নিজের অভিজ্ঞতা থেকে এবং নিজের চোখে অনেক অফিস ঘুরে ঘুরে দেখেছি, কেউ নিজের কাজ টুকু সঠিকভাবে পালন করে না। অর্থাৎ যে যার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে না। বিশেষ করে সরকারি অফিসের লোকজন। যে যত বড় পদে আছে, সে তত বড় ফাঁকিবাজ। যদি প্রত্যেকে তাদের কর্মক্ষেত্রে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতো তাহলে দেশ অনেক দূর এগিয়ে যেত। দেশ পিছিয়ে থাকার কারনে একটা বড় কারন হচ্ছে- যে যার জায়গা থেকে সঠিক দায়িত্ব পালন করে না। তাদের দায়িত্ব অবহেলার কারনে, যে কাজ একদিনে হওয়ার কথা সে কাজ করতে দুই সপ্তাহ লাগে।
আপনি কি জানেন, সজ্ঞানে অনেক শিক্ষিত যুবক ধর্মকে ব্যবহার করে? এক ছেলে গ্রাম থেকে ঢাকা এসেছে। সে ঢাকাতে একেবারেই নতুন। এসেই সে নামাজ পড়া শুরু করলো। ফজরের নামাজের সময় মসজিদে তাকে বয়স্ক মুরুব্বিরা দেখে অবাক! মুররুবিরা তাকে বলল, তুমি খুব ভালো, এত ভোরে তোমার মতো বয়সী ছেলেরা নামাজ পড়তে আসে না। এক সপ্তাহ পড়ে ছেলেটি মুরুব্বিদের কাছে নিজের অভাবের কথা বলে একটা চাকরি চাইলো। মুরুব্বিরা সবাই মিলে তাকে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিল। চাকরি পাওয়ার পর ছেলেটা নামাজ ছেড়ে দিল। সেই ছেলে এখন অনেক টাকার মালিক হয়েছে। কিছুদিন আগে শুনলাম উত্তরাতে জমি কিনেছে। খুব শ্রীঘই বাড়ির কাজে হাত দিবে। এই ছেলে একটা নামী দামী ফার্নিচার কোম্পানীতে কাজ করতো। সেখান থেকে সে পাঁচ লাখ টাকার ফার্নিচার নিজের গ্রামের বাড়িতে পাচার করেছে। তার গ্রামের বাড়ি একদম অজপাড়া গায়ে। সেখানে বিদ্যুৎও নেই। কিন্তু আধুনিক সোফা, খাট আলমারী আছে। অই গ্রামে কারো বাড়িতে এরকম সোফা নেই।
অফিসে যখন নতুন কেউ জয়েন করে। সে-ও ধর্মকে ব্যবহার করে। অফিসে জয়েন করেই- নামাজের সময় হলে সবার আগে গিয়ে নামাজের স্থানে বসে পড়ে। খুব কাজের ভাব দেখায়। বলে, ভাই আমাকে কাজ দেন। কি করতে হবে বলেন। তখন তাকে দেখলে মনে হবে খুব দক্ষ এবং পরিশ্রমী। অফিসের পুরাতন কর্মীরা তা দেখে খুশি হয়। তারা বলে, বাহ, ছেলেটা খুব ভালো। এক-দুই মাস পার হয়ে গেলে তাকে আর নামাজে পাওয়া যায় না। এমনকি অনেক অনুরোধ করেও তাকে দিয়ে অতি সামান্য কাজও করানো যায় না। কাজেই বলা যায় সব শ্রেণির মানুষ ধর্মকে ব্যবহার করে। এবং কিছুদিন পর বুঝা যায় নামাজ পড়া ছেলেটা কত বড় বদ আর ভন্ড। তারা শুধু ভন্ড'ই না, মিথ্যাবাদী এবং অমানুষ।
