somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

বন্ধুর খোঁজে

১৩ ই আগস্ট, ২০১৯ রাত ৯:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জীবনে প্রথম বাঘ দেখার আশায় সুন্দরবন গেলাম।
কিন্তু বাঘের দেখা পেলাম না। বইতে কত বাঘের কথা পড়েছি। দুবলার চর এলাকায় তিন দিন দুই রাত থাকলাম। তন্নতন্ন করে খুজেও বাঘের দেখা পেলাম না। তবে, খুব উপভোগ করলাম প্রকৃতি। মুগ্ধ হলাম। হরিণ আর বানর খুব বেশি বিরক্ত করেছে। সাগরের পাড়ে শুয়ে আছে কুমিড়। বানর আর হরিন আমাদের আশপাশ দিয়েই খুব দৌড়াদৌড়ি করেছে। বঙ্গোপসাগরে যখন সূর্য ডুবে যায়, তা এক দেখার মতো ব্যাপার। এত সুন্দর, এত সুন্দর যে মরে যেতে ইচ্ছা করে।

বাঘ আমাকে দেখতেই হবে।
পরের বছর আবারও সুন্দরবন গেলাম। এবার গেলাম হিরণ পয়েন্ট। যে জাহাজে করে গিয়েছি তার নাম এম ভি মাছরাঙ্গা। বিশাল জাহাজ। চার তলা। এবারও মন খারাপ করে ফিরে এলাম, বাঘের দেখা পেলাম না। কিন্তু বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পেলাম। যে এলাকায় বাঘ দেখতে পাওয়া যায়, সেসব এলাকায় বন কর্মকর্তারা একটা লাল পতাকা লাগিয়ে রাখে। হাতির পিঠে চড়লাম। প্রকৃতি খুব উপভোগ করলাম। অদ্ভুত সুন্দর। মুগ্ধ! আমি মুগ্ধ! বাসার জন্য খাটি মধু নিলাম এক বোতল।

তৃতীয় বার গেলাম কটকা।
এবং অবিশ্বাস্য ভাবে বাঘের দেখা পেয়ে গেলাম। সেই গল্প'ই এখন বলব।
আমরা প্রায় একশো জনের একটা দল স্টিভ অস্টিন নামে একটা জাহাজে করে সুন্দরবন গিয়েছি। খুব সুন্দর ব্যবস্থা। থাকা, খাওয়া-দাওয়ার কোনো সমস্যা নেই। কেবিন গুলো চমৎকার। জানালা দিয়ে অনেক দূর দেখা যায়! যাই হোক, আমি সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে একা উলটো দিকে হাঁটা শুরু করলাম। প্রায় দেড় ঘন্টা হেঁটে বনের অনেক গভীরে চলে গেলাম। চারদিকে এত গাছপালা যে দুপুর বেলায় হঠাৎ যেন বনে অন্ধকার নেমে আসে। হেঁটে হেঁটে আমি অনেক ক্লান্ত। ঠিক এমন সময়- অপ্রত্যাশিতভাবে দশ গজ দূরে এক বিশাল বাঘ দেখতে পেলাম।
রয়েল বেঙ্গল টাইগার! আবেগে আনন্দে আমি হতবাক, একটা স্বপ্ন সত্যি হয়ে গেল, এই খুশিতে চোখে পানি চলে আসছে। পায়ের তলায় সদ্য শিকার করা হরিণ। তখনও হরিণটা পুরোপুরি মরে যায়নি। তবে খুব ছটফট করছিল। এক আকাশ অবহেলা নিয়ে বাঘটি যেন হরিণটিকে ধরে রেখেছে। তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে আমার দিকে একবার তাকালো বাঘটি। আমি একটুও ভয় পেলাম না। বরং এক আকাশ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকলাম। বাঘ দেখে পালানো বা লুকানোর কথা কিছুই মনে আসলো না আমার। আমার কাঁধে ক্যামেরা অথচ ছবি তোলার কথাও ভুলে গেলাম। এক পৃথিবী বিস্ময় নিয়ে স্বাধীন এক নবাবজাদাকে দেখছি।

বাঘ নিয়ে আমি কিছুটা পড়াশোনা করেছি। তাই আমি জানি, বেশির ভাগ বাঘ'ই মানুষ খেকো নয়। বাঘ যে ক'জন মানুষ মেরেছে তার চেয়ে নব্বই গুন বেশি মানুষ বাঘ হত্যা করেছে। আমি আরও কয়েক পা এগিয়ে গেলাম। আমার সাথে কোনো অস্ত্র নেই। বাঘটি একবার পেছনের দিকে চেয়ে, পর মুহূর্তেই আবার আমার দিকে তাকালো। তখনও তার পায়ের নিচে শিকার ধরা। হরিনটি তখনও পুরোপুরি মরে যায় নি। কিন্তু বাঘের থাবা থেকে পালানোর মতো অবস্থা তার নেই।

বাঘের দিকে তাকিয়ে আমি বললাম, অবশেষে তোমার দেখা পেলাম। বাঘটা হাই তুলল।
আমি আবার বললাম, আমি তোমাকে বিরক্ত করবও না। একটুও বিরক্ত করবও না। বাঘটা অসহায়ভাবে শুধু আমার দিকে চেয়ে থাকল।
আমি বললাম, আমাকে ভয় নেই, আমি তোমার বন্ধু।
বাঘটি আমাকে পাত্তা না দিয়ে, শিকার নিয়ে অন্য কোথাও চলে গেল।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০১৯ রাত ৯:১৪
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×