিয়েছিল। শাহেদ সব বুঝতে পেরে অফিস যাওয়ার আগে অই তিনবদকে ইচ্ছা মতোন যা-তা বলতে পেরেছিল। অবশ্য শাহেদ ওদের ইচ্ছা মতোন বলেছে। প্রতিটা কথাই সত্য বলেছে। এই সত্য বলতে পেরে শাহেদ অনেক শান্তি পেয়েছে।
শাহেদ আমার বন্ধু। খুব কাছের বন্ধু। সেই ছোটবেলা থেকে আমি শাহেদকে চিনি। মানূষ হিসেবে সে চমৎকার। তার অফিসের ঘটনা গুলো সে আমাকে বলেছে। আমি তার অনুমতি নিয়েই এই গুলো ব্লগে লিখেছি। আজ সাত মাস ধরে শাহেদ বেকার। প্রতিদিন সন্ধ্যায় সে আমার কাছে আসে আড্ডা দিতে। শাহদের একটা সাত বছর বয়সী মেয়ে আছে। মেয়েটা অনেক কিউট। কি যে সুন্দর করে কথা বলে! শাহেদের বউ নীলা। নীলা ভাবীও চমৎকার একজন মানুষ। খুব হাসিখুশি। তার হাতের রান্না খুব ভালো।
শাহেদের জন্য আমার খুব মায়া হয়। এই যুগে ক্ষমতাবান মামা-চাচা না থাকলে সহজে চাকরি হয় না। ভিলেজ পলিটিক্স যেমন খারাপ। অফিস পলিটিক্সও অনেক খারাপ। অফিস পলিটিক্সের শিকার হল আমার বন্ধু শাহেদ। শাহেদ হলো সহজ সরল ভালো মানুষ। কিন্তু এই যুগ হলো দুষ্টলোকদের যুগ। দুষ্টলোক দিয়ে ভরে গেছে সারা দেশ। দুষ্টদের যুগে ভালোরা টিকে থাকতে পারে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:১৪