somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মসলার মাপ.....জীবনে বেজায় চাপ !!!!!

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রান্নার অভিজ্ঞতা এই নিয়ে তিন বছরের। অবশ্য এই রান্নাকে আসল রান্না বলা যায় কিনা তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা আর প্রশ্নের অবকাশ রয়েই যায়। তাই আমরা রুমমেটরা একে বলি ব্যাচেলর রান্না। এর মানে হলো যে রান্না যেমনই হোক খেয়ে কোনো অভিযোগ করা যাবেনা। আরে ভাই কামলা খাইটা আইসা যে রান্না করছি এই তো বেশি। মুখে দেয়া যায় তো? তাইলে ঠিক আছে। আর কথা না বাড়াই। প্রবাসে ব্যাচেলরদের রান্নায় ভাত জাউ, তরকারিতে লবন বেশি নাইলে ঝাল বেশি নাইলে বেশি পানি দেয়ার কারণে পানসা হয়ে যাওয়া প্রতিদিনের ব্যাপার। খাওয়ার সময় গা জ্বালা করলেও, মুখে না গেলেও গিলতে হয়। প্রবল হতাশা নিয়ে আশাবাদী হই যে কোনমতে পেট ভরলে সিগারেট খেয়ে আরাম পাওয়া যাবে আর তাতে এই নামকাওয়াস্তে খাওয়ার কষ্ট কিছুটা হলেও দূর হবে। এই সর্বনাশা মসলার মাপ নিয়েই কথা বলতেই এতক্ষণ ধান ভাঙ্গতে শিবের গীত গাওয়া।

আম্মু'র রেসিপি, সিদ্দিকা কবীর এবং আরো নানান রেসিপির বই ঘেটেও মসলার মাপ সম্পর্কে তেমন কিছু শেখা যায়না। রেসিপির বইগুলোতে নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষের জন্য নির্দিষ্ট পরিমান মসলার কথা লেখা থাকে। কিন্তু মানুষ বা খাবারের পরিমান তার থেকে বেশি হলে কি ভাবে মসলার মাপটা আন্দাজ করা যাবে সে সম্পর্কে কিছু বলা থাকে না। তাইলে আমরা নতুন বাবুর্চিরা বুঝব কেমনে? রান্নার সময় কতদিন সিলিং এর দিকে তাকায়া ছিলাম যে যদি আল্লাহ দয়া করে উপর থেকে মাথায় আর হাতে সঠিক মাপটা পাঠায়া দেন। সে আশায় প্রতিবারই গুড়ে বালি হইছে। যাই হোক আম্মু'র থেকে আইডিয়া নিয়ে আর আমার প্রায় আইনেস্টাইনের মত ব্রেন বাবাজি কে খাটিয়ে মসলার মোটামুটি একটা চলনসই আন্দাজ সম্পর্কিত ফর্মুলা বের করা গেছে। ফর্মুলা মোটামুটি সফল। তবে "ছেলে ৯৯% ভালো শুধু মাঝে মধ্যে নাইট ক্লাবে যায়" এর মত কিছু ব্যাপার স্যাপার রয়েই যায়। ওগুলো নিয়ে আমরা কথা না বলি।

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: ফর্মুলা প্রয়োগ করে ব্যর্থ হলে দায়ভার একান্তই আপনার। আমার প্রায় আইনেস্টাইনের মত ব্রেন এর জন্য দায়ী থাকবে না।

ওয়ার্নিং: পাঁকা রাধুনি এবং বাবুর্চিরা দূরে থাকেন। রোম যেমন একদিনে তৈরী হয়নি তেমনি আমরা ব্যাচেলর বাবুর্চিরাও একদিনে পাঁকা হতে পারব না। আর যেহেতু আমাদের জঘন্য রান্না আমরা নিজেরা গেলার সময় আপনারা আপনাদের সুস্বাদু রান্না কব্জি ডুবিয়ে খাচ্ছিলেন তাই আপনাদের তরফ থেকে কোনো রকম ক্রিটিসাইজ গ্রহণযোগ্য নয়।

