ঝড় দেখেছেন? কালবৈশাখী?
নিজের চোখে এই ঝড় না দেখলে আমি কোনো দিনও বিশ্বাস করতাম না যে ঝড় এত সুন্দর হতে পারে! বিশাল এক সবুজ ধানক্ষেতের পাশে বসে 'থ্রি কমরেডস' বইটি পড়ছিলাম। ধানক্ষেতের পাশে দূরে পদ্মা নদী কিছুটা দেখা যায়। ক্ষেতের পাশ দিয়েই একটা খাল গেছে। সময় তখন মধ্য দুপুর। চারপাশ কেমন থমকে আছে। খুব গরম, একটূও বাতাস নেই। ঠিক এই রকম সময়ে আচমকা বাতাস বইতে শুরু করলো। গরম বাতাস। থ্রি কমরেডস হাত থেকে পড়ে গেল। চারপাশের গাছপালা গুলো হাহাকার করে উঠলো যেন। মুহূর্তের মধ্যে আকাশ ভরা কালো মেঘ জমতে শুরু করলো। দেখতে দেখতে মধ্যদুপুর, রুপ নিলো যেন সন্ধ্যায়। ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে! ব্রজপাতও কি হলো বেশ কয়েকবার?
আকাশে ঘুড়ির মতো গাছের লতা-পাতা আরও কি কি যেন উড়ছে। ঠিক এই সময়ে দেখি বিশাল এক মেঘের খন্ড আমার মাথার উপরে। সব কিছুই বড্ড আবছা লাগছে। চারপাশে গুমগুম আর শো শোঁ শব্দ। মনে হলো যেন কোনো অশরীরী কাঁদছে। অনেকক্ষন পর আমি বুঝতে পারলাম- বাতাস আমাকে ধাক্কা দিচ্ছে। কিছুতেই দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। নিঃশ্বাস নিতে পারছি না, ধুলোর কারনে চোখ মেলে তাকাতেও পারছি না। নদী থেকে মাছ ধরে ফিরে আসা দু'টো নৌকা চোখের সামনেই উলটে গেল। বিশাল বিশাল গাছ, ঝরে পড়া পাতার মতো পড়ে যাচ্ছে। কলা গাছ গুলো রসির মতো দুলছিল। উন্মাদ বাতাস যেন সব কিছু কেড়ে নিতে চাইছে। কার বাড়ির ঘরের চালা, ঘুড়ির মতো আকাশে উড়ছে?
আমার মাথা কাজ করছিল না। চিন্তাশক্তি সব যেন হারিয়ে গেছে। আমি চোখ দিয়ে মন ভরে এই ঝড় দেখতে পারলাম না। ধুলোবালি উড়ে এসে তীরের মতো চোখে আর শরীরে বিঁধছে। একটা বিশাল তেতুল গাছ উপড়ে ফেললো এই ঝড়, আমার পায়ের কাছে। গমগম আর শোঁ শোঁ শব্দে কান স্তব্দ হয়ে পড়েছে। বোধ শক্তিহীন অসাড় হয়ে পড়লাম আমি। তবু বেঁচে থাকার তাগিদে একটা চালতা গাছ ধরে আঁকড়ে রইলাম। ভয় লাগছে না মোটেও কিন্তু মন খারাপ লাগছে 'থ্রি কমরেডস' কোথায় ছিটকে পড়েছে কে জানে! তবু কিভাবে কিভাবে যেন এই মহান ঝড়কে অনুভব করলাম আমার সম্পূর্ণ সত্তা দিয়ে।
এইভাবে প্রায় দশ/পনের মিনিট খেলা করে ঝড়টা থেমে গেল। তারপর শুরু হলো বৃষ্টি। ঝুম বৃষ্টি। ভিজতে ভিজতে বাড়ি ফিরলাম। সুরভি আর পরী আমাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো। প্রকৃতি মুহূর্তের মধ্যে মানুষকে বড় অসহায় করে দেয়। তছনছ করে দেয় অসংখ্য জীবন। প্রকৃতির তান্ডবলীলা থেকে বাচতে হলে আমাদের প্রকৃতির যত্ন নিতে হবে সব সময়। ভুলেও প্রকৃতির ক্ষতি হয় এমন কিছু করা যাবে না। নো নেভার। আমাদের প্রচুর গাছ লাগাতে হবে। নদীর যত্ন নিতে হবে। পরিবেশ দূষণ কমাতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:১১