দিন দিন আমরা আশাহত হয় পরছি। দেশে নিরবিচারে বেড়েই চলেছে খুন, ধর্ষণ, হত্যা। কিছু দিন আগে সুনিলের সেই সময় পড়ছিলাম আর ভাবছিলাম একি সময়াজে এতো বৈপরীত্য হয় কি করে? কিন্তু যখন আজকের বাংলাদেশ দেখি মনের মধ্যে কি জানি একটা ভয় খামচে ধরে। সত্যি সত্যি মনে হয়, নিরাশাবাদিরাই কি তবেঁ ঠিক? আসলেই কি এ দেশের কিছু হবে না। কালের আবর্তনে আমরা কি তবেঁ উলটো রথ যাত্রা করছি।মানবিকতা, মনুষ্যত্ব সব কি শুধু ডিগ্রি অর্জন আর প্রতিযোগিতার বাজারে আমরা খুইইয়ে বসেছি। আমাদের কে মেরুদণ্ড বলে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই?
এক ভিকারুন নিসার ঘটনায় সারা ভারচুয়াল জগত আজ ক্ষুব্ধ। চাপা পড়া আগ্নেয়গিরির মত আজ দেশের ও বিদেশের যুব সমাজ ফুঁসছে। এরা সেই জুব সমাজ যারা আজকের সরকারকে দেশ পরিছালনার দায়িত্ব দিয়েছিলো। কিন্তু তারা আজ কি দেকছে?
তারা আজ দেকছে, নির্দোষ ব্লগ বা ফাইসবুক নোট লিখলে আজকাল মানহানির মামলা হয়। তারা দেকছে এক অমানুশ নর পশু পরিমলকে বাচাতে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র কেমন মরিয়া।
স্কুল কলেজের ছোট ছোট মেয়েরা আজকে আমাদের নারী নীতি জানে। কোন ধারায় কোন শাস্তি তাও জানে। ওদের কি এসব জানার বয়স হএয়ছে? কই আমরা তাদের বুদ্ধিমত্তা আর মেধা ব্যাবহার করে দেশ কে সূর্য শিখরে পৌঁছে দেবো নাহ! আমরা তাদেরকে আবার ঠেলে দিচ্ছি অন্তঃপুরে। কে জানে আর দশ পনেরো বছর পর হয়তো আমাদের রমনিকুল আবার ও অসুরযস্পরশা হয়ে বাস করবে।
বলছিলাম পরমলের কেইস টি নিয়ে একটি জাতিয়ে দৈনিকের প্রাপ্ত তথ্য হুবহু তুলে দিচ্ছি-
' পরিমলের জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন নাকচ
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক পরিমল জয়ধরের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন নাকচ করেছে আদালত। গত ১১ জুলাই হাকিমের কাছে দেওয়া ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহরের জন্য বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতে আবেদন জানান পরিমল। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে যা বলেছেন, তার সঙ্গে পরিমল একমত নন- এ কারণ দেখিয়ে ওই জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়। এ সময় জামিনের আবেদনও করা হয়। তবে বিচারক সাবরিনা আলী নিয়ম অনুযায়ী পরিমলকে কারাকর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদনটি আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেন। মামলার পরবর্তী দিন রাখেন আগামী ২৭ জুলাই।
এদিকে বাদির আইনজীবী ইস্কান্দার আলী মিয়া ও জিল্লুর রহমান তালুকদার বৃহস্পতিবার মামলার অপর দুই আসামি ওই স্কুলের অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগম এবং বসুন্ধরা শাখার সাবেক প্রধান লুৎফর রহমানকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেন। আবেদনে তারা বলেন, আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় মামলার আসল আলামত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তারা চক্রান্ত করে প্রকৃত সত্যকে আড়াল করে বিভিন্ন কাল্পনিক ঘটনা সাজিয়ে গণমাধ্যমের সামনে হাজির হচ্ছেন। মামলা দায়েরের পর ১৮ দিন পার হলেও এই দুই আসামিকে 'ইচ্ছাকৃতভাবে' গ্রেপ্তার করছে না পুলিশ। বিচারক এ বিষয়ে কোনো আদেশ না দিয়ে আবেদনটি নথিতে রেখে দেন।'