পর্যায়ক্রমে আসা যাক। প্রথমেই-

তেল: রান্নার প্রথমেই তেল গরম করতে হবে। তাই তেলের মাপ জানা আবশ্যক। আল্লাহ'র অসীম দয়ায় এর কোনো নির্দিষ্ট মাপ নেই। যত তেল তত মজা এবং স্বাস্থের হানি আর ভুরির বৃদ্ধি। তবে বলি কি একটু বেশি দেয়াই ভালো যদি রুমমেটদের কাছে ইজ্জতের প্রশ্ন থাকে। তেল মজা আনবেই আর কেউ বেশি প্রশ্ন করলে "আমি জমিদার বংশের ছেলে, কোনো কিছু কম দিতে শিখি নাই" বলে মুখ ঝামটা মারার অপশন তো রয়েই যায়। যদি বেশিই বেশি হয়ে যায় তাহলে চিকনে সবার চোখের আড়ালে চামচ দিয়ে অতিরিক্ত তেল ফেলে দিন সিঙ্কে। মামলা খতম। রান্নার স্বাদ ও থাকলো অটুট। সবসময়ই যদি বেশিই বেশি হয় তাহলে ব্যবহার করুন অলিভ অয়েল। "শরীরের নাম মহাশয়, যাহা সহাও তাহাই সয়" হলেও মহাশয় আর কয়দিন সইবে বলুন !!!!!

পেয়াঁজ: খাবারের মূল স্বাদ নির্ভর করে এই চোখ জ্বালানি ডাইনির উপর। প্রিয়তমার চেয়ে কাঁদাতে এ কোনো অংশে কম যায়না। তাই মনের ঝাল মেটাতে দিতে থাকুন যত খুশি। ব্যাপারটা এই রকম যে "তুই আমাকে কাঁদালি, এখন বেশি বেশি করে জ্বল গরম তেলে"। বেশি পেয়াঁজ ব্যবহারে আপনার রান্নার ঝোল হবে ঘন, চেহারায় আসবে জেল্লা আর স্বাদে হবে অতুলনীয়। তবে অত্যাধিক বেশি হলে খাবারের স্বাদে একটু মিষ্টি ভাব চলে আসবে। বেশি পেয়াঁজ ব্যবহারের অন্য কোন অপকারিতা সম্পর্কে আমার কিছু জানা নেই আর তা নিয়ে আমি মোটেও দু:খিত না। সবার সব কিছু জানতে হবে এমন তো কোনো সংবিধানে নেই, তাইনা?

হলুদ: আমার পরীক্ষামতে হলুদ রান্নায় তেমন কোনো স্বাদ আনে না। শুধু রংটা ভালো হয়। তাই বেশি কম হলে সমস্যা নেই। কিন্তু আপনার সাধের রান্না করা মুরগি অথবা গরু ক্যাট-ক্যাটে হলুদ রঙের হয়ে আছে দেখতে নিশ্চয়ই ভালো লাগবে না। বেশি হলে আলু দিয়ে দিন। হলুদের রং টেনে নেবে। কেজিতে দুই চা চামচ হিসাব করে দিতে পারেন।

মরিচ: দুই একবার রান্নার পরে মরিচের মাপ বোঝা কঠিন কিছু না। গুঁড়া মরিচ বেশি হলে তরকারির রং বেশি লাল হয়ে যাবে যা দেখতে ভালো লাগবে না। কাঁচা মরিচ রান্নার শেষের দিকে দিলে বেশ ভালো একটা সুঘ্রান আনে। রঙের ও কোনো হেরফের ঘটায় না। তাই "রঙের জন্য একটু গুড়া মরিচ আর ঝালের জন্য কাঁচা মরিচ" এই নীতিতে চলাই উত্তম। আপনি কেমন ঝাল খান তার উপর নির্ভর করছে মাপ। কেজিতে দুই চা চামচ দিতে পারেন। কোনো এক অদ্ভুত কারণে আমেরিকার গুড়া মরিচ এত লাল যে এক চামচের উপরে দিলে মনে হয় হাড়িতে লোহিত সাগরের বান ডেকেছে। যদি মরিচ বেশি হয়ে যায় দিতে পারেন একটু দুধ, একটু চিনি অথবা মধু অথবা খাবার সময় একটু লেবু নিলেও ঝালের লঙ্কা সদৃশ্য প্রকোপ আর জিভে লাগবে না অতটা।

