somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সত্যকা
রাজু আহমেদ । এক গ্রাম্য বালক । অনেকটা বোকা প্রকৃতির । দুঃখ ছুঁয়ে দেখতে পারি নি ,তবে জীবনের সকল ক্ষেত্রে অনুভব করেছি । সবাইকে প্রচন্ড ভালবাসি কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে প্রকাশ করতে পারি না । বাবা এবং মাকে নিয়েই আমার ছোট্ট একটা পৃথিবী ।

সাবাস বিসিবি ! সাবাস !

১৫ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ৯:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সর্বোচ্চ ৭৫,০০০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ২,০০০ টাকা টিকেটের শুভেচ্ছা মূল্য !! আসন্ন টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উদ্ভোধনী অনুষ্ঠান দেখতে হলে, এই পরিমান টাকায় টিকিট কেটে দর্শকদের স্টেডিয়ামে ঢুকতে হবে । বাংলাদেশ এখন আর গরীব দেশ নেই ! এদেশের মানুষ হাজার হাজার টাকা ব্যয়ে মানুষ শত মিনিটের নাচ-গান দেখতে পারে । অথচ মাত্র ৭৫ টাকার অভাবে একটি ছেলে একটি নতুন শার্ট গাঁয়ে জড়াতে না, ৭৫০ টাকার অভাবে একজন শিক্ষার্থীর লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়, ৭৫০০ টাকার অভাবে একজন অসহায় পিতা তার সন্তানের বাল্য বিবাহ রোধ করতে পারে না । সেই দেশে একজন সুপথে-বিপথের ধনাঢ্য ৭৫,০০০ টাকা ব্যয়ে ভারতের এ আর রহমান, উদিত নারায়ণ, জাভেদ আলী, নীতি মোহন, শ্বেতা পন্ডিত, অহড় দ্বীপ কৌড়া কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের পপতারকা অ্যাকননও এর গান শুনতে কিংবা নাচ দেখতে পারে। এ শ্রেণীর ধনবাদের জন্য কামনা তারা আরও সম্পদশালী হোক এবং সোফায় জায়গা না পেলেও ফ্লোরে গিয়ে কোন এক বিদেশী অভিনেতা বা অভিনেত্রীকে একটু দর্শন করুক । বিবিসিকে সাধুবাদ, তারা বিদেশ থেকে অতি উচ্চমানের শ্বিল্পী এনে আমাদের দেশের সম্মান রক্ষা করেছে !

টি-টুয়েন্টে বিশ্বকাপের ৬ষ্ঠ আসরের আয়োজক বাংলাদেশ । বিশ্বকাপের বর্ণাঢ্য উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানও বিশ্বকাপের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয় । বিশ্বের যে দেশ যখনই বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ পেয়েছে সে দেশই তাৎক্ষনাৎ তাদের সে সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে । তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি, ঐতিহ্য বিশ্ববাসীর কাছে নিখুঁতভাবে উপস্থাপন করেছে। আসন্ন বিশ্বকাপের আয়োজক বাংলাদেশ সুতরাং এ বিশ্বকাপের উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে বিশ্বের দরবারে উপস্থান করা উচিত ছিল । কিন্তু বিসিবির অনুষ্ঠান আয়োকজ কমিটি বাংলাদেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে উপস্থিত না করে ভারতের সংস্কৃতিকে রং-চং মেখে উপস্থাপন করেছে । আয়োজকদের কাছে বড়ই জানতে ইচ্ছে করে, যদি বিশ্বকাপে অংশগ্রনকারী দল হিসেবে ভারতের সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হয়ে থাকে তবে কেন বর্তমান চ্যাম্পিয়ণ ওয়েষ্ট ইন্ডিজ, আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলো, অষ্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ডের সংস্কৃতিও উপস্থাপন করা হল না ? অস্কার জয়ী শিল্পী হিসেবে এ আর রহমানকে আমন্ত্রন জানানো যুক্তিসঙ্গত হলেও কেন ভারতের হালি দেড়েক শিল্পীকে দিয়ে হিন্দীর এমন নগ্ন চর্চা হল । দেশের অর্ণব, জনপ্রিয় ব্যান্ড দল সোলস, এলআরবি, মাইলস, রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমীনদের দিয়ে সঙ্গীত পরিবেশন করানোর জন্য আয়োজক কমিটিকে আন্তরিক মোবারকবাদ । বিদেশী শিল্পীদের স্থানে অন্যান্য বাংলাদেশী শিল্পীদের সুযোগ দিলে অনুষ্ঠানের মান কি একেবারেই কমে যেত ? সে অনুষ্ঠান কি বিশ্ববাসী দেখত না ? নাকি টিকেটের মূল্য ৭৫০০০ টাকা করা যেত না ?

