পরীক্ষা নামক বিভীষিকাটা কেন জানি আগের মতো মনে দাগ কাটতে পারে না। আগের মতো শিহরণও সৃষ্টি করতে পারে না।তবুও কেউ যদি জিজ্ঞেস করে, কাল ফ্রী আছ নাকি? উত্তরে প্রায়ই বলতে হয়, কাল /পরশু পরিক্ষা আছে। একই লোক যদি এরকমভাবে কিছুদিন পরপর জিজ্ঞেস করে এমন উত্তর পায় তাহলে অনেকেই বলে থাকে তোমাদের এত পরিক্ষা কেন! হয়তো কেউ কেউ বিশ্বাস করতেও দ্বিধাবোধ করেন। কেউবা বিরক্তও হন। ফলে নিজে বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হই। আমাদের এই সেমিষ্টারে ( 9×2+7+9+7) 41 টি পরিক্ষা। কিছু পরিক্ষা পার্টলি হওয়ার কারণে পরিক্ষার সংখ্যা 41টিরও বেশি হয়। এছাড়া অ্যাসাইন্টমেন্ট বা এ ধরনের ব্যাপার -স্যাপার তো আছেই। আর 5টা পর্যন্ত ক্লাসের কথা নাইবা বললাম। এটা আমাদের শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়।
অন্যান্য কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যেমন -বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সহ বেশ কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু বা বড় ভাইদের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম তাদের এত পরিক্ষার চাপ নেই।জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তো ইয়ার সিস্টেম। তাই পরিক্ষার চাপ আরও কম। অথচ এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো র্ ্যাঙ্কিংয়ে বরাবর প্রথম দিকেই আছে। কিন্তু কেন? কীভাবে? বিশ্ববিদ্যালয়ের শীট, বই পড়ে সবাই শিক্ষক হবে না। কেউ উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, শিল্পী, বিজ্ঞানী, বড় চাকুরে বা আরো অনেক কিছুই হবে। এজন্য পড়াশোনার ফাকে ফাকে কিছু সময় ব্যয় করার দরকার হয় তার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য। কিন্তু আমাদের সেই পরিমাণ পর্যাপ্ত সময় কই? ক্লাস, পরিক্ষার যাঁতাকলে পিষ্ট হতে হচ্ছে সর্বদাই। অনেকে যুক্তি দেখান বেশি বেশি পরিক্ষা না নিলে শিক্ষার্থীরা ঘোরাঘুরি করে সময় নষ্ট করে। কিন্তু অনেকে আবার সেই সময়টায় আইইএলটিএস, জিআরই, বিসিএস, চাকুরী পরিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেয়। অসচ্ছল পরিবারের অনেকেই বা যারা নিজের খরচ নিজেই জুগিয়ে নিতে চান তাঁরা সেই সময়টায় টিউশনি, পার্টটাইম জব বা অন্য কিছু করেন। কেউবা সেই সময়টায় তার মনে লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য কাজ করার সুযোগ পায়। একটা বিশ্ববিদ্যালয় তখনই সেরার আসনে অধিষ্ঠিত হয় যখন তার শিক্ষার্থীরা দেশে বা বিদেশে বিভিন্ন সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ সেরা কাজগুলি করতে পারে বা পদগুলিতে অধিষ্ঠিত থাকে। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য সব রাস্তাই খোলা রাখা উচিত। দরকার শুধু মনটাকে সঠিকপথে চালানোর সঠিক নির্দেশনা। গবেষণায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এখন উল্লেখযোগ্য খুব বেশি কিছু নেই যা নিয়ে আমরা বিশ্বে মাথা উচুঁ করে গর্ব করতে পারি! থাকবে কিভাবে? বাজেট বাড়ে কিন্তু গবেষণার বাজেট বাড়ে না। ক্ষেত্রবিশেষে বাড়লেও নামমাত্র, প্রয়োজনের তুলনায় নগন্য। এক শ্রেণীর লোকের কথা বিবেচনা করে আইন তৈরি করলে তা কখনও শতভাগ সঠিক হয় না, প্রয়োজন সকলের দিকটা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া।
আবেগের বশবর্তী হয়ে কথাগুলো বলে ফেললাম। কোনো ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করেও লেখা হয় নি এটা। নিজের উপলব্ধি থেকে কয়েকটি কথা বললাম। কাউকে মনে কষ্ট না নেওয়ার জন্য অনুরোধ করলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৫