আমার বাপ মনে করে আমি হলাম গাধা আর আমাকে যে বিয়ে করবে সে হবে আমার থেকেও বড় গাধা । আর তার মতে গাধাদের বেশি দিন বেঁচে থাকার অধিকার নাই ।
....এই নিমিত্তে কখনোও কারোও সাথে প্রেম করারও সাহস করে উঠতি পারিনি ।
তবে ইদানিং একটা অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করছি ।
ব্যাপারটা অনেক স্বাভাবিক হলেও আমার কাছে অস্বাভাবিক । একটা মেয়ে অনেকটা গা ঘেষেই আমার সাথে ভাব করার চেষ্টায় নিজেকে ব্যস্ত রেখেছে । যদিও আমি মেয়েদের সাথে তেমন একটা মিশিনা তবে এই মেয়েটার ব্যাপারটা আলাদা । আলাদা কারণ মেয়েটা আমাদের বাড়িওয়ালার একমাত্র মেয়ে যে কিনা সদ্য এইচএসসি দিয়েছে । বাড়িওয়ালার মেয়ে তাই কিছু বলতেই পারিনা । কিছু বললে পাছে আবার তার বাড়িওয়ালা বাবাকে বলে আমাদের বাড়ি ছাড়া করে । আর অর্ধেক মাসে নতুন বাসা কেন একটা চিলেকোঠায় জুটবে না আমাদের কপালে । তাই চুপচাপ থাকতে হয় ।
এর মাঝেই একদিন বিকেলে ছাদের রেলিংয়ে গা এলিয়ে গিটার হাতে গুণ গুণ করছি । কি জানি ভেবে হঠাত্ ছাদের মাঝে তাকাতেই যে ভূত দেখি । আসলে ভূত বললে একটু অবিচার করা হবে ,যেন একটা পরী ছাদে দাঁড়িয়ে আমাকে দেখছে । পরীটা আর কেউনা আমাদের বাড়িওয়ালার মেয়ে লাবণ্য । আসলে মেয়েটা দেখতে বর্ণনাহীন সুন্দর । যে কেউ দেখলে তব্দা লেগে যাবে । তবে আমার মাঝে এই জাতীয় কিছু হচ্ছেনা কারণ আমার কাছে মেয়ে মানেই ছলনাময়ী । তারা মিষ্টি হাসি দিয়েই যে কাউকে মেরে ফেলতে পারে । আর আমি এতো সহজে মরতেই চাইনা ।
এইসব হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে খেয়াল করলাম কেউ আমাকে ভাইয়া ডাকছে..ঘুরে তাকাতেই দেখি লাবণ্য মেয়েটা ভয়াবহ দূরত্বে এসে আমাকে ভাইয়া ভাইয়া বলে ডাকছে...
----ভাইয়াআআআআআ !
এই বয়সের মেয়েগুলোর চেহারায় একটা আদুরে ভাব চলে আসে আর এর প্রতিফলিত রূপ তাদের টানা টানা কথায় পাওয়া যায় ।আবার আদুরে গলার ডাকটা শুনতে পেলাম
----ভাইয়াআআআ !!
: হুম!
----কি করছেন এখানে বসে বসেএএএ?
:এইতো বিকলে কয়টা তারা আকাশে আছে সেটা গুণে দেখছি।তুমি এই সময়ে ছাদে যে?
একটু মুচকি হেসে ওর দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলাম ।
----আসলে ভাইয়া পরীক্ষা তো শেষ তাই আপনার মত দিনে তারা গোনা ছাড়া তেমন কাজ নেই । তাই চলে এলাম আপনার সাথে তারা গুণতে ।হিহিহিহিহি।
: ও আচ্ছা ।
----হুম । একটা কথা বলি ?
: হুম । বলো !
---- আপনি কিন্তু খুব ভালো গান করেন । গান শুনেই মুগ্ধ হয়ে যাই । আর এতো ভালো গিটার বাজান কি করে?
: হাহাহা । আমিতো টুকটাক গুণগুণ গান করি আর গিটার বাজানো টা আমার শখ অথবা শৌখিনতা । কিন্তু তুমি এতো কিছু জানো কি করে শুনি ?
---- আসলে আপনি যখন ছাদে একা একা গান করেন তখন আমি চুপটি করে আপনার গান শুনি । কারণ আমি ছাদে আসলেই আপনি গান গাওয়া বন্ধ করে বসে থাকেন আর আকাশ দেখেন তাই ছাদে আসিনা । বুঝলেন?
: হুম । বুঝতে পেরেছি ।
----কি বুঝলেন শুনি??
: এই যে তুমি চুপ চুপ করে আমার গান শোনো এটা । মুচকি হেসে বললাম ।
----কেন শুনি বলেন দেখি?
: সেটাতো জানিনা । একটু চিন্তিত ভাব নিয়ে উত্তর দিলাম ।
----সব কিছু বোঝেন আর এই সিম্পল জিনিসটা বুঝেন না !!
: স্যরি! তোমার কথার কিছুই আমার মাথায় সেটাপ নিচ্ছে না । প্রোগ্রামে সমস্যা আছে হয়তো ।
---- এহহহ তা বুঝবেন কেন? সারাদিন পিসির সামনে বসে থাকেন বেশি করে আর কোড নিয়ে ভাবতে থাকেন ।
কথাটা একটু অভিমানী সুরেই বলল ।
: হুম । সেটাতো না হয় থাকলাম ।
----সেটাতো থাকবেনই । সারাদিন তো এই একটা কাজেই করেন । আর এতো রাত পর্যন্ত ফেসবুকে কি করেন শুনি?
