somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"ক্যান্টিনবয় রিমন "

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



হলের ক্যান্টিনে বসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ - আলোচনায় মগ্ন। সময়টা 25 শে মার্চ সন্ধাবেলা। দেশের অবস্থা খুব সুবিধার নয় বলে কেউ কেউ মন্তব্য করছে। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কিছুতেই বাঙালিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চাইছে না। তারা মোটেও বাঙালি নেতৃত্ব মেনে নিতে চাচ্ছে না। নানান টালবাহানা শুরু করে দিয়েছে। বুদ্ধিজীবীরা অনেকেই নাকি বলছেন শীঘ্রই খারাপ কিছু ঘটতে যাচ্ছে।

ক্যান্টিনে বসে শিক্ষার্থী এসব নিয়েই আলোচনা করছিলেন।

ক্যান্টিন ম্যানেজার কিশোর ব়য়সী রিমনকে তাড়া দিয়ে বলল, 'গরম গরম সমুচাগুলো তারাতাড়ি টেবিলে দিয়ে আয়! '

ম্যানেজারের কথামতো সে সমুচাগুলি টেবিলে দিয়ে আসলো। ছাত্ররাও তাকে বেশ স্নেহ করে। একজন বলল, 'রিমন দুটো সিঙ্গারা আর প্রত্যেকের জন্য চাও দিস। ''
'ঠিক আছে আলিফ ভাই। এক্ষুনি নিয়ে আসছি। '

আলিফ অপর একজন বন্ধুকে বলল, 'দেখেছিস মাসুদ, এই ছোট্ট ছেলেটাও টাকার অভাবে পড়াশোনা করতে পারছে না। '
'হুম, পেটের দায়ে কাজ করতে এসেছে। '
'এখনও ওকে স্কুলে ভর্তি করে দিলে ও স্কুলে যেতে চাইবে।আমি একশো ভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারি। '
মাসুদ জিজ্ঞেস করল, 'এই রিমন তোর পরিবারে কে কে আছে?'
কাজ করার ফাঁকে উত্তর দিল, ' মা আর ছোট বোন। '
'বাবা নেই? '
'না, গত বছর ক্যান্সারে মারা গেছে। '
আলিফ বলল, 'দেখেছিস এত অল্প বয়সেই সংসারের গুরুদায়িত্ব এসে চেপেছে ওর কাঁধে!'

গভীর রাত। আলিফ হলে তার কক্ষে বিছানায় শুয়ে আছে। টেবিল ল্যাম্পটা এখনও জ্বলছে। একটা বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গেছে নিজের অজান্তেই। হঠাৎ প্রচন্ড এক শব্দে তার ঘুম ভাঙলো। কিছু বুঝে উঠতে পারলো না সে। আবার শব্দ। এবার আর বুঝতে বাকি রইল না। সশস্ত্র আক্রমণ শুরু হয়েছে। কিন্তু কারা কাকে আক্রমণ করছে? ইতিমধ্যে অনেকের ঘুম ভেঙে গেছে। উদ্বিগ্ন ছাত্ররা উঁকিঝুঁকি মারছে ঘটনা উপলব্ধি করার জন্য। গুলির শব্দ হচ্ছে ঠাঠাঠা....। সেই সাথে বোমা বিস্ফোরণের ভয়ংকর শব্দ। নিজের চোখকেও যেন বিশ্বাস করতে পারছে না কেউ কেউ!ভয়ার্ত মানুষের চিৎকার, চেচামেচি আর ছুটোছুটি দেখে আলিফ ঘাবড়ে গেল। এমন সময় রিমন এসে সবাইকে চিৎকার করে বলছে, 'আপনারা সবাই রুমে যান, মিলিটারীরা হামলা চালাচ্ছে। '

কিছুদিন পার হয়ে গেছে। হলের ছাত্রদের অনেকেই যুদ্ধে গেছে। তাদের মধ্যে আলিফও আছে। কেউ কেউ সরাসরি যুদ্ধে না গিয়ে পরোক্ষভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সহায়তা প্রদান করছে।মাসুদ তাদের একজন। কেউ বা প্রাণের ভয়ে ঝামেলা থেকে দূরে থাকার চেষ্টাও করছে। রিমন হল ক্যান্টিনে কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে সকালে খবরের কাগজ বিলি করার কাজও করে।

