ফার্মগেট ওভার ব্রীজের নিচে এক পাগল দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেওয়ার মতোন করে হাত নেড়ে নেড়ে চিৎকার করে বলছে, সব শালা অমানুষ। সব শালা চোর। এই সমাজে একটাও ভালো মানুষ নেই। যে নিজেকে ভালো মানুষ বলে দাবী করবে সেই শালা আরও বড় বদ। সব দালাল, সব চাটুকার। ধান্দাবাজ সব শালা। শুধু নিজের আখের গোছানোর তালে থাকে। দেশ আর দেশের মানুষের কথা ভাবে না। অথচ লোক দেখানো চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বলে বেড়ায়। আর যারা খারাপ কিছু করতে পারে না, তারা ভাবে তারা ভালো। আসলে তারাও ভালো না। তারা খারাপ কাজ করার সুযোগ পায় না। তাই নিজেকে চাটুকার মুক্ত ভাবে। অন্যদের চেয়ে আলাদা ভাবে। অথচ তাদের মন মানসিকতা ঠিকই নোংরা। এই সমস্ত শুয়োরের বাচ্চাদের আমি ক্ষমা করবো না। ওদের চেয়ে মাগির দালালও অনেক ভালো। সব শুয়োরের বাচ্চাকে শিক্ষা দিয়ে ছেড়ে দিব। আমার নাম মতি লাল বাহাদুর।
শাহেদ দাঁড়িয়ে পাগলের কথা মন দিয়ে শুনলো। তার ধারনা পাগল হলেও মতি লাল বাহাদুর খুব একটা ভুল কথা বলেনি। তারও ইচ্ছা করে এই রকম চিৎকার করে অনেক কথা বলে দিতে। তার পেটের মধ্যে রাজ্যের কথা জমে আছে। অথচ সে কিছুই বলতে পারে না। পাগলের মতো তার এত সাহস নেই। কারন সে চাটুকার দালালদের সাথে পারবে না। প্রচন্ড চালাক না হলে দালাল, চাটুকার আর ধান্দাবাজ হওয়া যায় না। এই সমাজে বুদ্ধিমান লোকের সংখ্যা খুব কম। কিন্তু চালাক লোকের সংখ্যা অনেক। বুদ্ধিমান শব্দটা বেশ সুন্দর। চালাক বা চালাকি শব্দটা তার একেবারেই পছন্দ না। বুদ্ধিমান লোকদের মধ্যে হিংসা, লোভ থাকে না। চালাক লোকদের পেট ভরা হিংসা আর লোভ। লোভে তাদের চোখ চকচক করে। চালাক লোক গুলো সুযোগ পেলেই অন্যের মাথায় পা রেখে উপরে উঠে যায়। দুষ্টলোকদের হিংস্র মানসিকতার শিকার হয় ভালো লোক গুলো।
চাটুকারিতা, চামচামি, তেলবাজি আল্লাহপাকও পছন্দ করেন। আল্লাহপাক বলেছেন, বারবার বলেছেন- তোমরা আমাকে ডাকো, আমার কাছে চাও, আমার ইবাদত করো। আমার গুনগান করো। তাই সব শ্রেনির মানুষ সব সময় আল্লাহর কাছে চায়। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে। আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান বলে চিৎকার করে। পাপ করে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়। এই সমাজে যারা হাজার লক্ষ কোটি টাকার মালিক। তারাও চায় সবাই আমাকে হুজুর হুজুর করুক, আমার চামচামি করুক, আমাকে তেল দিক। পয়সাওয়ালারা চামচাগিরি খুব পছন্দ করে। এজন্য তারা টাকা দিয়ে অনেক লোক রাখে শুধু মাত্র দালালি করার জন্য, চামচাগিরি করার জন্য। যারা চামচাগিরি করতে পারে না, তেল দিতে পারে না- তাদের কোনো আয় উন্নতিও হয় না। কাজেই তেলবাজি, দালালি এবং চামচাগিরি নির্বোধ লোকেরা পারে না। চালাকরাই এ ব্যাপারে এক্সপার্ট। গাড়ি, বাড়ি চালাকদের'ই হয়।
প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রী, এমপি সরকারি আমলা, কবি সাহিত্যিকসহ বড় বড় ব্যবসায়ীরা চাচমাগিরি, তেলবাজি খুব পছন্দ করে। ভালো করে লক্ষ্য করে দেখবেন, সংসদ অধিবেশনে- একজন সংসদ সদস্য শুধু করে, মাননীয় স্পিকার আপনাকে---জাতির জনক------শান্তির কন্যা-----মাদার অব হিউম্যানিটি----(তেলবাজি, চামচাগিরি চলছে'ই) উন্নয়নের রুপকার---- (চলছে, শেষ আর হয় না)------ সংসদ সদস্যের মূল বক্তব্য না, প্রশ্ন নাই। শুধু তেলবাজি চলছে। কাজেই চোখ বন্ধ করে এখন বলা যেতে পারে দেশ নষ্টদের দখলে চলে গেছে। এই জন্য দায়ী শিক্ষিত চাটুকার, দালাল, তেলবাজরা। কালু, মালু, বসু, ওসু আর দালুরা সীমাহীন টাকার মালিক বনে গেছে। তারা এত টাকা করে ফেলেছে যে তাদের এখন আর টাকা রাখার জায়গা নাই। কি নেই তাদের? টিভি চ্যানেল, বিশাল বিশাল অট্রালিকা, মাইলের পর মাইল জমি, শিল্পকারখানা, রিয়েল এসেস্ট, পত্রিকা। তারা অন্য কোটিপতির সাথে পাল্লা দিয়ে গাড়ি কিনেন। এত এত টাকা করেছে যে এই টাকা তাদের চৌদ্দ পুরুষ শুয়ে বসে খেয়ে শেষ করতে পারবে না।
অন্যদিকে কোটি কোটি মানুষ তিনবেলা পেট ভরে খেতে পায় না। চাকরি পায় না। বাবা মা সন্তানকে টাকার অভাবে ভালো স্কুলে ভরতি করাতে পারে না। খাওয়াতে-পড়াতে পারে না এমনকি ভালো হাসপাতালে চিকিৎসাও করাতে পারে না। এই সমাজে অসংখ্য মানুষ টাকার অভাবে ঠিকভাবে খেতে পায় না, চিকিৎসা নিতে পারে না। যারা তিনবেলা ঠিকভাবে খেতে পায় তারা কখনই দরিদ্র মানুষদের দুঃখ কষ্ট গুলো বুঝে না। তারা ভাবে সব মানুষ বুঝি তাদের মতোই খেয়ে পড়ে বেঁচে আছে। এই শ্রেনীর মানুষদের সাহায্য করার জন্য কেউ এগিয়ে আসে না। তাদের কষ্ট কেউ দেখে না। যাদের দেখার কথা তারা উন্নয়নমেলার কর্নসাট আর প্রধানমন্ত্রীর গুনগান নিয়ে ভীষন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। তারা মনে করেন দেশে কোনো বেকার নেই, দেশে কেউ না খেয়ে মরছে না, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পাচ্ছে। দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে। আসলে সহজ সরল সত্য কথা হলো- দেশ নয় তারা নিজেদের ব্যক্তিগত উন্নয়নের শেষ সীমায় পৌঁছে গেছে।
(বাসে, চায়ের দোকানে, আড্ডায়- মানুষ এরকম আলাপ আলোচনা করছে)
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৫