হযরত আদম (আ) এর ইনতিকালের পর অনেক দিন কেটে গেল। তাঁর ছেলেমেয়েদের বংশবৃদ্ধি হল। পৃথিবীতে এখন অনেক লোক। আদম (আ) ছিলেন আল্লাহর নবী। আল্লাহর পক্ষ থেকে অহীর মাধ্যমে পৃথিবীতে জীবন যাপনের সব নিয়ম কানুন তিনি জানতে পারতেন এবং সে ভাবে জীবন যাপন করতেন। তাঁর ইনতিকালের পর তার বংশধররা বহুদিন পর্যন্ত ঐ সব নিয়ম-মেনে পৃথিবীতে বসবাস করতে থাকলো। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার কারণে আল্লাহ তা’আলার হুকুম আহকাম মানার ব্যাপারে শিথিলতা দেখা দিল। ধীরে ধীরে তারা নিজেদের মনগড়া নিয়ম কানুনের প্রতি ঝুঁকে পড়লো। আল্লাহ দেয়া আইন কানুনের চর্চা ও অনুশীলন না থাকায় তা তাদের মধ্য থেকে হারিয়ে গেল।
পৃথিবীতে যে জিনিসের বেশী প্রয়োজন হবে তা সর্বপ্রথমই আল্লাহ পাক প্রেরন করেছেন। তা হলো নবী । তাঁরা আল্লাহর মনোনীত ও নিযুক্ত। তাঁদের কাছে মহান আল্লাহ অহী পাঠিয়েছেন, কিতাব পাঠিয়েছেন। তাঁরা ছিলেন নিষ্পাপ ও আদর্শ মানুষ। তাঁরা মানুষকে আল্লাহর দেয়া বিধান অনুযায়ী জীবন যাপন করতে বলেছেন। ২৫ জন নবীর নাম আল্লাহ পবিত্র কুরআনে গুরুত্ত্বের সাথে উল্ল্যেখ করেছেন। কোরআন মজিদে যে সব নবী আঃ এর বর্ণনা এসেছে। তার মধ্যে হযরত নূহ আঃ একজন বড় নবী ও প্রথম রাসুল।
সুলায়মান (আঃ)
সুরা আন নামল, ১৮ নং আয়াতে আছে- যখন তাঁর বাহিনী পিপীলিকার ময়দানে এসে পৌঁছল, তখন একটি পিপীলিকা বলল, হে পিপীলিকার দল! তোমরা নিজ নিজ গর্তে প্রবেশ কর, যেন সোলায়মান ও তাঁর বাহিনী তোমাদেরকে পদদলিত না করে তাদের অজান্তে।
সুলায়মান ছিলেন পিতার ১৯জন পুত্রের অন্যতম। সুলায়মান (আঃ)-এর মোট বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর। তের বছর বয়সে রাজকার্য হাতে নেন। শাম ও ইরাক অঞ্চলে পিতার রেখে যাওয়া রাজ্যের তিনি বাদশাহ ছিলেন। তাঁর রাজ্য তৎকালীন বিশ্বের সবচেয়ে সুখী ও শক্তিশালী রাজ্য ছিল। পক্ষীকুল তাঁর হুকুমে বিভিন্ন কাজ করত। সবচেয়ে বড় কথা এই যে, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পত্র তিনি হুদহুদ পাখির মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী ‘সাবা’ রাজ্যের রাণী বিলক্বীসের কাছে প্রেরণ করেছিলেন।
একদিন তিনি পক্ষীকুলকে ডেকে একত্রিত করেন ও তাদের ভাল-মন্দ খোঁজ-খবর নেন। তখন দেখতে পেলেন যে, ‘হুদহুদ’ পাখিটা নেই। তিনি অনতিবিলম্বে তাকে ধরে আনার জন্য কড়া নির্দেশ জারি করলেন। সাথে তার অনুপস্থিতির উপযুক্ত কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করলেন। হুদহুদ পাখি মাটির গভীরে দেখতে পায়। হজরত সুলায়মান (আ.) জেরুজালেম নগরী প্রতিষ্ঠা করেন। আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর শুরু থেকে অসংখ্য নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন। যার সঠিক সংখ্যার কোনো সুস্পষ্ট তথ্য নেই। কুরআনের বর্ণনা মতে এ সকল নবী-রাসূলদের মধ্যে তিনি যাদেরকে নবুয়ত দানের পাশাপাশি রাজত্ব ও হিকমত প্রদান করেছেন, তাদেরে মধ্যে হজরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম অন্যতম।
নূহ (আঃ)
নূহ (আঃ)-এর চারটি পুত্র ছিল। নূহ (আঃ) ৯৫০ বছর জীবন পেয়েছিলেন। আল্লাহ তা‘আলা আল-কুরআনের ২৯টি সূরায় নূহ (আঃ)-এর ঘটনা তুলে ধরেছেন। আল্লাহপাক হযরত নূহকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, যে বিষয়ে তুমি অবহিত নও সে বিষয়ে তুমি আমার কাছে কোন আবেদন করো না, কারণ এটা অজ্ঞদের কাজ। আমারা কম বেশি সবাই জানি নূহ নবী (আঃ)’র সেই জাহাজের ঘটনা , সে করনে নতুন করে বলার কিছু নাই । তবে সমস্ত বিশ্ব জুড়ে বন্যা হয়েছে, কোরআনের কোথাও এমন কথা বলা নাই। ৪৮০০ বছর আগে পৃথিবীতে মানুষ ছিল কতগুলো?
বন্যার ঘটনাটি ঐতিহাসিকভাবে এমন কোন চিহ্ন রেখে যাইনি পক্ষান্তরে আধুনিক জ্ঞানেও এমন কোন তথ্য নেই যা দ্বারা ধর্মগ্রন্থগুলো বর্ননা সমালোচনা করা যেতে পারে। হযরত নূহ (আঃ) এর স্ত্রী ছিলেন বিধর্মী। তিনি মনে করতেন, তার স্ত্রী কখনও ঈমান আনবে না। কিন্তু পুত্র কেনানের প্রতি দূর্বল ছিলেন। সেজন্য পুত্রকে বাচানোর জন্য তিনি আল্লাহর কাছে দুয়া করেছিলেন। নূহ (আঃ )-এর তিন ছেলে প্লাবন থেকে রক্ষা পায়। তারা পিতার নৌকাতেই ছিলেন। প্লাবনের পর নৌকা থেকে নেমে নতুনভাবে মানুষের বসবাস শুধু হয়। নূহ (আঃ)-এর নির্দেশে তাঁর তিনপুত্র তিনদিকে চলে যায়। তারা তিনটি ভিন্ন এলাকায় গিয়ে বসতবাড়ি তৈরি করে বসবাস শুরু করেন। এভাবে বিভিন্ন জায়গায় মানবজাতির বংশবিস্তার পুনরায় শুরু হয়। সেই জন্য ইতিহাসে হযরত নূহ (আঃ)-কে ‘আদমে ছানী’ বা দ্বিতীয় আদম বলা হয়।
আমার কাছে মনে হয়, বস্ত্ততঃ এসবই বানোয়াট কাহিনী। কোনো প্রকার যাচাই বাছাই ছাড়াই শোনা কথা বলা থেকে আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। যারা ধর্মান্ধ বা মৌলবাদী ধর্ম থেকে তারা তাদের সুবিধামত অংশটুকুই গ্রহন করে। মানব জাতির শেষ্ঠ মানুষ নবীদের জীবনী পাঠ করি, আল্লাহ আমাদের এই সকল কাহিনী ও ঘটনা থেকে উপকৃত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে মোমিন হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১:৫৭