somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুলিশ -অপরাধীর লুকোচুরি

০৩ রা জুন, ২০১৮ সকাল ১১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


চেয়ারে আয়েশ করে শরীর এলিয়ে দিয়ে বসে আছেন পুলিশ অফিসার। চোখ দুটি বন্ধ। গভীর মনোযোগের সহিত কিছু ভাবার চেষ্টা করছেন। মানুষ যে এত অপরাধ কর্মের সাথে জড়িত হতে পারে তা এই পুলিশের চাকুরীতে না আসলে বুঝতে পারতেন না। পৃথিবীতে কত বিচিত্র ধরনের প্রাণী আছে। তাদের মধ্যে মানুষই সবচেয়ে বেশি বিচিত্র বলে মনে হচ্ছে তার কাছে। মনে পড়ে গেল ছোটবেলায় চোর -পুলিশ খেলতেন। তখন নিজে পুলিশ সেজে চোর বা ডাকাত সাজানো বন্ধুদের কত ধোলাই না দিতেন! এখন বাস্তব জগতে এসে দেখলেন ব্যাপারগুলো এত সহজ নয়। সুযোগ পেলে এই চোর বা ডাকাতগুলোও তাদের মতো পুলিশদের একহাত দেখে নিতে পারেন। পত্রিকার পাতায় চোখ বুলালে প্রায়ই এরকম গাঁ শিউরে উঠার মতো খবর চোখে পড়ে।
বিক্ষিপ্ত চিন্তাভাবনায় ইতি টানলেন তিনি। ঘন্টাখানেক আগে একজন আসামীকে ধরে নিয়ে এসেছেন। বিশেষ মিশন চালিয়ে তবেই সফল হয়েছেন। ইচ্ছে করছে বাথটাবে ঠান্ডা পানিতে কিছুক্ষণ ডুবে থাকতে। কিন্তু তার উপায় নেই। আরও ইচ্ছে করছে আসামীটিকে ইচ্ছেমতো কিছুক্ষণ ধোলাই দিতে। দিতেও চেয়েছিলেন তবে অপরাধীর পরিচয় জানার পর তার নিজেরই গলা শুকিয়ে এল। উল্টো আসামী তাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বলে, ' অফিসার আমার শরীরে যদি একটা টোকা পড়ে তাহলে বান্দরবানের জঙ্গলে যাওয়ার হাত থেকে কেউ আপনাকে রক্ষা করতে পারবে না। '

কথাটা শুনে তখনই ওর মুখে একটা ঘুসি বসিয়ে দিতে ইচ্ছে করেছিল তার কিন্তু কি কারণে যেন দিলেন না।
ক্রিং ক্রিং ক্রিং..... .........।ফোন এসেছে। অফিসার চোখ মেলে তাকালেন। বিরক্তি নিয়ে ফোনটা রিসিভ করলেন। 'হ্যালো ' বলতে না বলতেই অপর পাশ থেকে ভরাট কন্ঠে কেউ বললেন, ' ওকে কোর্টে চালান করার দরকার নেই। ছেড়ে দিন। পরিস্থিতি ঠান্ডা রাখার জন্য যা করা দরকার আমি তার ব্যবস্থা করব। মুখ বন্ধ রাখার জন্য যত টাকার দরকার হয় তা আমার সহকারী পাঠিয়ে দেবে।এতে আপনারও লাভ হবে। যদি এর ব্যতিক্রম ঘটে তাহলে আপনার পোস্টিং কোথায় হবে বুঝতেই পারছেন। '
লাইন কেটে গেল। স্থির হয়ে কিছুক্ষণ বসে রইলেন অফিসার। রাগে -ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন। শক্ত করে হাত মুঠ করলেন। টেবিলের ওপর একটা ঘুসি বসিয়ে দেবেন মনস্থির করলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দিলেন না! নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করলেন।
অপরাধীর অপরাধ কি খুব গুরুতর কিছু? নিজের মনে নিজেই প্রশ্ন ছুঁড়লেন। এ ধরনের অপরাধ তো হরহামেশাই হচ্ছে।ধরা পড়ে কেউ শাস্তি পাচ্ছে আবার কেউ কেউ আইনের ফাকঁ-ফোকর ভেদ করে সটকে পড়ছে। একবার ভাবলেন নিজের পরিবারের কথা। দিনরাত মানুষের নিরাপত্তার জন্য কাজ করে যেতে হয়। কিন্তু নিজের পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে কতটুকু ভাবেন তিনি? আসামিকে ছেড়ে দেবেন নাকি আইনের আওতায় আনবেন? দোটানায় পড়ে গেলেন। যদি খাগড়াছড়ি, বান্দরবান বা রাঙামাটির ওসব জঙ্গলে পোস্টিং হয় তাহলে কি অবস্থা হবে তার ও তার পরিবারের? ওসব দুর্গম পাহাড়ী এলাকা সম্পর্কে তার কিছুটা ধারণা আছে। ভিতরের এমনও জনপদ আছে যেখানে এখনও বিদ্যুৎ নেই, রাস্তাঘাটও নেই বললেই চলে,এমনকি মোবাইলের নেটওয়ার্কও পাওয়া যায় না।বিভিন্ন উপজাতি বা আদিবাসীদের সাথে চলাফেরা করতে হয়। এরা বাঙালিদের খুব একটা ভালো চোখে দেখে না। এমনকি খুব একটা বিশ্বাসও করে না। আধুনিক জগতের নানান সুযোগ -সুবিধা হতে প্রায় সম্পূর্ণ বঞ্চিত এসব জনপদের লোকজনেরা। এমন এলাকায় জীবন ধারণ করা তার পরিবারের পক্ষে অসম্ভব।

আসামিকে ছেড়ে দিতে হল শেষ পর্যন্ত। যাবার সময় আসামি শীতল চোখে একবার তাকায় অফিসারের দিকে। শব্দহীন ঠান্ডা হাসি দিয়ে করমর্দনের জন্য হাত বাড়িয়ে দেয় অফিসারের দিকে। অফিসার বিরক্ত হলেন। তবে বাইরে অনুভূতি প্রকাশ করলেন না। করমর্দন করলেন। মনে মনে বললেন, 'বাছাধন দ্রুত বিদায় হউ।তোমার চেহারাখানা আমার আর দেখতে ইচ্ছে করছে না। তোমার পিন্ডি আমি চটকাবোই।সুযোগের অপেক্ষায় রইলাম। '
এই সুযোগ তিনি কোনোদিন পাবেন কিনা তার জানা নেই। এভাবে সমাজের কত বড় বড় রাঘব বোয়ালরা হাতের আঙুলের ফাকঁ দিয়ে বেরিয়ে পড়ছে। তাদের ভিত এতই মজবুত হয় যে খুব সহজে এদের নাগাল পাওয়া যায় না। সীমা লঙ্ঘনের চূড়ান্ত সীমায় এসে মাঝে মাঝে এদের দু 'চার জন অবশ্য ফেসেও যান।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০১৮ সকাল ১১:০১
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×