উপরের সংবাদটি পাঠ করার পর আমি একটা ব্লগ পড়ি সেই ব্লগের মাধ্যমে আমি আমাদের দেশের বর্তমান অবস্থায় এই অপরাধের কি বিচার হতে পারে তাও জানি। সেই ব্লগার ভাই কে অসংখ্য ধন্যবাদ বিষয়টি জানানর জন্য। সেই ব্লগার ভাইয়ের ব্লগটি আমার পিসি তে কপি করে রেখেছিলাম। লিঙ্কটি নেই বলে লিঙ্কটি দিতে পারছি না। তার লেখায় আইনি যে দিক টা উঠে এসেছে সেটা হুবহু দিচ্ছি-
'আইনে যা বলা আছে
ধর্ষিত শিশুটির লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, ধর্ষক পরিমল শিশুটিকে নিয়মিত ধর্ষণের উদ্দেশ্যে নগ্ন ছবি তুলে সেই ছবি প্রকাশের ভয় দেখিয়ে তাকে ব্ল্যাকমেইল করে নিজের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করেছে৷ সাহসী শিশুটি ধর্ষকের সকল হুমকি অগ্রাহ্য করে পুরো ঘটনা সহসাথী, মাতাপিতা এবং স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে৷ এখন আসুন, বাংলাদেশের আইনে শিশু ধর্ষণের শাস্তি সম্পর্কে কি বলা আছে দেখি৷
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ প্রণয়ন করা হয়েছে নারী ও শিশু নির্যাতনমূলক অপরাধসমূহ কঠোরভাবে দমনের উদ্দেশ্যে৷ এই আইনের ৯ ধারার ব্যাখ্যায় সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, যদি কোন পুরুষ ষোল বছরের কম বয়সী কোন নারীর সাথে তার সম্মতিসহ বা সম্মতি ছাড়াই যৌনসঙ্গম করেন তাহলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করিয়াছেন বলে গণ্য হবেন৷ এখন প্রশ্ন হলো এর শাস্তি কি হবে? ধারা ৯ এর অনুচ্ছেদ ১ এ বলা হয়েছে কোন পুরুষ যদি কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন তাহলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন৷
আলোচ্য ঘটনায় ধর্ষিতার বয়স ১৬ বছরের কম৷ অতএব ধর্ষক পরিমলের অপরাধ প্রমাণিত হলে তার যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড হবে৷ সেসঙ্গে অর্থদণ্ডও হতে পারে৷ এমনকি ভিকারুননিসা নূন স্কুলের অধ্যক্ষা হোসনে আরার দাবী মোতবেক এই ঘটনা ‘মিউচুয়ালসেক্স’ হলেও আইন অনুযায়ী পরিমল মেয়েটিকে ধর্ষণ করেছে বলেই গণ্য হবে, যেহেতু তার বয়স ১৬ বছরের কম৷
অর্থদণ্ডের ব্যাপারে এই আইনের ১৫ ধারায় বলা হয়েছে যে, ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক আরোপিত অর্থদণ্ডকে, প্রয়োজনবোধে, ট্রাইব্যুনাল অপরাধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে গণ্য করতে পারবে এবং অর্থদণ্ড বা ক্ষতিপূরণের অর্থ দণ্ডিত ব্যক্তির নিকট হতে বা তার বিদ্যমান সম্পদ হতে আদায় করা সম্ভব না হলে, ভবিষ্যতে তিনি যে সম্পদের মালিক বা অধিকারী হবেন সে সম্পদ হতে আদায়যোগ্য হবে এবং এরূপ ক্ষেত্রে উক্ত সম্পদের ওপর অন্যান্য দাবী অপেক্ষা উক্ত অর্থদণ্ড বা ক্ষতিপূরণের দাবী প্রাধান্য পাবে৷
অর্থদণ্ড বা ক্ষতিপূরণ আদায়ের পদ্ধতি সম্পর্কে আইনের ধারা ১৬ তে বলা হয়েছে যে, এ আইনের অধীনে কোন অর্থদণ্ড আরোপ করা হলে, ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক নির্ধারিত পদ্ধতিতে অপরাধীর স্থাবর বা অস্থাবর বা উভয়বিধ সম্পত্তির তালিকা প্রস্তুতক্রমে ক্রোক ও নিলাম বিক্রয় বা ক্রোক ছাড়াই সরাসরি নিলামে বিক্রয় করে বিক্রয়লব্ধ ট্রাইব্যুনালে জমা দেবার নির্দেশ দিতে পারবে এবং ট্রাইব্যুনাল উক্ত অর্থ অপরাধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে প্রদানের ব্যবস্থা করবে৷
এখন কথা হলো পরিমলের শাস্তি হতে কতোদিন সময় লাগবে?