চারদিকে গা ছমছম করা পরিবেশ বিরাজ করছে। এই বুঝি গোলাগুলি শুরু হয়ে যায়। রিমন মিলিটারি ক্যাম্পেও খবরের কাগজ বিলি করে। শুধু তাই নয়, তারা তাকে একটি দায়িত্বও দিয়েছে। হলের যেসব ছাত্ররা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছে আর যারা তাদের সাহায্য করছে, তাদের সম্পর্কে তথ্য দেওয়া। পাক সেনারা মাঝে মাঝেই হলে আসত। কখনও কখনও দু 'চারজনকে ধরেও নিয়ে যেত। কিন্তু যাদের ধরে নিয়ে যেত তাদের সম্পর্কে কোনো তথ্য রিমন দেয় নি! তাহলে কি ভেতরেও বিশ্বাসঘাতক আছে! কথাগুলো ভাবছে সে। এমন সময় মাসুদ এসে তার পিঠে হাত রেখে বলল, 'কিরে কি ভাবছিস? '
'ভাবছি হলের ভেতরেও মিলিটারিদের চর আছে। '
'হুমম, আমারও তাই ধারণা। আর কোনো খবর পেলি? '
'না। '
'যাহোক, তুই আমাদের আগেভাগে সাবধান না করে দিলে আমরাও যে ধরা পড়ে যেতাম সেদিন। '
'এটা আমার দায়িত্ব, মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের সহায়তা করা। '
'তা বটে, দেশের জন্য তোর এত দরদ! '

আরও কয়েকদিন পর মাসুদ তার কক্ষে বসে রেডিওতে খবর শুনছে। নিকটবর্তী এলাকার পাক সেনাদের ক্যাম্পে আত্নঘাতী বোমা হামলা হয়েছে। নিহত হয়েছে দশ জন এবং আরও বিশ জন গুরুতর আহত হয়েছে।

রিমন হল গেটে দাঁড়িয়ে আছে। ছয়জন পাক সেনা হঠাৎ তার সামনে উপস্থিত হল। সে কিছুটা চমকে উঠল। তবে ভান করল যেন স্বাভাবিক আছে। টিম কমান্ডার তাকে চেনে। বলল, 'রিমন মাসুদের রুমটা একটু দেখিয়ে দিবি, চল। '
বুকটা ধরফর করে উঠল তার। শিরার মধ্য দিয়ে যেন একটা শিহরণ বয়ে গেল। পানি খাওয়ার বা টয়লেটে যাবার অজুহাত দেখালেও কিছুতেই তাকে যেতে দিলো না। অগত্যা বাধ্য হয়ে ওদের সাথেই আসতে হচ্ছে।রিমন বলল, ' মাসুদ ভাই 109 নম্বর রুমে থাকে। '
'আগে 209 নম্বর রুমে যাব, চল। '
রিমন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ল। কারণ তার মাসুদ ভাই 209 নম্বর রুমেই থাকে। সে ভেবে পাচ্ছে না কি করবে এখন। কিভাবে সে তার মাসুদ ভাইকে বাঁচাবে?মনে মনে চিন্তা করল তার মাসুদ ভাইয়ের রুমটা এককোণায়। বারান্দার রেলিংয়ের সাথে একটি লম্বা গাছ ছোঁয়া ছোঁয়া ভাবে বেড়ে উঠেছে। পালানোর সুযোগ আছে!

সহসা রিমন দৌঁড় দিল এবং চিৎকার করে বলতে লাগল, 'মাসুদ ভাই পালান, মিলিটারী আসসসস......। '
বাক্যটি শেষ হবার আগেই বুলেটের কয়েকটা শব্দ হল। বুলেটের ধাক্কায় মাটিতে আঁছড়ে পড়ল রিমন। শার্টের পেছনে কয়েকটি ফুঁটো। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে রক্তাক্ত হয়ে গেল তার সাদা জামাটি।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×