বৈশাখ মাসের 1 তারিখে জন্ম আমার। তাই বাবা - মা শখ করে নাম রাখে বৈশাখী। জন্মদিনও পালন করা হয় 1 লা বৈশাখ। ইংরেজি তারিখের ধার ধারে না বাবা -মা এক্ষেত্রে। তাই বৈশাখ মাসের এক তারিখ আমার কাছে খুবই স্মরণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ।কিছু স্মরণীয় ঘটনারও অবতারণা হয়েছে এই দিনে।
আর দশ জনের মতো ভালোলাগা বা ভালবাসার মতো কিছু অনুভূতিরও সৃষ্টি হয়েছিল অবচেতন মনে। বয়স তখন খুব বেশি না, সবেমাত্র ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। কলেজের নতুন শিক্ষার্থী আমরা। যা দেখি সবকিছুই নতুন লাগছে। সেইসঙ্গে কিছু নতুন অনুভূতিও সঞ্চিত হচ্ছে। কিছুদিন পর থেকে ক্লাসের একটা ছেলের প্রতি টান অনুভব করতে শুরু করলাম। যতই দিন পার হয় ততই তাকে ভালো লাগে। কিন্তু তার ওপর ভীষণ রাগ হয়। কারণ সে আমার দিকে ফিরেও তাকায় না! অবশ্য সে হয়তো জানেই না আমার মনের কথা। আমিও বলার সুযোগ পায়নি। কত ছেলে পেছনে ঘুরঘুর করেছে, কাউকে পাত্তা দিইনি। আর আমি কিনা ঐ নির্বোধ ছেলেটির প্রতি দুর্বল হলাম! ওকে অবশ্য কোনো মেয়ের সাথে কখনও কথা বলতে দেখিনি। বুঝলাম ও একটু চাপা স্বভাবের মানে অল্পভাষী। বন্ধুদের সাথেও খুব একটা হৈ -হুল্লোড় করতে দেখা যায় না। ওর সাথে কথা বলার সুযোগ খুঁজছিলাম কিন্তু তা আর মিলছে না। নানান ফন্দি আঁটছিলাম কিভাবে কথা বলব। বাংলা মুভির নায়ক -নায়িকাদের মতো ধাক্কা খাওয়ার ঘটনা ঘটাবো নাকি ভাবলাম। পরমুহুর্তেই সে চিন্তা বাদ দিলাম। কি করা যায় তাহলে?
পরদিন ক্লাসে বন্ধু -বান্ধবীদের সহযোগিতায় পরিকল্পনামাফিক তার পাশের সীটে বসলাম। ক্লাস শুরু হলে বললাম, 'আপনার কাছে কোনো কলম হবে? '
'জ্বী হবে। '
'দিনতো একটু। '
কলম নিয়ে লেখা শুরু করলাম। বুঝলাম তার কাছে একটিই মাত্র কলম আছে। তবুও না বোঝার ভান করলাম! এমনকি কলমটা ক্লাস শেষে দিতেও ভুলে যাবার ভান করলাম! অবশ্য আমার ব্যাগে একাধিক কলম ছিল।
পরদিন তাকে কলমটা ফিরিয়ে দিয়ে ভুলে যাবার জন্য দুঃখ প্রকাশ করলাম। বুঝলাম সে কিছু মনে করেনি।
এভাবে কিছুদিন পার হবার পর নানান ফন্দি এঁটে তার সাথে যোগাযোগ বাড়ালাম। দেখলাম তার মধ্যেও কিছু পরিবর্তন আসছে। আরও কিছু দিন পর আমার ফাঁদে তাকে পা দিতেই হল। সেই থেকে শুরু।
প্রায় 5 -6 বছর পেরিয়ে গেছে। নানান হাসি - কান্নার ঘটনার মধ্য দিয়ে এ পর্যায়ে পৌঁছেছি। সেই সময়ের মতো আবেগ এখন আর নেই। সবাই এখন যুক্তি দিয়েও বিবেচনা করতে শিখেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইনাল ইয়ারে পড়ছি। বস্তুত তার কারণেই আমার আজ এ পর্যায়ে আসা সম্ভব হয়েছে। পড়াশোনায় উন্নতি হয়েছে। সেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে। সে একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। পারিবারিক অবস্থানের দিক দিয়ে আমাদের চেয়ে বেশ নিচে। বাবা বিয়ের জন্য পাত্র দেখা শুরু করেছে ইতিমধ্যে। আমাদের সম্পর্কের কথা জানতে পারলে কিছুতেই মেনে নিতে চাইবেন না। সেটা আমি ভালো করেই জানি। কি করি এখন ভেবে পাচ্ছি না। কিছু একটা উপায় বের করতেই হবে। কিন্তু কিভাবে? আসছে পহেলা বৈশাখেই বাবার কানে কথাটি তুলব।