এই আইনের ১৮ ধারা অনুযায়ী অপরাধের তদন্ত অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ধরার পর থেকে ১৫ দিনের মধ্যে সম্পন্ন হবে৷ ২০ ধারা অনুযায়ী বিচার কার্য ১৮০ দিনের মধ্যে শেষ হবে৷ ধারা ২১ অনুযায়ী আসামীর অনুপস্থিতিতেও বিচার সম্পন্ন হতে পারবে৷
পরিমল ও তার সহযোগীদের বিচার শুধুমাত্র যে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনেই হবে তা নয়৷ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ (সংশোধন) আইন ২০১০ অনুসারেও তাদের বিচার হতে পারে৷ কারণ সে ধর্ষিতার ছবি তোলার কাজে ও হুমকি দিতে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেছে৷ এই আইনের ৬৯ ধারা অনুযায়ী দোষী সাব্যস্ত হলে পরিমল ও তার সহযোগীদের অনধিক দুই বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড হতে পারে৷ ধর্ষক পরিমল ও সহযোগীদের কর্মকান্ড জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদের অনুচ্ছেদ ৩৪ ও ৩৬ এর সুস্পষ্ট লংঘন৷ যেখানে বলা আছে এই সনদ অনুমোদনকারী রাষ্ট্রপক্ষ শিশুদের সকল প্রকার যৌন শোষণ ও যৌন উত্পীড়ন থেকে সুরক্ষা দেবে৷ বাংলাদেশ ১৯৯০ সালে অনুমোদন করায় ১৯৯১ সালের ২ সেপ্টেম্বর থেকে এই সনদ বাস্তবায়ন করা বাংলাদেশের জন্য আবশ্যক৷'
আমি আইন কানুন খুব একটা জানি না। আমি শুধু জানি natural justice বলে একটা বিষয় আছে যেখানে সত্য মিত্থা ন্যায় অন্যায়ের বিভেদ টা অনেক বেশি স্পষ্ট। আমি জানি না কেন এই অপরাধের রায় নিয়ে জনমনে এতো শঙ্কা? আমি জান্তেও চাই না। আমি শুধু বুঝি যেখানে সারা দেশের তরুন সমাজ একটা মাইলফলক রায়ের অপেক্ষা করছে সেখানে কোন দিন কোন ভাবে কোন সংকোচ বা দ্বিধা থাকা উচিত নয়। আমরা আমাদের বিজ্ঞ আদালতের দিকে অধির আগ্রহে তাকিয়ে আছি। আমরা আশায় বুক বেধে আছি আমরা ন্যায় বিচার পাবো। কারন এটা ধর্ষকের দেশ নয়। এটা মুক্তিযোদ্ধাদের দেশ। একবার আমাদের ২ লক্ষ মা বোন সম্ব্রম হারিয়েছেন পশুদের দ্বারা। স্বাধীন দেশে এটা হবে না। কোন ভাবেই না। কোন ভাবেই না।