কিছুদিন আগে উদযাপিত হল ২১শে ফ্রেবুরারী আমাদের শহীদ ভাইদের স্মৃতি বিজরিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস । এ দিবস উদযাপনের সময় যারা কন্ঠ উচ্চ করে বাংলা ভাষার প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা জানিয়ে লম্বা লম্বা ভাষণ দিয়েছিল, দেশের সে সোনার সন্তানেরা আজ কোথায় ? কেন বাঙালী তরুন শিল্পীদের মূখে উচ্চারণ করতে হবে, আপনারা যারা বাংলা গান শুনছেন তাদেরকে ধন্যবাদ । আমাদের মায়ের ভাষা বাংলা কি এতই হেলাফেলার হয়ে গেল ? সেজন্য বাংলাদেশে বসে বাঙালীর কাছে বাংলা শোনার আহ্বান জানাতে হবে ? চলছে উত্তাল মার্চ । ১৯৭১ সালের এ মার্চ মাসেই আমরা আমাদের স্বপ্নের স¦াধীনাতা পেয়েছিলাম । সে স্বাধীন দেশে আজ এত হাহাকার কেন ? হিন্দির জোয়ারে প্রাণের ভাষা নিভূ-নিভূ করানো পেছনে হোতা কারা ? হিন্দি এবং ভারতের প্রতি যদি এতই টান থাকে তাহলে অপ টপিকে গিয়ে বলতে হবে, কেন যে ধারাপাত থেকে ’৪৭,’৫২ এবং ’৭১ মুছে গেল না !!

অনুষ্ঠানের প্রায় পুরো অংশ জুড়েই দর্শক সারির বড় অংশ ফাঁকা ছিল । ১৩ই মার্চের অনুষ্ঠানে আবারও প্রমান হল বিশ্বের ধনী রাষ্ট্র গুলো যে আঙুল উচিঁয়ে অবাক হয়ে বলে, ‘কেমন করে দক্ষিন এশিয়ার বাংলাদেশের মানুষ মাত্র এক ডলার খরচ করে একটি দিনের ভরণপোষণ করে’ ? তাদের এ ধারণা যে মিথ্যা নয় তা আবারও প্রমানিত হল, আমরা প্রমান করলাম । গ্যালীর ফাঁকা অংশ আবারও প্রমান করল আমরা আসলে গরীব । বাহিরে যত ঢাক-ঢোল বাজাই ভিতরটা খালি। আমাদের স্বাদ আছে অনেক কিছুর কিন্তু সাধ্য নাই । বুদ্ধিমানেরা সাধ্যের মধ্যেই তাদের সাধকে পূর্ণ করে । উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজক কমিটি সে অর্থে বুদ্ধিমানের পরিচয় দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে । বিদেশী শিল্পীদেরকে যদি কোটি কোটি টাকা দিতে ভাড়া না করে দেশী শিল্পীদের সুযোগ দিয়ে অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করা হত তাহলে যেমনি টিকেট সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকত তেমনি দেশীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পূর্ণ চর্চা হত । অনুষ্ঠানের আয়োজক কমিটি সে পথ মাড়ায় নি । তারা খুব বেশি মানসম্মত করতে গিয়ে অনুষ্ঠানের যে কী হাল করে ছেড়েছে তা সোস্যাল মিডিয়া এবং ব্লগের লেখাগুলো পড়লেই বুঝা যায় । আশা করি আয়োজকদের মহামূল্যবান সময় থেকে ক্ষানিক সময় অপচয় করে একটু চোখ বুলাবেন ।

বিশ্বকাপের উদ্ভোধনী অনুষ্ঠান আয়োজনের সর্বত্র ত্রুটি থাকলেও সব ত্রুটিকে ছাপিয়ে গেছে আয়োজক কমিটি সাথে সাংবাদিকদের বাক-যুদ্ধ। অনুষ্ঠান কভার করতে আশা মিডিয়া কর্মীদের নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছে । প্রথমদিকে ফটো সাংবাদিকদের ছবি তোলার জন্য মাঠে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি । তুমুল বাক-বিতান্ডার পরে গ্যালারি থেকে ছবি তোলার ব্যবস্থা করে দেয়া হয় । সাংবাদিকদের জন্য রিপোর্ট লেখার মত কোন ব্যবস্থা করে নি সাংবাদিক কমিটি এমনকি প্রেসবক্সে সাংবাদিকদের জন্য বসার ব্যবস্থাও করা হয় নি । শত-সহ¯্র বিতর্কের পরেও আমাদের সম্মান আমাদেরকেই রক্ষা করতে হবে । অনুষ্ঠান আয়োজক কমিটি একটি উপভোগ্য অনুষ্ঠান উপহার দিতে পেরেছে সেজন্য তাদেরকে মোবারকবাদ । টিকেটের উচ্চ মূল্যের কারনে অনেকেই ‘দুধের স্বাদ ঘোলে মিটিয়েছে’ । আমার মত অনেকেরই টেলিভিশন ছিল র্ভসা । আবারও বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনসহ সকল কর্মকর্তাদের আন্তরিক মোবারকবাদ এ কারনে যে, ‘বন্দে মাতারাম’ এর পরিবর্তে একবার হলেও তারা আমাদেরকে জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’ শুনতে পেরেছি । ‘বন্দে মাতারম’ হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকত না ! দু’টো তো একই কবির লেখা । সাবাস বিসিবি ! সাবাস ।

রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।
[email protected]
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×