কয়েকদিন আগের কথা, সুরভি গিয়েছে মিরপুর।
বাসায় আমি একা। সারাদিন বাইরে ঘুরে ফিরে রাতে বাসায় ফিরলাম। আসার সময় হোটেল থেকে হাফ প্লেট কাচ্চি কিনে নিলাম। রাতে খাবো। শরীর খুব ক্লান্ত। বিধ্বস্ত। দ্রুত খেয়ে, দ্রুত বিছানায় গেলাম। সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়লাম। রাত দুইটা ঘুম ভাঙ্গল পিঁপড়ার কামড়ে। লাইট অন করে দেখি আমার বিছানায় হাজার হাজার পিঁপড়া। লাল পিঁপড়া। আমাকে কামড়ে শেষ করে দিয়েছে। আমি খালি গায় ঘুমাই। ছোটবেলা থেকেই আমার এই অভ্যাস। রাত দুইটায় সুরভিকে রেগে মেগে ফোন দিলাম। সুরভি বলল, তোমার ভাইয়ের ছেলে মেয়েরা হয়তো বিছানায় বসে মিষ্টি জাতীয় কিছু খেয়েছে। আর তুমি বিছানা পরিস্কার না করেই শুয়ে পড়ছো। যাই হোক, বিছানা ঝাড়তে গিয়ে দেখি, তোসকের নিচে পর্যন্ত হাজার হাজার পিঁপড়া। শেষে বাধ্য হয়ে পাশের রুমে গিয়ে ডিভানে শুয়ে পড়লাম। কিন্তু ঘুম আসে না। মোবাইলে একটা পিঁপড়ার গেমস নামালাম। তারপর টিপে টিপে হাজার হাজার পিঁপড়া মারলাম।
পবিত্র কোরআনে একটি সুরার নাম হচ্ছে নমল যার অর্থ পিঁপড়া। বাইবেলেও পরিশ্রমী হওয়ার জন্য পিঁপড়ার কাছে যেতে বলা হয়েছে! পোকামাকড়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় মস্তিষ্কের অধিকারী পিপড়া। বিশ্বে পিঁপড়ার প্রায় ১২ হাজার প্রজাতি রয়েছে। এই প্রাণীটি তার শরীরের ওজনের চেয়েও ২০ গুণ বেশি ওজন বহন করতে পারে! পিঁপড়াদেরও একজন রাণী থাকে যার থেকে লক্ষাধিক বাচ্চা হয়। পিঁপড়ার কান নেই। সারাজীবন ধরে রাণী পিঁপড়া শুধু খায়, ঘুমায় আর ডিম পাড়ে। তার সেবার জন্য রয়েছে শ্রমিক পিঁপড়া। এদের কাজ হলো ঘুরে ঘুরে খাবার সংগ্রহ করে আনা। আর সেই খাবার পাহাড়া দেয়ার দায়িত্ব থাকে সৈনিক পিঁপড়াদের ওপর। অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন- তুচ্ছ একটি প্রাণী সম্পর্কে জেনেই-বা কী লাভ? কোনো প্রানীকেই অবহেলার চোখে দেখতে নেই। আমার তো দুনিয়ার সব প্রানী সম্পর্কে জানার অনেক ইচ্ছা আছে।
পিঁপড়া ফসলের ক্ষতি করে এবং দালান-কোঠার ধ্বংস সাধন করে। পুরুষ পিঁপড়াদের একমাত্র কাজ নতুন রানীর সঙ্গে যৌন মিলন। মিলনের অল্প দিন পরেই এদের মৃত্যু ঘটে। বড় আকারের শ্রমিকেরা সেনা পিঁপড়া নামে পরিচিত। পিঁপড়া কখনই ঘুমায় না। পিঁপড়াদের মধ্যে যোগাযোগ হয় নানাভাবে। যখনই দুটি পিঁপড়ার সাক্ষাৎ ঘটে, তারা নিজেদের অ্যানটিনার সাহায্যে একে অন্যের ঘ্রাণ নেয় অথবা ফেরোমোন (pheromone) নামে এক ধরনের রাসায়নিক সংকেত ব্যবহার করে। পিঁপড়া নিয়ে রেজাউর রহমান একটা বই লিখেছেন। চমৎকার বই।
পিঁপড়ার জীবনকাল ৮ বছর। তবে রাণী পিঁপড়া ১৫ বছরেরও অধিক সময় পর্যন্ত বাঁচতে পারে। পিঁপড়া হচ্ছে এমন একটি প্রাণী, যে সব ধরনের প্রকৃতিক দুর্যোগ সহ্য করেও লক্ষ লক্ষ বছর ধরে পৃথিবীতে বেঁচে আছে। চিনির বয়াম সবগুলোর ঢাকনা ভালো করে আটকে রাখলেও পিঁপড়া উঠবেই। পিঁপড়া শসার স্বাদ একেবারেই পছন্দ করে না। একটা পিঁপড়া মারা গেলে অন্য পিঁপড়া তাকে মুখে করে নিয়ে যায়। এটার কারন কি বলতে পারবেন? অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করার জন্য নিয়ে যায় নাকি? অনেক সময় বৃষ্টির পানি বা বন্যার জলে পিঁপড়াদের কলোনি ভেসে যায়। এমন পরিস্থিতে একা বেঁচে থাকার চেষ্টা না করে দলীয়ভাবে সবাই মিলে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে। এটি পিঁড়ার দেহের উপর আরেকটি পিঁপড়া উঠে, একে অপরকে আঁকড়ে ধরে এরা এক ধরনের ভেলা বানায়। আর এই ভেলা ভাসতে থাকে পানিতে।
পিঁপড়া কখনই ঘুমায় না। এরা পানির তলদেশে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত বাঁচতে পারে। পিঁপড়ের পেট দুটো। একটিতে নিজের জন্য খাদ্য জমা রাখে, অন্যটিতে অন্যের জন্য! সূরা নামলের ১৮ নং আয়াতের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা
‘যখন সুলাইমান (আ.) এবং তার বাহিনী পিঁপড়ার উপত্যকায় পৌঁছল তখন একটি নারী পিঁপড়া বলল, হে পিঁপড়েরা! তোমাদের গর্তে প্রবেশ কর। এমন যেন না হয়, সুলাইমান এবং তার সৈন্যরা তোমাদের পিষে ফেলবে তোমরা তা টেরও পাবে না। সুলাইমান তার কথায় মৃদু হাসলেন...’
এ আয়াত থেকে পিঁপড়াবিদ্যার ৪টি সূত্র পাওয়া যায়।
বিশ্বে যত জনসংখ্যা রয়েছে তাদের ওজন আর সমস্ত পিঁপড়ার ওজন প্রায় সমান হবে! রাক্ষুসে পিঁপড়াগুলোকে দেখা মাত্র জঙ্গলের হাতি, গণ্ডার, জিরাফ, হায়েনা, এমন কি বাঘ বা সিংহ পর্যন্ত লেজ তুলে উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটতে শুরু করে।
"ওই যে ‘পিপীলিকা পিপীলিকা
দলবল ছাড়ি একা
কোথা যাও, যাও ভাই বলি’।"
পাঁচ বছর আগে এই সামুতেই আমি একটা পিঁপড়া নিয়ে পোষ্ট দিয়েছিলাম। ইচ্ছা হলে চোখ বুলাতে পারেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১:০২