somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হঠাত্ পাওয়া ভালোবাসা

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার বাপ মনে করে আমি হলাম গাধা আর আমাকে যে বিয়ে করবে সে হবে আমার থেকেও বড় গাধা । আর তার মতে গাধাদের বেশি দিন বেঁচে থাকার অধিকার নাই ।

....এই নিমিত্তে কখনোও কারোও সাথে প্রেম করারও সাহস করে উঠতি পারিনি ।
তবে ইদানিং একটা অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করছি ।
ব্যাপারটা অনেক স্বাভাবিক হলেও আমার কাছে অস্বাভাবিক । একটা মেয়ে অনেকটা গা ঘেষেই আমার সাথে ভাব করার চেষ্টায় নিজেকে ব্যস্ত রেখেছে । যদিও আমি মেয়েদের সাথে তেমন একটা মিশিনা তবে এই মেয়েটার ব্যাপারটা আলাদা । আলাদা কারণ মেয়েটা আমাদের বাড়িওয়ালার একমাত্র মেয়ে যে কিনা সদ্য এইচএসসি দিয়েছে । বাড়িওয়ালার মেয়ে তাই কিছু বলতেই পারিনা । কিছু বললে পাছে আবার তার বাড়িওয়ালা বাবাকে বলে আমাদের বাড়ি ছাড়া করে । আর অর্ধেক মাসে নতুন বাসা কেন একটা চিলেকোঠায় জুটবে না আমাদের কপালে । তাই চুপচাপ থাকতে হয় ।

এর মাঝেই একদিন বিকেলে ছাদের রেলিংয়ে গা এলিয়ে গিটার হাতে গুণ গুণ করছি । কি জানি ভেবে হঠাত্ ছাদের মাঝে তাকাতেই যে ভূত দেখি । আসলে ভূত বললে একটু অবিচার করা হবে ,যেন একটা পরী ছাদে দাঁড়িয়ে আমাকে দেখছে । পরীটা আর কেউনা আমাদের বাড়িওয়ালার মেয়ে লাবণ্য । আসলে মেয়েটা দেখতে বর্ণনাহীন সুন্দর । যে কেউ দেখলে তব্দা লেগে যাবে । তবে আমার মাঝে এই জাতীয় কিছু হচ্ছেনা কারণ আমার কাছে মেয়ে মানেই ছলনাময়ী । তারা মিষ্টি হাসি দিয়েই যে কাউকে মেরে ফেলতে পারে । আর আমি এতো সহজে মরতেই চাইনা ।
এইসব হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে খেয়াল করলাম কেউ আমাকে ভাইয়া ডাকছে..ঘুরে তাকাতেই দেখি লাবণ্য মেয়েটা ভয়াবহ দূরত্বে এসে আমাকে ভাইয়া ভাইয়া বলে ডাকছে...

----ভাইয়াআআআআআ !

এই বয়সের মেয়েগুলোর চেহারায় একটা আদুরে ভাব চলে আসে আর এর প্রতিফলিত রূপ তাদের টানা টানা কথায় পাওয়া যায় ।আবার আদুরে গলার ডাকটা শুনতে পেলাম

----ভাইয়াআআআ !!

: হুম!

----কি করছেন এখানে বসে বসেএএএ?

:এইতো বিকলে কয়টা তারা আকাশে আছে সেটা গুণে দেখছি।তুমি এই সময়ে ছাদে যে?

একটু মুচকি হেসে ওর দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলাম ।

----আসলে ভাইয়া পরীক্ষা তো শেষ তাই আপনার মত দিনে তারা গোনা ছাড়া তেমন কাজ নেই । তাই চলে এলাম আপনার সাথে তারা গুণতে ।হিহিহিহিহি।

: ও আচ্ছা ।

----হুম । একটা কথা বলি ?

: হুম । বলো !

---- আপনি কিন্তু খুব ভালো গান করেন । গান শুনেই মুগ্ধ হয়ে যাই । আর এতো ভালো গিটার বাজান কি করে?

: হাহাহা । আমিতো টুকটাক গুণগুণ গান করি আর গিটার বাজানো টা আমার শখ অথবা শৌখিনতা । কিন্তু তুমি এতো কিছু জানো কি করে শুনি ?

---- আসলে আপনি যখন ছাদে একা একা গান করেন তখন আমি চুপটি করে আপনার গান শুনি । কারণ আমি ছাদে আসলেই আপনি গান গাওয়া বন্ধ করে বসে থাকেন আর আকাশ দেখেন তাই ছাদে আসিনা । বুঝলেন?

: হুম । বুঝতে পেরেছি ।

----কি বুঝলেন শুনি??

: এই যে তুমি চুপ চুপ করে আমার গান শোনো এটা । মুচকি হেসে বললাম ।

----কেন শুনি বলেন দেখি?

: সেটাতো জানিনা । একটু চিন্তিত ভাব নিয়ে উত্তর দিলাম ।

----সব কিছু বোঝেন আর এই সিম্পল জিনিসটা বুঝেন না !!

: স্যরি! তোমার কথার কিছুই আমার মাথায় সেটাপ নিচ্ছে না । প্রোগ্রামে সমস্যা আছে হয়তো ।

---- এহহহ তা বুঝবেন কেন? সারাদিন পিসির সামনে বসে থাকেন বেশি করে আর কোড নিয়ে ভাবতে থাকেন ।

কথাটা একটু অভিমানী সুরেই বলল ।

: হুম । সেটাতো না হয় থাকলাম ।

----সেটাতো থাকবেনই । সারাদিন তো এই একটা কাজেই করেন । আর এতো রাত পর্যন্ত ফেসবুকে কি করেন শুনি?

