somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভূমি ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত আইন জমি বিক্রয়ে বিরোধ এড়াতে যা জানা দরকার

১২ ই নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিভিন্ন কারণেই আমাদের জমি ক্রয় এবং বিক্রয় করতে হয়। জমি ক্রয়-বিক্রয়ের সময় ক্রেতা-গ্রহীতা প্রায়ই নানাবিধ কারণে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। বিক্রয়ের জন্য প্রস্তাবিত জমির ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে অনাকাঙ্খিত বিরোধ এড়াতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জেনে রাখা দরকার।

কোন কর কে দেবেঃ

ভ্যাট ও উৎস কর সর্বদাই জমির বিক্রেতা দেয়। আয়কর আইনের বিধান মতে, এ দু’ধরনের কর হচ্ছে বিক্রেতার আয়ের ওপর ধার্য কর। এ কর বিক্রেতার নামে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হয়। জমি বিক্রয়ের সময় এ দু’প্রকার কর আদায় করা হলে তা অবশ্যই বিক্রেতা কর্তৃক পরিশোধ করতে হবে। অন্যান্য কর জমির ক্রেতাকে পরিশোধ করতে হবে।

ভ্রম সংশোধন দলিলঃ

দলিল রেজিস্ট্রির পর তাতে দাগ, খতিয়ান, মৌজা, চৌহদ্দি বা নামের ভুল ধরা পড়লে তা খুব সহজেই সংশোধন করা যায়। এ ধরনের ভুল ধরা পড়ার তিন বছরের মধ্যে দেওয়ানি আদালতে দলিল সংশোধনের মামলা করতে হয়। তিন বছর পর এ ধরনের মামলা তামাদির দ্বারা বারিত হয়ে যায়। তিন বছরের মধ্যে দলিল সংশোধনের মামলা দায়ের করতে ব্যর্থ হলে, নির্দিষ্ট সময় অতিক্রান্তে (অর্থাৎ ৩ বছর পরে) দেওয়ানি আদালতে তখন ঘোষণামূলক মামলা করা যায়। আদালতের রায়ের এক কপি সংশ্লিষ্ট সাব রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠানোর পর সাবরেজিস্ট্রার ওই রায়ের আলোকে ভলিউম সংশোধন করে নেবেন। এছাড়াও ভ্রম সংশোধন দলিল করেও আগে সম্পাদিত দলিলের ভুল সংশোধন করা যায়।

জাল দলিল বাতিলের পদ্ধতি‍ঃ

অপরের সম্পত্তি প্রতারণা করে নিজ নামে বাগিয়ে নেয়ার জন্য নানা কৌশলে সৃজন করা হয় জাল দলিল। কখনও নিরক্ষর মালিককে প্রলোভন দেখিয়ে কখনও বা জমি মালিকের অজান্তে অন্য লোককে মালিক সাজিয়ে গোপনে জাল দলিল তৈরি করা হয়। জাল দলিল যেভাবেই সৃজন করা হোক না কেন, জাল দলিল জমির মূল মালিক বা তার ওয়ারিশদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

জাল দলিল সম্পর্কে জানার তিন বছরের মধ্যে দেওয়ানি আদালতে ওই জাল দলিল বাতিলের জন্য মামলা দায়ের করতে হবে। দলিল বাতিলের সঙ্গে সঙ্গে সম্পত্তির দখল পাওয়ার মামলা করাও সমীচীন হবে।

কমিশনের মাধ্যমে দলিল রেজিস্ট্রিঃ

দলিলদাতাদের মধ্যে কেউ রেজিস্ট্রি অফিসে যেতে অক্ষম বা অপারগ হলে তিনি রেজিস্ট্রেশন আইনের ৩৮ ধারা মতে, দলিল সম্পাদন স্বীকারোক্তি গ্রহণের জন্য কমিশনে প্রার্থণা করে সাবরেজিস্ট্রারের কাছে আবেদন করতে পারবেন। এরূপ আবেদনের ভিত্তিতে সাবরেজিস্ট্রার বা তার প্রতিনিধি দলিল দাতার বাসস্থানে গিয়ে সম্পাদন স্বীকারোক্তি গ্রহণের মাধ্যমে দলিল রেজিস্ট্রি করাকে বলে কমিশন মূলে রেজিস্ট্রি। এজন্য আলাদা কমিশন ফিস জমা দিতে হয়। এ প্রসঙ্গে প্রায়ই অভিযোগ শোনা যায়, সাবরেজিস্ট্রার অফিসের সংশ্লিষ্টরা কমিশন ফিস বাবদ অতিরিক্ত টাকা আদায় করে থাকে।

ভিজিটে দলিল রেজিস্ট্রির পদ্ধতিঃ

দলিলদাতা এবং গ্রহীতা উভয়ের কেউই যদি রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে দলিল দাখিল করতে না পারেন সেক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন আইনের ৩১ ধারা মতে, দলিলদাতার বাড়িতে গিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করে দেয়ার জন্য রেজিস্ট্রি অফিসে আবেদন করা যাবে। কমিশন বা ভিজিটের জন্য আবেদন করা হলে রেজিস্ট্রারিং অফিসার দাতার সম্পাদন স্বীকারোক্তি দলিলে লিখে দলিলটি রেজিস্ট্রির ব্যবস্থা করবেন। রেজিষ্টারিং অফিসার নিজে যেতে না পারলে তার অফিসের যে কোনও অফিসার বা বেতনভোগী কর্মচারীকে দিয়ে তার কমিশন জারি করতে পারবেন। ভিজিটের জন্য আবেদন করলে ভিজিট ফি সঙ্গে জমা দিতে হবে।

