বারো তেরো বছরের বাচ্চা ছেলেরা দল বেঁধে মোবাইল চুরী করছে নিয়মিত। অথচ এই বয়সে ওদের স্কুলে পড়ার কথা। দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহন করার কারনে তারা চুরী করছে। চুরীর টাকা দিয়ে নেশা করছে। নিজের চোখে দেখা দু’টা ঘটনা বলি।
মিরপুর-১ এবং মিরপুর- ১০ নম্বর বেশ ব্যস্ত এলাকা। মানুষের ভিড়, বাস গাড়ির যানজট এবং ফুটপাতের দোকান সব মিলিয়ে বেড়াছেড়া অবস্থা। কেউ কেউ যখন মোবাইলে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হয় বা ফুটপাত ধরে হাঁটতে থাকে তখন অল্প বয়সী বাচ্চা ছেলেরা ছোঁ মেরে মোবাইল নিয়ে মুহুর্তের মধ্যে ভেনিশ হয়ে যায়। বিশেষ করে, কোনো মেয়ে যখন রাস্তা পাড় হয়, হাতে মোবাইল থাকুক বা হ্যান্ড ব্যাগের মধ্যে মোবাইল থাকুক বা টাকার ছোট্র পার্টস থাকুক। কয়েকজন ছেলে রাস্তা পার হচ্ছে এমন ভাব ধরে ব্যাগের মধ্যে থেকে মোবাইল বা পার্টস নিয়ে যায়। আপনি দশ বা পনের মিনিট দাঁড়িয়ে থাকলেই এই দৃশ্য দেখতে পাবেন। প্রতিদিন একই ঘটনা অহরহ ঘটছে। এই ঘটনা শুধু মিরপুর-১ বা ১০ নম্বর নয়, ঢাকা শহরের বহু এলাকায় রোজ এমন ঘটনা ঘটছে। গুলিস্থান, কমলাপুর রেলস্টেশন, সদরঘাট, সায়দাবাদ, গাবতলী, যাত্রাবাড়ি, ফার্মগেট, মহাখালী ইত্যাদি এলাকায়।
বাস জ্যামে দাঁড়িয়ে আছে। একলোক বাসের মধ্যে কথা বলছে। জানালা দিয়ে এক পিচ্চি ছোঁ মেরে মোবাইল নিয়ে দৌড়। বাস থেকে নেমে ঐ পিচ্চিকে ধরা সম্ভব নয়। মোবাইল নিয়ে দৌড় দেওয়ার কাজটা এইসব টোকাই শ্রেনীর বাচ্চারা খুব ভালো পাড়ে। এইসব বাচ্চারা এত এক্সপার্ট হলো কি করে? আবার ধরুন, ড্রাইভার গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। পেছনে স্যার বা ম্যাডাম বসে আছেন। যদি জানালা খোলা থাকে তাহলে কোনো না কোনো টোকাই মোবাইল থাবা দিয়ে নিয়ে ঝেড়ে দৌড় লাগায়। কারন গাড়িতে বসলেই সবাই মোবাইল টিপায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আশেপাশে তখন আর খেয়াল থাকে না। একসময় চলন্ত সিএনজি থেকে টোকাইদের মোবাইল নিয়ে যাওয়াটা ফ্যাশনে পরিনত হয়েছিল। ধরুন, আপনি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন, হাতে মোবাইল অথবা সাথে ল্যাপটপ চলন্ত বাইক থেকে মুহুর্তের মধ্যে আপনার কাছ থেকে মোবাইল বা ল্যাপটপ থাবা দিয়ে নিয়ে যাবে। বাইকের সাথে দৌড় দিয়ে আপনি পারবেন না। পুলিশের কাছে গিয়েও কোনো লাভ নেই। তাই প্রতিটা মুহুর্ত সর্তক থাকতে হবে আমাদের।
এবার একটু অন্য বিষয় নিয়ে আলাপ করি।
এই যে ঢাকা শহরে এত এত কমিউনিটি সেন্টার। সেখানে রোজ বিয়ে শাদী হচ্ছে। এই সমস্ত বিয়ের অনুষ্ঠানে প্রচুর খাবার নষ্ট হয়। যে গুলোকে আমরা জুঠা বা এঁটো খাবার বলি। এই জুঠা খাবার গুলো কেনার জন্য টেন্ডার হয়। বহু লোক এই টেন্ডারে অংশ নেয়। কমিউনিটি সেন্টারের সাথে চুক্তি করে এক বছরে জন্য। এক বছরে যত অনুষ্ঠান হবে এবং অনুষ্ঠানের খাবার নষ্ট হবে তা তারা কিনে নিবে। এক বছরের জন্য দুই লাখ বা আড়াই লাখ টাকা। এই খাবার গুলো কিনে তারা কি করে? আরেক শ্রেনীর লোক রাত বারোটার পর এঁটো খাবার গুলো কিনে নিয়ে যায়। তারপর ভ্যানে করে বাংলামোটর, কাওরান বাজার, মিরপুর মাজার, হাইকোট মাজার, গুলিস্থান এবং কমলাপুর বিক্রি করে। অসংখ্য টোকাই বা রিকোশাওয়ালা বা ছিন্নমূল মানুষেরা সেই জুঠা খাবার কিনে খায়। এক প্লেট ত্রিশ টাকা। আমি নিজে রিকশাওয়ালা আর টোকাইদের বেশ আগ্রহ নিয়ে খেতে দেখেছি।
এই যে বাসা বাড়িতে রোজ রোজ ময়লা জমে। রান্নাঘরে রান্না শেষ করে প্রতিদিন এক দুই বালতি ময়লা জমে। প্রতিদিন ময়লাওয়ালা এসে ময়লা গুলো নিয়ে যায়। আপনি মাস শেষে পঞ্চাশ বা এক শ’ টাকা দিয়ে দেন। ঝামেলা শেষ। কিন্তু এই ময়লা গুলো কোথায় যায়? কি হয়? বাসা বাড়ির এই সমস্ত ময়লা নিয়েও লক্ষ লক্ষ টাকার ব্যবসা হয়। বহু টেন্ডার চালাচালি হয় এই সমস্ত ময়লা নিয়ে। রাস্তার পাশে যে সমস্ত ডাস্টবিন দেখেন, গন্ধে আপনি নাক কুঁচকে রাখেন। সেই সমস্ত ডাস্টবিন অনেক মূল্যবান। এক শ্রেনীর বড় ভাই সেই ডাস্টবিন নিয়েও ব্যবসা করে লক্ষ লক্ষ টাকার। খিলগা এলাকার ডাস্টবিনে রামপুরা এলাকার টোকাইরা আসবে না। আবার খিলগা এলাকার টোকাইরা রামপুরার ডাস্টবিনে যাবে না। এটা অলিখিত নিয়ম। যদি যায়- তাহলে মারামারি লেগে যায়। মারামারি যেন না লাগে তার জন্য আছেন বড় ভাই। বড় ভাইরা সব দেখাশুনা করেন।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:২৯