somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমেরিকার পথে পথে ৭

২৫ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মন্টানায় গ্লেসিয়ার ন্যাশনাল পার্ক লিস্টের প্রথমে থাকলেও প্ল্যান চেঞ্জ হয়ে গেল আমার ছোট্ট একটা কথায়| মন্টানা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় আমার সৌভাগ্য হয়েছিল ন্যাটিভ আমেরিকানদের ফেস্টিভাল পাও-আও দেখার| যে এই উৎসব দেখেনি তার পক্ষে আন্দাজও করা সম্ভব না কতটা সুন্দর এই উৎসব| আমার অভিজ্ঞতার কথা গ্রূপের সবাইকে বলতেই সবাই হৈ হৈ করে উঠলো এটা দেখার জন্য| গুগল মামুকে জিজ্ঞেস করতেই বলে দিল একদিন পরেই লেম ডিয়ার সিটিতে এই উৎসব হবে| ব্যাটে-বলে মিলে যাওয়ায় এই সুযোগ আর এড়ানো গেল না| প্ল্যান পাল্টে রুট বদলে রওয়ানা দিলাম লেম ডিয়ারের উদ্দেশ্যে| যাওয়ার পথে পড়ল স্মৃতি বিজড়িত বোজম্যান শহর| প্রথম দিকের সেই দিনগুলির স্ট্রাগল মনটা খারাপ করে দিল| এতো সুন্দর শহরটার কিছুই দেখতে পারিনি শুধু একটা গাড়ির অভাবে আর কিছু মানুষের সহযোগিতার অভাবে| আজ সেই রাস্তা দিয়েই যাচ্ছি গাড়ি ড্রাইভ করে| জীবন কিভাবে বদলে যায়.....মন্টানা স্টেট ইউনিভার্সিটির সাইন রাস্তায় দেখে মনটা হু হু করে উঠলো| প্রায়ই ভাবি আমেরিকায় না আসলে জীবনটা কেমন হতো? সিদ্ধান্তটা কি ঠিক ছিল? জানা হবে না আর কখনোই.....যা যাওয়ার তার সবই চলে গেছে জীবন থেকে গত ৬ বছরে|

বিকাল ৬টায় পৌঁছালাম লেম ডিয়ার শহরে| পৌঁছে একটু বোকা বনে গেলাম| পুরো ফ্যাসিলিটি বন্ধ| নানান জানালা দিয়ে কিউরিয়াস কাঠবিড়ালীর মতো কতক্ষন উঁকিঝুঁকি মারার পর ভিতরে দেখা গেল এক ন্যাটিভ আমেরিকান দাদী আর সাদা এক মেয়ে ক্লিনিং এর কাজ করছে| বন্ধ দরজায় ঠক ঠক করার পর অপ্রস্তুত হয়ে দরজা খুললো| কমবয়েসী মেয়েটা দেখলাম মন্টানা স্টেট ইউনিভার্সিটির টি-শার্ট পরা| আমিও ওখানকার ছাত্র ছিলাম রবং আরও বিস্তারিত পরিচয় দেয়ার পর তারা সহজ হলেন| জানা গেল ওয়েবসাইটে যে ঠিকানা দেয়া সেখান থেকে ৫ মাইল দূরে হচ্ছে আসলে উৎসব। তাদের দেয়া নির্দেশনা অনুসরণ করে সেই জায়গায় পৌঁছাতে খুব একটা ঝক্কি পোহাতে হল না| এর মধ্যে রাস্তায় লক্ষ্য করলাম এখানকার মানুষজন পোষা কুকুরগুলোর একটাও বাঁধা নেই| গলায় বেল্ট ছাড়াই ওরা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে মনিবদের সাথে| জায়গামতো যখন পৌঁছালাম তখন একটু জড়সড় লাগছিল সবারই| আমি আগে এমন একটা অনুষ্ঠানে গেলেও ওটা ছিল নিজের ইউনিভার্সিটিতে| এখানের উৎসবটা অনেকটাই বলতে গেলে ঘড়োয়া মত, যা আমাদের আরও উৎসাহী করে তুলল| ন্যাটিভ আমেরিকানরা ছাড়া আর কেউই নেই| একে তো ন্যাটিভ আমেরিকানদের বন্ধুবৎসল হিসাবে খুব একটা সুনাম নেই তার উপর রোদে ঘুরে ঘুরে আমাদের চারজনের চেহারা হয়েছে দেখার মতো| পোড়া চামড়া, লম্বা উশখু-খুশকো ঝুঁটি বাঁধা চুল, ধুলো মলিন জুতা দেখে কেউ হটাৎ ছন্নছাড়া ভাবলে তাকে দোষ দেয়া যাবে না| পড়বি তো পড় মালীর ঘাড়ের মত প্রথমে উৎসব ভেবে আমরা এক ফ্যামিলি মিটিংয়ে ঢুকে গেলাম| তীক্ষ্ণ সরু দৃষ্টির সম্মুখীন হয়ে মানে মানে কেটে পরলাম ওখান থেকে| একটু হাঁটার পরেই মূল জায়গার হদিস পাওয়া গেল| মাঠের চারপাশে বাঁশ দিয়ে গ্যালারি বানানো| সন্ধ্যার পরের প্যারেড উপভোগ করার জন্য সকাল থেকেই মানুষজন জায়গা দখলের জন্য ভাল জায়গায় চেয়ার, গ্যালারিতে তোয়ালে, কম্বল পেতে রেখে গেছে| অবাক লাগল গ্যালারির চারপাশে চাইনিজ খেলনা, মেক্সিকান খাবারের দোকান দেখে, যার বেশিরভাগই চালাচ্ছে খোদ ন্যাটিভ আমেরিকানরা !!!!! মন্টানা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত উৎসবে আসল আদিবাসি পণ্য ছাড়া কিছুই ছিল না| এসব দেখে মনটা আবার একটু দমে গেল| দুই চক্কর দেয়ার পর একটা যুতসই জায়গা পাওয়া গেল| পাশেই বসা একজন ন্যাটিভ আমেরিকান আমাদের তথ্য দিয়ে প্রচুর সাহায্য করলেন| নিজেদের একজন আমাদের সাথে কথা বলছে দেখে আশেপাশের মানুষজনও সহজ হয়ে গেল আমাদের সাথে| চাইতেই ছবি তুলল| মাত্রই তাদের সুন্দরী প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ায় মেয়েরা বেশ বাহারি ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে ঘুরছিলো| আমি নিজে না তুললেও রেজওয়ান আর অপু ভাই প্রচুর ছবি তুললেন|

সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ, যুদ্ধের দামামার বাদ্যে শুরু হল প্যারেড| তারপর নিজস্ব ভাষায় গান| গানের কিছুই না বুঝলেও রক্তে কেমন জানি নাচন লাগিয়ে দিচ্ছিল সেই সুর| গানের পরে আসল প্যারেড শুরু হল| নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন অনেক বয়স্ক একজন লোক| তার চামড়ার ভাঁজই বুঝিয়ে দিচ্ছিল কত অভিজ্ঞতা, কত ঘটনা, কত গল্প লুকিয়ে আছে তার পরতে পরতে| ন্যাটিভদের যারা ইউ.এস. আর্মিতে আছে তারা ইউনিফর্ম পরে প্যারেডে অংশ নিয়েছিল| তবে আমার সাথের লোকজন যতটা উপভোগ করছিল আমি ততটা করিনি| এর কারণ মনে হল পূর্ববর্তী এম.এস.ইউ এর প্রোগ্রাম| ওই অনুষ্ঠানটা অনেক বড় পরিসরে হয়েছিল আর অনেক বেশি ট্রাইব অংশগ্রহণ করেছিল| এখানের অনুষ্ঠানটা ঘরোয়া হলেও অনেকেই দেখলাম জিন্সের প্যান্ট আর স্নিকার পরে নাচে অংশ নিয়েছে| এই ব্যাপারটা আমার মোটেই পছন্দ হয়নি| আগের অনুষ্ঠানে এমনটা দেখিও নাই| মনে হচ্ছিলো ট্রাইব কালচারের মধ্যে মেইনস্ট্রিম আমেরিকান কালচার মিশে গেছে| ওদের কুটির শিল্পের কোন দোকান না থাকার ব্যাপারটাও আমাকে বেশ হতাশ করেছে| এছাড়া ট্রাইবাল প্যারেডের মধ্যে ইউ.এস. আর্মির ইউনিফর্ম পরে হাঁটাটা বেশ দৃষ্টিকটু লাগছিল| তবে এগুলো আমার নিজস্ব মতামত| এরপরেও পড়ন্ত সূর্যের আলোয় সেই প্রাচীন নাচ, যুদ্ধের বেশভূষা, মেয়েদের ঝলমলে পোশাক, সবার পোশাকেই ঈগলের পালকের কাজ রক্ত গরম করে দেয়| মনে হয় আমিও তাদেরই একজন| মাটির দখলদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামতে হবে আমারও এই বুনো পশ্চিমকে তার দূর্বার সৌন্দর্য নিয়ে স্বাধীন রাখতে| রাত অবধি এই উৎসব উপভোগ করে তারপর আবার পথে নামলাম|
























































সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১১:২৩
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×