: কই ফেসবুকে কিছু করিনা তো । কিছু করেছি কি!

---- হুম রাতজেগে ফেসবুকে থাকবেন না । আর এতো বেলা করে উঠেন কেন? একটু শাসনের সুরেই বলল কথাটা ।

: আচ্ছা ঠিকাছে রাত জাগব না ।

---- আর শুনেন,,সামনের বিল্ডিংয়ের বদ মেয়েটার দিকে আরেক বার তাকালে চোখ উপড়ে ফেলব বলে দিলাম ।

আমি কিছুই আচ করতে পারছি না যে ব্যাপারটা কি হতে যাচ্ছে বা কি হচ্ছে । আমি সম্মোহিতের মত "আচ্ছা ঠিকাছে" বলছি কেন? যে আমি মেয়েদের কখনো পাত্তা দেইনি । আমি কি তার প্রেমে পড়ে যাচ্ছি!! মেয়েটা কে আমাকে আমার সত্ত্বার ভিতরে থেকে বের করে আনছে! বুকের ভিতর তার কথা গুলো কোথায় যেন শেলের মত বিঁধছে । আমার আমিতে যেন আরোও একজনের আগমন হচ্ছে যেন দেবী দূর্গা ধরাধামে আগমন করছে! কিন্তু কেন আমার এমনটা হচ্ছে! আমিতো এমন ছিলাম না ।

এইসব ভাবতে ভাবতে আবার তার আদুরে গলার ডাক শুনে চিন্তায় দাগ কাটলো ।

----কি ভাবছেন?

: কিছুনা ।

---- একটা কথা বলি । আমার কেন জানি মনে হয়ে আপনি আমাকে পছন্দ করেন না ! আমি কি খুব পঁচা মেয়ে! আমি কি দেখেতে খুব খারাপ !

কথাগুলো বলতেই লাবণ্যর গলাটা একটু ভারী হয়ে আসলো । আরেকটু হলেই হয়তো কেঁদে ফেলবে ! আর ওর গলায় এমন একটা ভাব ছিল যেটা শুনেই ওর প্রেমে পড়ে গেলাম ।

---- কি হলো বলেন?

: না সেটা হবে কেন! তুমিতো অনেক ভালো মেয়ে ।

--তাহলে আমাকে এড়িয়ে চলেন কেন ??

এবার মনে হয়ে মেয়েটা কেঁদেই ফেলবে । তাই কি করা উচিত এই মুহূর্তে এটা নিয়ে দ্বিধাদন্দে পড়ে গেলাম ।

--আচ্ছা আপনাকে বলতে হবেনা । সন্ধ্যা হয়ে গেছে । আমি আসি ।

বলেই উঠেই আমার দিকে এক পলক চেয়ে থেকেই নেমে যেতে উদ্যত হলো ।
মেয়েটা অভিমান করে চলে যাচ্ছে । ভালোভাবে তাকালে হয়তো দেখা যাবে অশ্রুবষর্ণও হচ্ছে । ভাবতে পারছি না আমি কি করতে চলেছি । নিজের ভিতরে পুষে রাখা মহাপুরুষ ভাবটাকে গুম করে দিয়ে উঠেই এক দৌঁড়ে লাবণ্যর কাছে পৌঁছে গেলাম । আমার এই দৌঁড়ে আসা দেখে লাবণ্য কি ভাবলো জানিনা তবে বোঝা যাচ্ছে কিছুক্ষণ পরেই আমার গালে দু একটা চড় অথবা বুকে দু একটা কিল পড়তে পারে । তবে আমাকে অবাক করে দিয়ে লাবণ্য কাঁদতে শুরু করল । আমি আবারোও অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম । এরপর যেটা হলো সেটা আমি স্বপ্ন কেন কখনোই ভাবতে পারিনি ।
আমার বুকে মাঝে দ্বিতীয় কারোও অস্তিত্ব অনুভব করলাম । লাবণ্য আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে ।

আমি বললাম..

: এই মেয়ে কাঁদো কেন?তুমি জানো না কাঁদলে তোমার নাক লাল হয়ে যায় ।

চোখ মুছতে মুছতে পাগলিটা বলল..

--জানোই যখন তাহলে আমাকে কাঁদাও কেন?

: আচ্ছা আর কাঁদাবো না । ঠিকাছে?

--না ঠিক নাই । তোমার সাথে আড়ি ।

: তাহলে তো দেখি সামনের বাসার মেয়েটার সাথে ভাব করতে হবে

--কি? কি বললা তুমি? খুন করে ফেলব

অমনি ধেয়ে আসলো মেয়েটা আর দুমদাম কয়েকটা কিল অনুভব করলাম । আর মেয়েটা কখনও আপনি থেকে তুমিতে চলে এসেছে সেটা হয়তো খেয়াল করিনি । তবে তুমি শুনতে মোটেও খারাপ লাগছে না । এমন আদুরে গলায় কেউ যদি এতো ভালোবাসা নিয়ে ডাকে তাহলে কোন অধম সাড়া না দিয়ে থাকতে পারে ?? ভালোবাসা কখনোও আগে থেকে জানান দিয়ে আসেনা ।। প্রিয় মানুষের একটা ভালোবাসা ভরা মিষ্টি হাসি অথবা তার মায়াভরা মুখ খানাই বুকের ভালো তোলপাড় তুলে দেয়ার জন্য যথেষ্ট । হতে পারে অনেক দিনের জমিয়ে রাখা ভালোবাসা নতুবা হঠাত্ পাওয়া ভালোবাসা ।

জীবনটা খারাপ না..চলছে চলুক এভাবেই অনন্তকাল ।

৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×