আদা এবং রসুন: কেজিতে দেড় চামচ করে। গরুর মাংসে আদা একটু বেশি লাগবে। চিংড়ি মাছে দেয়ার প্রয়োজনই নেই। পেস্টের চেয়ে আস্ত আদা-রসুন কষ্ট করে কেটে-ছিলে দিলে স্বাদ এবং গন্ধ দুটোই বেড়ে যাবে বহুগুনে।

ধনিয়া: বেশি হলে কালচে ভাব চলে আসে। খাবারের স্বাদ তিতকুটে হয়ে যায়। কেজিতে এক-দেড় চামচ নিরাপদ।

জিরা: নিশ্চিন্ত মনে দিতে পারেন। এর মাপ বেশি কম হলেও সমস্যা নেই। তবে যদি পরিমান মত দিতে পারেন তাহলে খাবারের টেস্টটা হবে চরম। মুরগির মাংসে একটু বেশি হলে স্বাদটা দারুন হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। আপাতত কেজিতে দুই চা চামচ আর মুরগির মাংসে আড়াই চা চামচ দিয়ে চালাচ্ছি।

গরম মসলা: রান্নায় গরম মসলা না দিলে ঠিক অমৃতসম গন্ধটা আসে না। স্বাদের ব্যাপারে ইনাদের কি ভুমিকা আল্লাহ মালুম। গুড়া গরম মসলা কেজিতে এক-দেড় চামচ শিক্ষানবিশদের জন্য যথেষ্ট। বেশি দিলে ব্ল্যাক এন্ড আগলি ভাব বিদ্যমান হয়। আলাদা ভাবে দিলে কালচে রং আসবে না আর গন্ধটাও হবে জোশ। কেজিতে দুটো তেজপাতা, দেড়টা দারুচিনি, আর চার-পাঁচটা এলাচেই কাজ হয়ে যাবে।

লবন: এই মহাশয় যদি কোনো রকমে খাবারের সুস্বাদু ঝোলে একবার বেশি মিশতে পারেন তাহলে আর দেখতে হবেনা। সেই খাবারের তেরটা বাজা নিশ্চিত তাই কম দেওয়াই ভালো। কম হলে পরে ভাতের সাথে অথবা তরকারিতে আরেকটু দিয়ে দিলেই হলো। সমস্যা হলো একেকজন একেক পরিমান লবন খায়। তাই নির্দিষ্ট কোনো মাপ আছে বলে মনে হয়না। রান্নার শেষের দিকে একটু চেখে দেখা যায় যে লবনের পরিমানের কি অবস্থা। যদি কম হয় তো একটু দিয়ে দিলেন আর বেশি হলে দিতে পারেন ভিনেগার। অতিরিক্ত লবন চুষে নেবে অনেকটাই। এছাড়া আলু, টমেটো সস, টক দই, চিনি ও হতে পারে আপনার ত্রাণকর্তা।

আপাতত রান্নার ক্লাস এখানেই শেষ। ফ্রিতে আর কত বলেন? আপনার ব্যাচেলর রান্নার কিছুটা উন্নতি হলেও বেশ শান্তি লাগবে। রান্না ভালো হলে ফেসবুকে ছবি দিয়ে মানুষকে জ্বালাবেন। আরেকজনের জিভে জল এনে একধরনের পাশবিক আনন্দ পাওয়া যায়। আনন্দ পেতে থাকুন, রান্না করতে থাকুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৬
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটা গাছ কাঠ হলো, কার কী তাতে আসে গেলো!

লিখেছেন নয়ন বড়ুয়া, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:০৬



ছবিঃ একটি ফেসবুক পেইজ থেকে

একটা গাছ আমাকে যতটা আগলে রাখতে চাই, ভালো রাখতে চাই, আমি ততটা সেই গাছের জন্য কিছুই করতে পারিনা...
তাকে কেউ হত্যা করতে চাইলে বাঁধাও দিতে পারিনা...
অথচ... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×