: কই ফেসবুকে কিছু করিনা তো । কিছু করেছি কি!
---- হুম রাতজেগে ফেসবুকে থাকবেন না । আর এতো বেলা করে উঠেন কেন? একটু শাসনের সুরেই বলল কথাটা ।
: আচ্ছা ঠিকাছে রাত জাগব না ।
---- আর শুনেন,,সামনের বিল্ডিংয়ের বদ মেয়েটার দিকে আরেক বার তাকালে চোখ উপড়ে ফেলব বলে দিলাম ।
আমি কিছুই আচ করতে পারছি না যে ব্যাপারটা কি হতে যাচ্ছে বা কি হচ্ছে । আমি সম্মোহিতের মত "আচ্ছা ঠিকাছে" বলছি কেন? যে আমি মেয়েদের কখনো পাত্তা দেইনি । আমি কি তার প্রেমে পড়ে যাচ্ছি!! মেয়েটা কে আমাকে আমার সত্ত্বার ভিতরে থেকে বের করে আনছে! বুকের ভিতর তার কথা গুলো কোথায় যেন শেলের মত বিঁধছে । আমার আমিতে যেন আরোও একজনের আগমন হচ্ছে যেন দেবী দূর্গা ধরাধামে আগমন করছে! কিন্তু কেন আমার এমনটা হচ্ছে! আমিতো এমন ছিলাম না ।
এইসব ভাবতে ভাবতে আবার তার আদুরে গলার ডাক শুনে চিন্তায় দাগ কাটলো ।
----কি ভাবছেন?
: কিছুনা ।
---- একটা কথা বলি । আমার কেন জানি মনে হয়ে আপনি আমাকে পছন্দ করেন না ! আমি কি খুব পঁচা মেয়ে! আমি কি দেখেতে খুব খারাপ !
কথাগুলো বলতেই লাবণ্যর গলাটা একটু ভারী হয়ে আসলো । আরেকটু হলেই হয়তো কেঁদে ফেলবে ! আর ওর গলায় এমন একটা ভাব ছিল যেটা শুনেই ওর প্রেমে পড়ে গেলাম ।
---- কি হলো বলেন?
: না সেটা হবে কেন! তুমিতো অনেক ভালো মেয়ে ।
--তাহলে আমাকে এড়িয়ে চলেন কেন ??
এবার মনে হয়ে মেয়েটা কেঁদেই ফেলবে । তাই কি করা উচিত এই মুহূর্তে এটা নিয়ে দ্বিধাদন্দে পড়ে গেলাম ।
--আচ্ছা আপনাকে বলতে হবেনা । সন্ধ্যা হয়ে গেছে । আমি আসি ।
বলেই উঠেই আমার দিকে এক পলক চেয়ে থেকেই নেমে যেতে উদ্যত হলো ।
মেয়েটা অভিমান করে চলে যাচ্ছে । ভালোভাবে তাকালে হয়তো দেখা যাবে অশ্রুবষর্ণও হচ্ছে । ভাবতে পারছি না আমি কি করতে চলেছি । নিজের ভিতরে পুষে রাখা মহাপুরুষ ভাবটাকে গুম করে দিয়ে উঠেই এক দৌঁড়ে লাবণ্যর কাছে পৌঁছে গেলাম । আমার এই দৌঁড়ে আসা দেখে লাবণ্য কি ভাবলো জানিনা তবে বোঝা যাচ্ছে কিছুক্ষণ পরেই আমার গালে দু একটা চড় অথবা বুকে দু একটা কিল পড়তে পারে । তবে আমাকে অবাক করে দিয়ে লাবণ্য কাঁদতে শুরু করল । আমি আবারোও অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম । এরপর যেটা হলো সেটা আমি স্বপ্ন কেন কখনোই ভাবতে পারিনি ।
আমার বুকে মাঝে দ্বিতীয় কারোও অস্তিত্ব অনুভব করলাম । লাবণ্য আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে ।
আমি বললাম..
: এই মেয়ে কাঁদো কেন?তুমি জানো না কাঁদলে তোমার নাক লাল হয়ে যায় ।
চোখ মুছতে মুছতে পাগলিটা বলল..
--জানোই যখন তাহলে আমাকে কাঁদাও কেন?
: আচ্ছা আর কাঁদাবো না । ঠিকাছে?
--না ঠিক নাই । তোমার সাথে আড়ি ।
: তাহলে তো দেখি সামনের বাসার মেয়েটার সাথে ভাব করতে হবে
--কি? কি বললা তুমি? খুন করে ফেলব
অমনি ধেয়ে আসলো মেয়েটা আর দুমদাম কয়েকটা কিল অনুভব করলাম । আর মেয়েটা কখনও আপনি থেকে তুমিতে চলে এসেছে সেটা হয়তো খেয়াল করিনি । তবে তুমি শুনতে মোটেও খারাপ লাগছে না । এমন আদুরে গলায় কেউ যদি এতো ভালোবাসা নিয়ে ডাকে তাহলে কোন অধম সাড়া না দিয়ে থাকতে পারে ?? ভালোবাসা কখনোও আগে থেকে জানান দিয়ে আসেনা ।। প্রিয় মানুষের একটা ভালোবাসা ভরা মিষ্টি হাসি অথবা তার মায়াভরা মুখ খানাই বুকের ভালো তোলপাড় তুলে দেয়ার জন্য যথেষ্ট । হতে পারে অনেক দিনের জমিয়ে রাখা ভালোবাসা নতুবা হঠাত্ পাওয়া ভালোবাসা ।
জীবনটা খারাপ না..চলছে চলুক এভাবেই অনন্তকাল ।