অনেকে অল্প কয়েকদিনের সম্পর্কের পরেই বিয়ে করে ফেলে। খুব ধূমধাম করে বিয়ে। বিয়েতে তিন হাজার মানুষকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানো হয়। কিন্তু এই বিয়ে এক বছর পার হবার আগেই তালাক হয়ে যায়। সিটি কর্পোরেশন অফিসে দেখেছি হাজার লক্ষ তালাকের ফাইল জমা হয়ে আছে। যাই হোক, এ বিষয় নিয়ে অন্য কোনো সময় লিখব, আজ লিখতে ইচ্ছা করছে না। আমাদের দেশে নাকি নব্য ধনী লোকের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে? আসলেই ধনী লোকের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। প্রতিদিন অসংখ্য গাড়ি, বাইক রাস্তায় নামছে। প্রতিদিন কয়েক শ' ফ্ল্যাটের বুকিং দেওয়া হচ্ছে। আমি শালা সারা জীবন গরীব'ই রয়ে গেলাম। একটা গাড়ি কিনতে পারলাম না, ফ্ল্যাট কিনতে পারলাম না। দেশ বিদেশ ঘুরতে পারলাম না। আমস্টারডাম বেড়াতে যাওয়ার শখ আজ দশ বছর ধরে। মনে হয় না, ইহ জীবনে আর যেতে পারবো!
আগামী দশ বছরের মধ্যে যা যা ঘটবে, তা আমি চোখ বন্ধ করেই বলে দিতে পারি-
১। সেই দিন খুব দূরে না যেদিন বাংলাদেশের সাহিত্য জগত দখল করে নিয়ে সরকারি আমলারা।
২। পৃথিবীর সবচেয়ে অমানবিক দেশ হবে বাংলাদেশ।
৩। হোন্ডা ফুটপাত দিয়েই চলবে। এবং তাদের কিছু বলা যাবে না। যে বলবে সে মার খাবে।
৪। ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের প্রত্যেকের গাড়ি ফ্ল্যাট থাকবেই। তারা বছরে তিনবার দেশের বাইরে বেড়াতে যাবে।
৫। নিজের বাবা মা, আর ভাই বোন ছাড়া আর কাউকে বিশ্বাস করা যাবে না। যে বিশ্বাস করবে সে ধরা খাবে।
৬। এক শ্রেণির মানুষ সীমাহীন টাকার মালিক হবে, আরেক শ্রেণির মানুষ তিনবেলা পেটপুরে খেতে পাবে না।
৭। ক্ষমতাবানদের দাপটে সাধারন মানুষেরা বিড়াল হয়ে যাবে। তেলবাজে পরিনত হবে। অবশ্য এছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।
৮। দুর্নীতি হচ্ছে, হবে। প্রচুর দুর্নীতি হবে। সব সেক্টরে দুর্নীতি হবে অথচ আমাদের দেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হবে না। কারন সেই ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে।
৯। প্রতি বছর নদী ভাঙ্গন হবে, গ্রামের পর গ্রাম তলিয়ে যাবে কিন্তু এর স্থায়ী সমাধান করা হবে না। জ্যাম কোনোদিন কমবে না। দ্রব্য মূল্যের দাম বাড়তেই থাকবে। দুর্ঘটনা বেড়েই চলবে, বেকার বাড়বে, চুরী ছিনতাই আর ডাকাতি বাড়বে। রাজনীতিবিদের মিথ্যা বাড়বে। অসৎ ভাবে ধনী হওয়া লোকরা সেকেন্ড হোম হিসেবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গাড়ি বাড়ি থাকবে। অলরেডি অনেকের আছে। সব দুষ্টলোকেরা সরকারের মন্ত্রী এমপি সচিব হবে। সবাই জানবে বুঝবে অথচ কারোই করার কিছু থাকবে না। যে বলবে সে জেলে যাবে।
১০। এক কথায় বলতে গেলে, পুরো দেশ নষ্টদের দখলে চলে যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:১৫