প্রতিষ্ঠানের নামে দলিল লেখার নিয়মঃ

প্রতিষ্ঠানের নামে জমি দান বা ক্রয় করতে হলে তা সরাসরি প্রতিষ্ঠানের বরাবরে দলিল করতে হবে। ব্যক্তির নাম প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে দলিল করা যাবে না। তবে কোনও কোম্পানির ক্ষেত্রে তার চেয়ারম্যান, ব্যবস্থপনা পরিচালক কিংবা কোম্পানির পক্ষে অন্য কোনো পদস্থ ব্যাক্তিকে প্রস্তাবিত জমি ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে দাতা গ্রহীতা হতে পারেন।

কৈফিয়ত‍ঃ

সাফ কবলা দলিলের নমুনা ফরমে কৈফিয়ত নামীয় একটি কলাম আছে। সাফ কবলা দলিল লেখার সময় ভুল হতে পারে। কোথাও কোনো ভুল হলে আ;ালদে সংশোধন করা হলে এরূপ সংশোধনের পৃষ্ঠা ও লাইন নম্বর উল্লেখ করে দলিলের শেষাংশে কৈফিয়ত হিসেবে তা লিখে দিতে হয়। উপরোক্তরূপ লেখার নিচে দলিল লেখক সই করবেন।

জমি হস্তান্তরে বাধাসমূহ‍ঃ

ক) নাবালক, শত্রু দেশের নাগরিক, আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত ব্যক্তি, মদ্যপানে মত্ত ব্যক্তি বা পাগল ব্যক্তি কর্তৃক সম্পাদিত কোনো দলিল বাতিল বলে গণ্য হবে।

খ) যদি কোনো সম্পত্তি কোনো আইনবলে হস্তান্তরের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকে তবে সে সম্পত্তি হস্তান্তর করে দলিল সম্পাদন করা হলে সে দলিল বাতিল বলে গণ্য হবে।

গ) দলিলদাতাকে কোনরূপ ভয় দেখিয়ে বা লোভ দেখিয়ে বা জোর করে যদি কোনরূপ দলিল সম্পাদন করা হয় তবে তা বাতিল বলে গণ্য হবে।

জমি ক্রয়ের পর ক্রেতা-মালিকের করণীয়‍ঃ

একজন ক্রেতা হিসেবে আপনি যে প্রক্রিয়াতেই জমি ক্রয় করুন না কেন, ঐ জমি ক্রয় করার পর মালিকানা স্বত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য নিুোক্ত কাজগুলো করতে হবে।

১) জমি রেজিস্ট্রি করার পর ওই জমি পরিমাপপূর্বক সীমানা নির্ধারণ করে পূর্বের মালিকের কাছ থেকে দখল বুঝে নিতে হবে।

২) জমিতে দখল প্রতিষ্ঠার জন্য বাস্তব ব্যবহার তথা চাষাবাদ/ঘরবাড়ি নির্মাণ ইত্যাদি করতে হবে।

৩) সংশ্লিষ্ট সাবরেজিস্ট্রার অফিস থেকে মূল দলিল সংগ্রহ করতে হবে। মূল দলিল উত্তোলনে বেশি সময়ের প্রয়োজন হলে সার্টিফায়েড কপি (মূল দলিলের হুবহু নকল) তুলে নিতে পারেন।

৪) সার্টিফায়েড কপি (নকল) প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে ওই ক্রয়কৃত জমি আপনার নিজ নামে নামজারি জমা ভাগের জন্য আবেদন করতে ভুলে যাবেন না।

৫) সহকারী কমিশনার (ভূমি) নামজারি খতিয়ান অনুমোদন দেয়ার পর নামজারি খতিয়ান, ডিসিআর-এর কপি ও ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করে দাখিলার কপি আপনি নিজে সংগ্রহপূর্বক সংরক্ষণ করুন।

৬) মনে রাখবেন, আপনি কষ্টার্জিত অর্থে জমি ক্রয়ের পর ওই জমি আপনার দখলে নিতে ব্যর্থ হলে এবং আপনার নিজ নামে নামজারি (মিউটেশন) করতে বিলম্ব করলে অসাধু ও চতুর জমি বিক্রেতা ঐ জমি আবার অন্যত্র বিক্রয়ের প্রচেষ্টা চালাতে পারে। তাই জমি ক্রয়ের পরপরই ক্রয়কৃত জমির দখল বুঝে নিন এবং নামজারি করুন।

উপরিল্লিখিত বিধানাবলী জানা থাকলে জমি ক্রয়-বিক্রয়ের সময় ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সম্ভাবনা থাকবে না এবং জমি ক্রয়ের পর ক্রেতার করণীয়গুলো জানা থাকলে ক্রেতা অপ্রত্যাশিত প্রতারণার হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন।

মোদ্দাকথা জমি ক্রয়-বিক্রয়ের সময় ক্রেতা এবং বিক্রেতাকে উপরিল্লিখিত বিধানাবলী সঠিক পদ্ধতিতে মেনে চলতে হবে। জমি ক্রয়-বিক্রয়ের সময় ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই যাতে প্রতারিত না হয় সেজন্য উভয় পক্ষকেই আন্তরিক এবং পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।

লেখক: সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী জজ কোর্ট, কুষ্টিয়া।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×